ফরিদপুরে কৃষিজমিতে বাড়ছে ইট ভাটা, হুমকিতে পরিবেশ
ফরিদপুর শহর ঘেঁষে বিভিন্ন গ্রাম এলাকার কৃষি জমিতে একের পর এক গড়ে উঠছে ইটের ভাটা। এতে পরিবেশ ও ফসল উৎপাদন মারাত্মক হুমকির সম্মুখীন হচ্ছে।
পদ্মা নদী থেকে সারাবছর ধরে অবৈধভাবে উত্তোলন করা বালি ও কৃষি জমির ‘টপ সয়েলের’ সহজলভ্যতার কারণে এরইমধ্যে শহর সংলগ্ন ডিগ্রিরচর ইউনিয়নের সিএন্ডবি ঘাট এলাকায় গড়ে উঠেছে এক ডজনেরও বেশি ইটের ভাটা। এর মধ্যে একেবারেই গ্রামীণ এলাকা আইজদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গিতে মাত্র ২০০ গজের মধ্যে গড়ে তোলা হয়েছে তিনটি ইট ভাটা।
এভাবে কৃষি জমির ওপর একের পর এক ইটের ভাটা গড়ে ওঠায়, ফসলী জমি কমে যাচ্ছে। সেইসাথে নিরিবিলি গ্রামীণ পরিবেশগুলো বাইরে থেকে আসা শ্রমিকদের কারণে ঘনবসতিপূর্ণ ঘিঞ্জি এলাকায় পরিণত হচ্ছে। ইট ভাটার চিমনির ধোঁয়ায় শ্বাসকষ্টসহ নানা ধরনের রোগ বালাই ছড়াচ্ছে। ধোঁয়া ও ধুলা দূষণে বিষাক্ত হচ্ছে পরিবেশ।
ফরিদপুর জেলা প্রশাসন অফিস সূত্র জানায়, জেলার নয় উপজেলায় বৈধ ইট ভাটা রয়েছে ৯৭টি। এর মধ্যে অটো বা ঝিক-ঝাক ভাটার সংখ্যা ১০টি।
সরেজমিনে দেখা গেছে, আইজদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গিতে কৃষি জমি ধ্বংস করে পাশাপাশি তিনটি ইটের ভাটা গড়ে তোলা হয়েছে। এর মধ্যে চাঁন মিয়া ও লিয়াকত মাতুব্বরের দুটো পুরনো ভাটার পাশাপাশি আরশাদ ব্যাপারী মালিকানাধীন এবিবি ব্রিক নামে নতুন আরও একটি ইটের ভাটা স্থাপন করা হয়েছে।
আইজদ্দিন মাতুব্বরের ডাঙ্গির বাসিন্দা নিরু ফকিরের অভিযোগ, অনৈতিক পন্থা অবলম্বন করে এসব ভাটা স্থাপনের জন্য পরিবেশের ছাড়পত্র দেয়া হয়েছে। ইট ভাটার ধুলাবালি ও বিষাক্ত ধোঁয়ায় এলাকার পরিবেশ বসবাসের অনুপযুক্ত হয়ে পড়েছে। কৃষি জমিতে এভাবে ইট ভাটা করার ব্যাপারে প্রধানমন্ত্রীর নিষেধাজ্ঞা রয়েছে।
আরেক বাসিন্দা সিদ্দিক মিয়া বলেন, ভোর থেকে ভাটার কাজ শুরু হয়, এলাকায় চলাচল করা যায় না, খুব কষ্ট হয়, বিশেষ করে স্কুল-কলেজ যাতায়াতকারী শিক্ষার্থীদের বেশি বিপাকে পড়ে হয়।
শেখ শাহেদ আলী নামে ডিগ্রিরচর এলাকার বাসিন্দা বলেন, এই এলাকার তিনটি ইট ভাটায় প্রচুর ট্রাক আসা-যাওয়া করে। এইসব ট্রাকের ধুলাবালিতে পরিবেশ দুষণ হচ্ছে। সড়কগুলো নষ্ট হচ্ছে। ভাটার কালো ধোঁয়ায় গাছপালা বিবর্ণ হয়ে যাচ্ছে। পরিবেশ অধিদপ্তর সরেজমিনে যাচাই করলে কোনো ক্রমেই কৃষি জমিতে এসব ভাটা করার অনুমতি দিতে পারতো না। অতি দ্রুত এসব ইটভাটা অপসারণের দাবি জানিয়েছে এলাকাবাসী।
এ ব্যাপারে এবিবি ভাটার মালিক আরশাদ ব্যাপারী বলেন, আমাদের দুই পাশে দুটি ভাটা থাকায় আমার জমিতে ফসল হচ্ছিল না। এলাকার লোকেরা সেখানে গরু ছাগল চড়াতো। এ কারণে আমিও নিরুপায় হয়ে ইটভাটা দিয়েছি।
এদিকে পরিবেশ অধিদপ্তরের ফরিদপুর জেলা কার্যালয়ের উপ-পরিচালক ড. মো. লুৎফর রহমান বলেন, কৃষি জমি ও জনবসতিপূর্ণ জমিতে ইট ভাটার জন্য সাধারণত ছাড়পত্র দেয়ার নিয়ম নেই। তবে অনেক ক্ষেত্রে নিজ নিজ উপজেলা কৃষি কর্মকর্তার অনুমতি সাপেক্ষে কিছু ছাড়পত্র দেয়া হয়ে থাকে। তবে বাস্তবে পরিবেশের জন্য ক্ষতিকর কোনো ইটভাটাকে অনুমতি দেয়ার অভিযোগ পেলে তদন্ত সাপেক্ষে ব্যবস্থা নেয়া হবে।
এ প্রসঙ্গে জেলা ইট ভাটা মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক মো. সিদ্দিকুর রহমান বলেন, কৃষি জমি নষ্ট করে ভাটা তৈরি হোক এটা আমরাও চাই না। পরিবেশ অধিদপ্তর কিভাবে তাদের অনুমতি দেয়?
তার অভিযোগ, সরকারি উচ্চ পর্যায়ে সিদ্ধান্ত রয়েছে সনাতন পদ্ধতি বাদ দিয়ে অটো বা ঝিকঝাক ভাটার তৈরির বিষয়ে। কিন্তু এ বিষয়ে স্থানীয় প্রশাসনের কোনো হস্তক্ষেপ নেই।