কোভিড-১৯ চিকিৎসা দিয়ে মহামারির ক্ষতি পুষিয়ে নিচ্ছে হাসপাতালগুলো
করোনা ভাইরাস মহামারির ধাক্কায় প্রথম দিকে প্রায় সব প্রাইভেট হাসপাতাল রোগীর অভাবে লোকসানের পর বর্তমানে করোনার চিকিৎসা দিয়ে ভাল মুনাফা করছে। তবে যেসব হাসপাতালের আইসিইউ এবং অক্সিজেন সরবরাহের পর্যাপ্ত ব্যবস্থা নেই তারা এখনও ভুগছে।
গত বছরের ২৪ মে ৫০ শয্যা বা তার বেশি শয্যার সব সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেয়ার নির্দেশ দেয় স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর নিয়মিত প্রেস বিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে আনোয়ার খান মর্ডান মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, আসগর আলী, স্কয়ার, ইবনে সিনা, ইউনাইটেড, এভার কেয়ার, ইম্পালস, এ এম জেড ও বাংলাদেশ স্পেশালাইজড হাসপাতালের ভর্তি রোগীর তথ্য দেয়।
এর বাইরেও ল্যাব এইড, শমরিতা, বিআরবি, গ্রিন লাইফ, সেন্ট্রাল ও পপুলার হাসপাতালও কোভিড-১৯ আক্রান্তদের চিকিৎসা দেয়।
বাংলাদেশ প্রাইভেট ক্লিনিক অ্যান্ড ডায়াগনস্টিক ওনার'স অ্যাসোসিয়েশনের (বিপিসিডিওএ) সভাপতি ডা. মনিরুজ্জামান ভূইয়া দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, অল্প কিছু হাসপাতাল, যাদের আইসিইউ ও অক্সিজেন সরবরাহের যন্ত্রপাতি পর্যাপ্ত পরিমাণে আছে তারাই কোভিড-১৯ এর চিকিৎসা দিচ্ছে। কোভিড-১৯ আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসা দিয়ে তারাই ভালো ব্যবসাও করছে।
তবে এখানে ব্যবসার চেয়ে রোগীদের চিকিৎসা দেওয়া বেশি গুরুত্বপূর্ণ বলে উল্লেখ করেন তিনি। তবে দেশজুড়ে বেশিরভাগ প্রাইভেট হাসপাতালেই কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসা দেওয়ার অবকাঠামোগত সামর্থ্য নেই। রোগীর অভাবে ব্যবসা চালু রাখতেও হিমশিম খাচ্ছে অনেক হাসপাতাল। এখনো অনেক মানুষই করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কায় হাসপাতালে যাচ্ছেনা বলে জানান তিনি।
তিনি বলেন, 'আমরা এসব হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য রেড জোন এবং অন্যান্য রোগীদের জন্য গ্রিন জোন তৈরি করেছি। কিন্তু রোগীরাই এ পদ্ধতি মেনে চলতে আগ্রহী নয়।'
গত বছর এপ্রিল-জুনে, দেশে যখন ৬৬দিনের সাধারণ ছুটি চলছিল, সেসময় শমরিতা হাসপাতালের আয় কমে যায় ৬৬ শতাংশ, ১.৯৩ কোটি লোকসানের মুখে পড়ে হাসপাতালটি। বেশিরভাগ প্রাইভেট হাসপাতালের চিত্রও অনেকটা এরকমই। সেসময় হাসপাতালে ভর্তি হয়েছে মাত্র ১০-১২ জন রোগী, সাধারণ সময়ে এ সংখ্যা ৫০'র বেশি থাকে।
সাধারণ ছুটি শেষ হওয়ার পর শমরিতা হাসপাতাল আবার পুর্নোদ্দমে চালু হওয়ার পর জুলাই-সেপ্টেম্বরে ২০১৯ সালের একই সময়ের তুলনায় হাসপাতালটির আয় বেড়ে যায় ১৮৯ শতাংশ।
গত বছরের অক্টোবর - ডিসেম্বরেও ৩২ শতাংশ প্রবৃদ্ধি বজায় ছিল।
