টিকা কর্মসূচি কত দ্রুত কোভিড সঙ্কটের অবসান করতে পারবে?
পৃথিবীজুড়ে হাসপাতালগুলো আবারো কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীর ভিড় সামলাতে ব্যতিব্যস্ত। লন্ডন থেকে শুরু করে কেপটাউন ও লস অ্যাঞ্জেলসের মতো মহানগরীতে হাসপাতালের বাইরে রোগীবাহী অ্যাম্বুলেন্স ঘন্টার পর ঘণ্টা রোগীর ভর্তি হওয়ার অপেক্ষায় দাঁড়িয়ে থাকছে।
আরও আছে মৃতদের শববাহী হিমায়িত লরির সারি। এ পরিস্থিতি থেকে মুক্তি পাওয়ার একমাত্র উপায় টিকা। কিন্তু, প্রশ্ন হলো; টিকাদান সম্পন্ন হলে অবস্থা কত দ্রুত বদলাবে?
টিকা মৃত্যুহার এবং হাসপাতালে রোগী ভর্তির সংখ্যা দুইভাবে কমায়: প্রথমত তারা টিকাপ্রাপ্তকে সরাসরি সুরক্ষা দেয়, ফলে তারা অসুস্থ হয় না। দ্বিতীয়ত; যারা টিকা পাননি তাদের মধ্যেও টিকাগ্রহণকারীদের থেকে সংক্রমণ ছড়ানোর ঝুঁকি অনেকটাই কমে যায়। যেসব স্থানে টিকাদান চলছে সম্মিলিত এই প্রভাব সেখানেই হিসাব করা সম্ভব। টিকাদান জোর গতিতে চলমান থাকলেও, এ সংক্রান্ত কিছু তথ্য এই মুহূর্তেই পাওয়া যাচ্ছে।
জীবন বাঁচাতে বেশিরভাগ দেশ বয়োবৃদ্ধ এবং স্বাস্থ্য কর্মীদের আগে টিকা দিচ্ছে। এমনটা করার সঙ্গত কারণ আছে অবশ্যই। যেমন; ইংল্যান্ডে কোভিড-১৯ আক্রান্ত ৭০ বছরের বেশি বয়সীদের মধ্যে মৃত্যুহার ৮৫ শতাংশ। হাসপাতালের জরুরি বিভাগও ভর্তি বয়োবৃদ্ধ রোগীতে। কিন্তু, কয়েক সপ্তাহ ধরে চলমান টিকা কর্মসূচির আওতায় এই জনসংখ্যার বেশিরভাগ টিকার প্রথম ডোজ পাওয়ার পর; তাদের হাসপাতালে ভর্তি এবং মৃত্যুহার দুটোই কমেছে।
তারপরও, অবশ্য মধ্যবয়স্ক রোগীর চাপে হাসপাতালগুলোকে আপ্রাণ লড়তে হচ্ছে। এর প্রধান কারণ; ৫০ থেকে ৬০ বছরের মধ্যবয়স্করাই এখন আইসিইউ'গুলোয় ভর্তি বেশি। তাদের মৃত্যুও বাড়ছে।
বয়োবৃদ্ধদের তুলনায় মধ্যবয়সীদের মৃত্যু বা গুরুতর অসুস্থতার কথা শুনতে বিচিত্র লাগলেও তার সঙ্গত ব্যাখ্যা আছে। যেমন; অসুস্থতা গুরুতর হলে আইসিইউতে অঙ্গপ্রত্যঙ্গকে সহায়তা করতে পারে এমন মেশিনের সাহায্যে রোগীকে বাঁচিয়ে রাখা হয়। কিন্তু, ভেন্টিলেটর এবং অন্যান্য যন্ত্র রোগীর দেহে বাড়তি চাপ সৃষ্টি করে, ফলে দুর্বল দেহ আরও নিস্তেজ হয়ে পড়ে। তাই মধ্যবয়স্কদের মৃত্যুহার বেড়েছে। সেই তুলনায় বয়োবৃদ্ধদের ভগ্ন স্বাস্থ্যের কারণে বেশিরভাগ সময়েই তাদেরকে এসব যন্ত্রের সহায়তা দেন না চিকিৎসকরা। বর্তমানে ইংল্যান্ডের হাসপাতালগুলোর নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্রে ২০-৪৯ বছরের যত রোগী ভর্তি আছেন, তা ৭০ বা তার বেশি বয়সের বয়োবৃদ্ধদের সমান।
এই তথ্য ইঙ্গিত দেয়; যেখানে টিকাদানের গতি কম- সেখানে মধ্যবয়স্কদের মৃত্যুহার আগামী সপ্তাহ বা মাসগুলোতে বাড়তেই থাকবে। ইংল্যান্ডের জনস্বাস্থ্য বিভাগের সাম্প্রতিক এক গবেষণায় জানানো হয়, কোভিড আইসিইউ-গুলো এখন ধারণ ক্ষমতার চূড়ান্ত পর্যায়ে। ইসরায়েলের এক প্রতিবেদনেও এমন তথ্য জানানো হয়। এর আরেক কারণ অবশ্য সেবিকা সঙ্কট। সচরাচর কোভিড আইসিইউ ইউনিটে রোগীপ্রতি অন্তত একজন নার্স থাকেন। কিন্তু, একজন নার্সকেই এখন একাধিক রোগীর দেখভাল করতে হচ্ছে। রোগীভর্তি এসব আইসিইউতে' মৃত্যুর হার বেড়েছে ২০-২৫ শতাংশ।
গণ-পর্যবেক্ষন চিত্র:
গত ১৯ জানুয়ারি নাগাদ মোট জনসংখ্যার ২৬ শতাংশকে টিকার প্রথম ডোজ দিতে সফল হয় ইসরায়েল। মাত্র একমাস আগে শুরু হওয়া টিকা কর্মসূচির এমন বিস্ময়কর গতি অন্য কোনো দেশে লক্ষ্য করা যায়নি। ফলে দেশটি কিছু ইতিবাচক পরিবর্তনও লক্ষ্য করছে।
তেল আবিব ভিত্তিক ক্লেলিট রিসার্চ ইনস্টিটিউডের সাম্প্রতিক এক বিশ্লেষণে, টিকা পেয়েছেন ৬০ বছরের বেশি বয়সী এমন দুই লাখ লোককে- যারা টিকা পাননি এমন সমান সংখ্যক জনসংখ্যার সঙ্গে তুলনা করা হয়। গবেষকরা আলোচিত দুই গ্রুপের মধ্যে সংক্রমণ হারের ব্যবধান স্বাস্থ্য পরীক্ষার ভিত্তিতে বের করেন।
প্রথম ১২দিন আলোচিত দুই জনসংখ্যার মধ্যে তেমন পার্থক্য লক্ষ্য করা যায়নি। কিন্তু, ১৩তম দিন থেকে টিকাপ্রাপ্তদের মধ্যে সংক্রমণ হার কিছুটা কম হয়। এরপর, ১৪তম দিনে এটি এক-তৃতীয়াংশ কমে যায়। গবেষকরা অবশ্য আরও বেশি পার্থক্য আশা করেছিলেন। কিন্তু, আলোচিত টিকাপ্রাপ্তরা নিয়েছিলেন ফাইজারের টিকা, যা দুই ডোজ করে নিতে হয়। দুই ডোজ করে টিকাদান সম্পন্ন হলে আরও উন্নতি আসবে, সে ইঙ্গিত এখনই মিলছে।
- সূত্র: দ্য ইকোনমিস্ট