ড্রাগন নয়, নাম হবে ‘কমলাম’ মানে ‘পদ্ম’: চীন বিদ্বেষে ফলের নামই বদলে দিল মোদির গুজরাট
ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্রে মোদির নিজ রাজ্য গুজরাট চীন বিদ্বেষ থেকে নিয়েছে আজব এক সিদ্ধান্ত। ড্রাগন ফলের নাম শুনলেই চীনা মনে হওয়ায়, স্থানীয় কর্তৃপক্ষ এর নাম পাল্টে পদ্ম রাখার সিদ্ধান্ত নেয়। সিদ্ধান্তটি নিয়ে আজ বুধবার (২০ জানুয়ারি) ব্যঙ্গ-কটাক্ষ করেছে দেশটির প্রধান বিরোধী দল- কংগ্রেস।
হিমালয় পর্বতমালার সুউচ্চ অঞ্চলের সীমান্তে পরস্পরের প্রতি চোখ রাঙিয়ে সতর্ক অবস্থানে আছে ভারত ও চীনের বিপুল সংখ্যক সেনা। গত বছর চীনা সেনাদের হাতে ২০ ভারতীয় জওয়ান নিহত হওয়ার পর থেকেই চীন থেকে আমদানি কমাতে সচেষ্ট হয় ভারত। একইসঙ্গে, দেশটির সরকার চীনে তৈরি বেশকিছু মোবাইল অ্যাপ বন্ধ করে দেয়।
ভারতে দিনেদিনে জনপ্রিয় হয়ে উঠছে চীনের প্রতি বিরূপ মনোভাব। তারই প্রতিফলন যেন গুজরাট সরকারের সাম্প্রতিক সিদ্ধান্ত।
রাজ্যের মুখ্যমন্ত্রী বিজয় রুপানি গত মঙ্গলবার স্থানীয় গণমাধ্যমকে বলেন, "গুজরাট সরকার সিদ্ধান্ত নিয়ে যে, ড্রাগন নামটি যথাযথ নয়। কারণ এটি শুনতেই চীন সম্পর্কিত কিছু মনে হয়। কিন্তু, ফলটি দেখতে পদ্মের মতো। তাই সংস্কৃত অনুসারে আমরা এর নাম বদলে 'কমলাম' রাখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি। রাজনৈতিক কোনো বিবেচনায় এ সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়নি।"
এদিকে পদ্ম আবার নরেন্দ্র মোদির নিজ দল ভারতীয় জনতা পার্টির প্রতীক। এদলেরই, রাজ্য প্রধান রুপানি। তিনি জানান, এখন থেকে গুজরাটে (ড্রাগন) ফলটি কমলাম নামেই ডাকা হবে।
ইতোপূর্বে, গুজরাটের মরুপ্রবণ কচ্চ এলাকার চাষিরা ড্রাগন ফল চাষ করায় কয়েক মাস আগে এক রেডিও অনুষ্ঠানে তাদের প্রশংসা করেছিলেন নরেন্দ্র মোদি। তারপরই, সাম্প্রতিক ঘটনায় ভারতে আরও একবার সংবাদের শিরোনাম হলো ড্রাগন ফল।
এব্যাপারে কচ্চ এলাকার বিজেপি দলীয় সাংসদ বিনোদ চাভদা বার্তা সংস্থা রয়টার্সকে বলেন, "মোদির ওই অনুষ্ঠান সম্প্রচারিত হওয়ার পর চাষিরা আমার কাছে এসে, ফলটির নাম পাল্টে কমলাম রাখার অনুরোধ করে। প্রস্তাবটি রাজ্য সরকার গ্রহণ করায় আমি খুবই আনন্দিত।"
শুধুমাত্র কচ্চ অঞ্চলের ২০০ চাষি এখন দেড় হাজার হেক্টর জমিতে ড্রাগন ফল আবাদ করছেন, বলে জানান স্থানীয় কৃষক হরেশ থাক্কার।
তিনি বলেন, "ভারতীয় এই নামকরণ আমাদের জন্যে আরও আনন্দ বয়ে আনবে। ক্রেতারা যদি একে ভারতীয় ফল হিসেবে গ্রহণ করা শুরু করেন তাহলে আমরা আর্থিকভাবেও উপকৃত হব।" হরেশ গত পাঁচ বছর ধরে ড্রাগন ফল চাষ করছেন।
গুজরাটের সঙ্গেসঙ্গে পার্শ্ববর্তী রাজ্য মহারাষ্ট্র এবং উত্তরপূর্ব ভারতেও ফলটি চাষ করা হয়। কিন্তু, এসব রাজ্যের স্থানীয় প্রশাসন নাম বদলের কোনো উদ্যোগ এপর্যন্ত নেয়নি।
গুজরাটের এই নাম বদলের উদ্যোগকে প্রধান বিরোধী দল কংগ্রেস একটি 'রম্য-নাটক' বলে ব্যঙ্গ করেছে।
গুজরাট কংগ্রেসের মুখপাত্র মানিশ দোশি বলেন, "সরকারের তুলে ধরার মতো কোনো উল্লেখযোগ্য সফলতা নেই, তাই এ পদক্ষেপের মাধ্যমে তারা প্রকৃত সমস্যাগুলো থেকে জনতার দৃষ্টি অন্যদিকে সরিয়ে নেওয়ার উদ্যোগ নিয়েছে।"
- সূত্র: রয়টার্স