একই কোয়ার্টারে বার্ষিক হিসাবে লাভ বৃদ্ধি পেয়েছে ৪৫৮ শতাংশ, প্রায় ১.৯ কোটি টাকা।
তবে যেসব হাসপাতাল কোভিড আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে পারছে না তাদের অবস্থা অনেকটাই আলাদা।
ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্টারন্যাশনাল মেডিক্যাল কলেজ অ্যান্ড হাসপাতালের (ডিসিআইএমসিএইচ) কোভিড-১৯ রোগীর সেবা দেওয়ার মতো সুবিধা নেই। রাজধানীর রিং রোডে অবস্থিত হাসপাতালটিতে কোভিড-১৯ মহামারিরর শুরুতে দিনে রোগী ভর্তির সংখ্যা কমে ৮-১০ জনে দাঁড়ায়। পরিস্থিতির উন্নতির জন্য পরবর্তী সময়ে গত বছরের শেষের দিকে আক্রান্ত হওয়ার আশঙ্কা থাকা রোগী ভর্তি করা শুরু করলেও খুব একটা পরিবর্তন হয়নি। এখনো হাসপাতালটিতে দুই ভাগের বেশি শয্যা খালি থাকে।
ডিসিআইএমসিএইচ-এর ব্যবস্থাপক (অ্যাডমিন) এটিএম মুজিবুর রহমান টিবিএস-কে বলেন, "করোনা মহামারির শুরুতে আমাদের কোভিড-১৯ রোগী ভর্তির অনুমতি ছিল না, তখন আমাদের ভর্তি হওয়া রোগীদের মধ্যে কারো কোভিড-১৯ শনাক্ত হলে তাদের কোভিড ডেডিকেটেড হাসপাতালে রেফার করা হতো। পরে সরকার যখন সব বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগী ভর্তির নির্দেশ দিলো তখন কোনো রোগী পাওয়া গেলে তাদের চিকিৎসা দেওয়া হতো। এখন আমাদের হাসপাতালে সাসপেক্টেড কোভিড-১৯ রোগীদের জন্য ব্যবস্থা রয়েছে। সম্প্রতি আমরা কোভিড-১৯ টেস্টও করছি। তবে এখন মানুষ টেস্ট অনেক কম করে, রোগীরা কোভিড-১৯ পজেটিভ হলেও হাসপাতালে ভর্তি হয় কম।"
ডিসিআইএমসিএইচ-এর চিফ ফিন্যান্সিয়াল অফিসার বদরুদ্দোজা আহমেদ ফুয়াদ টিবিএস-কে বলেন, "অন্যান্য যে কোনো সময়ের তুলনায় করোনার শুরু থেকে আমাদের ব্যবসা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে। এখনো আমরা সন্তোনজনক অবস্থায় যেতে পারিনি, আমাদের বেড অকুপেন্সি রেট হতাশাজনক। এখনো মানুষ হাসপাতালে আসতে অনিচ্ছুক।"
আরেক নন-কোভিড হাসপাতাল ইনসাফ বারাকাহ কিডনি অ্যান্ড জেনারেল হাসপাতালের এক কর্মকর্তা বলেন, "কোভিডের শুরুতে হাসপাতালের ডাক্তার-নার্স কোভিড-১৯ শনাক্ত হওয়ায় ১৪ দিন আমাদের হাসপাতাল বন্ধ রাখতে হয়েছিলো। নন-কোভিড হাসপাতাল হওয়ায় আমাদের ব্যবসা অনেক ক্ষতিগ্রস্থ হয়েছে।"
বাংলাদেশ কোভিড-১৯ মহামারির মধ্যে ১০ মাস পার করেছে, মোট শনাক্তের সংখ্যা ৫ লাখ ৩৪ হাজার ৭৭০ জন, মৃত্যুর সংখ্যা ৮,১১১। দেশে নিবন্ধিত মোট প্রাইভেট হাসপাতালের সংখ্যা ৫ হাজার ৩২১। বিপিসিডিওএ'র তথ্যানুযায়ী, অনিবন্ধিত হাসপাতালসহ মোট প্রাইভেট হাসপাতালের সংখ্যা ১৫ হাজারের বেশি।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তর বর্তমানে ঢাকার নয়টি ও চট্টগ্রামের তিনটি বেসরকারি হাসপাতালে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার তথ্য দিচ্ছে।