রোমাঞ্চকর জয়ে বাংলাদেশকে হোয়াইটওয়াশ করলো ক্যারিবীয়রা
ওয়েস্ট ইন্ডিজ স্পিনারদের অবিরত ছোবল, তাতে দিশেহারা বাংলাদেশ। উইন্ডিজ স্পিনারদের স্পিন বিষে নীল হয়ে একে একে ফিরে গেছেন মূল ব্যাটসম্যানদের সবাই। মেহেদী হাসান মিরাজ যখন উইকেটে যান, বাংলাদেশ তখন হারের খুব কাছে। তবু চেষ্টা করলেন ডানহাতি এই তরুণ অলরাউন্ডার। কিছুক্ষণের জন্য আশাও জাগলো। কিন্তু শেষটা হলো সেই বিষাদের সুরেই।
মিরাজের ৩১ রান স্কোরকার্ডে লেখা থাকলেও তার লড়াইয়ের চিহ্ন সেখানে থাকবে না। ফলাফলেই চোখ যাবে সবার, ওয়েস্ট ইন্ডিজ ১৭ রানে জয়ী। রোমাঞ্চকর এই জয়ে যেন ওয়ানডে সিরিজের প্রতিশোধই নিয়ে নিলো সফরকারীরা। ৩-০ ব্যবধানের হারের পর টেস্টে ২-০ ব্যবধানের জয়। ঘুরে দাঁড়ানোর গল্প কীভাবে লিখতে হয়, লাল বলের ক্রিকেট দিয়ে তা দেখিয়ে দিল ক্রিকেটের আদি দেশটি।
২০১২ সালের পর প্রথমবারের মতো ঘরের মাটিতে হোয়াইটওয়াশ হলো বাংলাদেশ। ঘরের মাঠে সর্বশেষ এই ওয়েস্ট ইন্ডিজের বিপক্ষেই হোয়াইটওয়াশ হয় বাংলাদেশ। সেবারও ২-০ ব্যবধানে সিরিজ জেতে ক্যারিবীয়রা।
দ্বিতীয় ইনিংসে ওয়েস্ট ইন্ডিজকে ১১৭ রানে অল আউট করে লক্ষ্য নাগালেই রেখেছিল বাংলাদেশ। কিন্তু ২৩১ রানের লক্ষ্যেই হামাগুঁড়ি দিয়ে এগোতে থাকা বাংলাদেশ থেমে যায় ২১৩ রানে। বাংলাদেশের প্রায় সব ব্যাটসম্যানই সময় নিয়েছেন উইকেটে, রানও পেয়েছেন। কিন্তু শেষটা করেছেন উইকেট বিলিয়ে।
তামিম ৫০, মুমিনুল ২৬, লিটন ২২, মিরাজ ৩১ ও নাঈম ১৪ রান করেন। পুরো সিরিজে দারুণ বোলিং করা রাকিম কর্নওয়াল নেন ৪ উইকেট। তিনটি করে উইকেট নেন ক্রেইগ ব্রাথওয়েট ও জোমেল ওয়ারিক্যান। প্রতিপক্ষকে দমানোর জন্য যে স্পিনকে অস্ত্র বানিয়েছিল বাংলাদেশ, সেই স্পিনই কাল হয়ে উঠলো।
মুমিনুল-লিটনের বিদায়, হারের শঙ্কায় বাংলাদেশ
লিটন দাসকে সঙ্গে নিয়ে চাপ কাটিয়ে ওঠার পথেই ছিলেন মুমিনুল হক। হয়ে গিয়েছিল ৩২ রানের জুটি। কিন্তু বাংলাদেশের টেস্ট অধিনায়কও পারলেন না। ২৬ রান করে ফিরে গেছেন মুমিনুল। রাকিম কর্নওয়ালের টার্ন করা একটি ডেলিভারি ডিফেন্স করার চেষ্টা করেন তিনি। কিন্তু টার্ন করে বলটি মুমিনুলের ব্যাট ছুঁয়ে জমা হয় ব্যাকওয়ার্ড শর্ট লেগের ফিল্ডার জোমেল ওয়ারিক্যানের হাতে।
কিছুক্ষণ পর সাজঘরে ফেরন লিটন দাস। কর্নওয়ালেরই অনেক বাইরের বলে শট খেলতে গিয়ে জশুয়া ডা সিলভার হাতে ধরা পড়েন ২২ রান করা ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান। ২৩১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে ৪৫ ওভার শেষে ৭ উইকেটে ১৫৬ রান তুলেছে বাংলাদেশ। জয়ের জন্য বাংলাদেশের দরকার ৭৫ রান, হাতে আছে ৩ উইকেট। উইকেটে আছেন মেহেদী হাসান মিরাজ ও তাইজুল ইসলাম।
মুশফিকের বিদায়ে বাড়লো চাপ
ভালো শুরুর পরও অস্বস্তিতে বাংলাদেশ। সৌম্য সরকারের বিদায়ের পর হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে বাংলাদেশের ব্যাটিং লাইন আপ। একে একে ফিরে যান তামিম ইকবাল, নাজমুল হোসেন শান্তরা। এবার সাজঘরের পথ ধরলেন মুশফিকুর রহিম, মোহাম্মদ মিঠুনও।
রাকিম কর্নওয়ালের বলে উইকেটের পেছনে ক্যাচ দিয়ে ফেরেন ১৪ রান করা মুশফিক। কর্নওয়ালের শিকারে পরিণত হয়ে থেমেছেন মিঠুনও। ৩৪ ওভার শেষে বাংলাদেশের সংগ্রহ ৫ উইকেটে ১১৬ রান। জয়ের জন্য এখনও দরকার ১১৫ রান। উইকেটে আছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক ও লিটন দাস।
তামিম-সৌম্যর পর শান্তকে হারিয়ে বিপাকে বাংলাদেশ
২৩১ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিং করতে নেমে শুরুটা ভালোই হয়েছিল বাংলাদেশের। অনেকটা ওয়ানডে মেজাজে খেলে দলের রান বাড়িয়ে যাচ্ছিলেন তামিম ইকবাল। ঠান্ডা মাথায় তাকে সঙ্গ দিচ্ছিলেন সৌম্য সরকার। ৫০ পেরিয়ে এই জুটি ভেঙেছে। দলীয় ৫৯ রানের মাথায় সৌম্যকে ফেরান উইন্ডিজ অধিনায়ক ক্রেইগ ব্রাথওয়েট।
৩৪ বলে ১৩ রান করে থামেন সৌম্য। কেবল সৌম্যকেই ফেরাননি ব্রাথওয়েট, হাফ সেঞ্চুরি করা তামিমকেও সাজঘর দেখিয়ে দিয়েছেন তিনি। ফেরার আগে ৪৬ বলে ৯টি চারে ৫০ রান করেন তামিম। টেস্টে এটা তার ২৮তম হাফ সেঞ্চুরি।
কিছুক্ষণের ব্যবধানে ২ উইকেট হারিয়ে চাপে পড়া বাংলাদেশের বিপদ আরও বেড়েছে নাজমুল হোসেন শান্তর বিদায়ে। পুরো সিরিজে ব্যর্থ বাঁহাতি ব্যাটসম্যান ১১ রান করেই থেমেছেন। ২১.৩ ওভারে ৩ উইকেটে ৭৮ রান তুলে চা পানের বিরতিতে গেছে বাংলাদেশ। ২ রানে অপরাজিত আছেন অধিনায়ক মুমিনুল হক।