মিমে'র ক্ষমতা: বার্নির স্যান্ডার্সের ছবি যেভাবে বিশ্ববাসীকে একাত্ম করল
বিগত চারদিন সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমে সবার দৃষ্টি নিবদ্ধ ছিল ছিল একজন ব্যক্তির ওপরই, বাদ যায়নি তার হাতমোজাও।
গত বুধবার ৪৬ তম মার্কিন প্রেসিডেন্ট হিসেবে শপথ নিয়েছেন ডেমোক্র্যাট পার্টির জো বাইডেন। প্রথম কৃষ্ণাঙ্গ ও এশিয়ান-আমেরিকান হিসেবে ভাইস প্রেসিডেন্টের শপথ নিয়েছেন কমলা হ্যারিস।
তবে এ ইতিহাস সৃষ্টিকারী মুহূর্তেও সবার দৃষ্টি কেড়ে নিয়ে একটি দৃশ্য। অতি সাধারণ বার্টনের পার্কা জ্যাকেট, হাতে বোনা উলের হাতমোজা এবং নীল রঙের সার্জিক্যাল মাস্ক পরিহিত সিনেটর বার্নি স্যান্ডার্সের ছবি। তবে একইসাথে তার এ ছবি ইন্টারনেট দুনিয়ার 'মিম' জগতেও ঠাঁই করে নেয়।
ছবিটির ধারনের কয়েক মিনিটের মধ্যেই অনলাইনে প্রকাশিত হয়, এবং মুহূর্তের মধ্যেই ইন্টারনেটের আনাচে-কানাচে ছড়িয়ে পড়ে। ফটোশপের মাধ্যমে জনপ্রিয় নানা ছবি ও দৃশ্যতে তার ছবি বসিয়ে ছড়িয়ে দেয় মানুষ। আপনিও হয়তো বিগত দিনগুলোতে নিজের টাইমলাইনে একবার হলেও বার্নি স্যান্ডার্সের ছবি বসানো মিম দেখেছেন।
সাম্প্রতিক সব আলোচনা ছাপিয়ে সবখানেই শুধু বার্নির ছবি। ইনস্টাগ্রাম স্টোরি, ফেসবুক স্টোরি, স্টিকার, রেডিট- কোথায় নেই তিনি! মিম জগতের নতুন এক অধ্যায়ের সূচনা যেন এ ঘটনা। কয়দিন পরই হয়তো বার্নির হাতমোজার নতুন ফিল্টার, নতুন মার্চেন্ডাইজেরও দেখা মিলবে।
ডেমোক্র্যাট, রিপাবলিকান, সেলিব্রিটি, সাধারণ মানুষ- বিশ্বজুড়ে সকল বয়সী মানুষ শেয়ার করেছেন এ ছবি ও ছবিটি দিয়ে বানানো মিমগুলো। সবার কল্পনাকেও ছাড়িয়ে গেছে ব্যাপারটি। যদিও বার্নির নিজস্ব চারিত্রিক বৈশিষ্ট্য অনেকটাই মলিন ছিল এরমধ্যে।
প্রশ্ন হলো, একটি সাধারণ মিম কীভাবে স্থান, কাল, পাত্র নির্বিশেষে সব মানুষকে একসাথে নিয়ে এলো? শীতে জুবুথুবু হয়ে নিজমনে আশপাশের পরিস্থিতি পর্যবেক্ষণ করতে থাকা একজন বৃদ্ধের সাধারণ একটি ছবি কীভাবে পুরো বিশ্বের নজর কেড়ে নিল?
এর উত্তর খুবই সহজ। কারণ ছবিটির সাথে মানুষ একাত্মতা বোধ করেছেন। এটি এমন এক মুহুর্ত ছিল যা মুঠোফোনের পর্দায় দেখেই মানুষ নিজেদের সাথে মেলাতে পেরেছেন।
মুদিদোকানে কিছু কেনার জন্য অপেক্ষা করছেন, পার্কের বেঞ্চে চুপচাপ বসে আছেন বা নির্জনে বসে নিজমনে কিছু ভাবছেন- ছবিটি দেখে এমনটাই মনে হচ্ছে। দেখে বোঝার উপায় নেই যে তিনি যুক্তরাষ্ট্রের প্রেসিডেন্টের অভিষেক দেখছেন। ইন্টারনেট দুনিয়ায় বিশ্ববাসীর হাস্যরস বোধ বোধহয় এক্ষেত্রে বার্নির ভঙ্গিমার চেয়েও বেশি ভূমিকা রেখেছে।
তবে বরাবরের মতোই ইন্টারনেটের অন্যান্য ভাইরাল মিমের মতোই নিত্য নতুন খবরের মাঝে চাপা পড়বে বার্নির এ ছবিও। কিন্তু, এক্ষেত্রেই অনন্য বার্নি স্যান্ডার্স। তার ছবি দিয়ে বানানো মিম আলোড়ন তোলার পর এ ছবিকে দাতব্য কাজে ব্যবহারের পরিকল্পনা করেন তিনি।
একটি সোয়েট শার্টে এই ছবিটি বসিয়ে তা স্যান্ডার্সের ওয়েবসাইট থেকে ৪৫ ডলারের বিনিময়ে বিক্রি করা হচ্ছে। প্রথম দফায় সবগুলো সোয়েট শার্ট বিক্রির পরপরই শুক্রবারে এগুলো আবার রিস্টক করা হয়। শার্টগুলো বিক্রির লাভের শতভাগই 'মিলস অন হুইলস ভারমন্ট' সংস্থার দাতব্য কাজে ব্যয় করা হবে।
সে যাই হোক, শীতের দিনে উলের হাতমোজা পরিহিত মার্কিন সিনেটরের ভাবগাম্ভীর্যপূর্ণ ছবির সাথে একাত্মতাবোধ, বা অন্য যে কারণেই হোক; মিম সবসময়ই মানুষকে একত্র করে, নির্মল হাসির যোগান দেয়।