কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজনের প্রস্তুতিতে প্রাণ হারিয়েছে বাংলাদেশি-সহ ৬,৫০০ অভিবাসী শ্রমিক
আজ থেকে এক দশক আগে ২০২২ সালের ফুটবল বিশ্বকাপ আয়োজনের সত্ত্ব পায় কাতার। আয়োজক দেশ হিসেবে খনিজ তেল সমৃদ্ধ দেশটি শুরু করে ব্যাপক প্রস্তুতি, যার আওতায় নির্মাণ চলছে সুবিশাল স্টেডিয়াম, অতিথিশালা-সহ অন্যান্য সব স্থাপনার। তবে এগুলো বাস্তবায়নে দেশটির ভরসা অপেক্ষাকৃত সস্তা মজুরির অভিবাসী শ্রমিক।
কাতারে এমন ধরনের জনশক্তি রপ্তানিতে এগিয়ে আছে দক্ষিণ এশিয়ার পাঁচটি দেশ; বাংলাদেশ, ভারত, পাকিস্তান, নেপাল ও শ্রীলঙ্কা। আর গত ১০ বছরে এসব দেশের সাড়ে ৬ হাজারের বেশি অভিবাসী শ্রমিক কাতারে কর্মরত অবস্থায় মারা গেছেন। বাংলাদেশি মারা গেছেন ১,০১৮ জন। প্রভাবশালী ব্রিটিশ দৈনিক দ্য গার্ডিয়ানের অনুসন্ধানে এই তথ্য উঠে আসে।
তথ্য সংগ্রহের ক্ষেত্রে রপ্তানিকারক দেশগুলোর সরকারি সূত্র ব্যবহার করেছে দ্য গার্ডিয়ান। এতে দেখা যাচ্ছে, ২০১০ সালে কাতারকে স্বাগতিক দেশ হিসেবে নির্বাচনের পর থেকে প্রতি সপ্তাহে গড়ে মারা গেছেন ১২জন দক্ষিণ এশীয় শ্রমিক।
বাংলাদেশ, ভারত, নেপাল এবং শ্রীলঙ্কার সরকারি তথ্যানুসারে ২০১১-২০২০ নাগাদ এসব দেশের ৫,৯২৭ জন অভিবাসী কর্মী মারা গেছেন। অন্যদিকে, কাতারে অবস্থিত পাকিস্তান দূতাবাস একইসময়ে ৮২৪ জনের মৃত্যুর কথা জানায়। অর্থাৎ, মোট প্রাণহানির সংখ্যা ৬,৭৫১।
তবে সরকারি হিসাবের বাইরে আছে কাতারে এই পাঁচটি দেশ থেকে বেসরকারিভাবে যাওয়া কর্মীর সংখ্যা। তাদের মৃত্যুর ঘটনা যোগ হলে প্রকৃত প্রাণহানির সংখ্যা আরও বেশি দাঁড়াবে বলেই জানিয়েছে ব্রিটিশ দৈনিকটি।
এছাড়া, দক্ষিণ এশিয়ার বাইরে কাতারে জনশক্তি রপ্তানির অপর দুই বৃহৎ উৎস; ফিলিপাইন ও কেনিয়া থেকে যাওয়া শ্রমিকদের মধ্যে যারা মারা গেছেন, তাদের সংখ্যাও এখানে যুক্ত হয়নি। বাদ রয়েছে, ২০২০ সালের শেষদিকে মারা যাওয়া প্রায় সকল জাতীয়তার অভিবাসী কর্মীর সংখ্যাও।
গত ১০ বছর ধরে নজিরবিহীন আকারে স্থাপনা নির্মাণের কর্মসূচি শুরু করে কাতার, যার বেশিরভাগই হচ্ছে ২০২২ সালের বিশ্বকাপ উপলক্ষে। এরমধ্যে সাতটি নতুন স্টেডিয়াম-সহ কয়েক ডজন বৃহৎ প্রকল্পের কাজ হয় শেষ হয়েছে, নয়তো চলমান আছে। বড় প্রকল্পের মধ্যে আছে; নতুন একটি বিমানবন্দর, গণ-পরিবহন ব্যবস্থার অবকাঠামো, বিশ্বমানের হোটেল এবং এমনকি সম্পূর্ণ নতুন একটি শহর। এই শহরেই বিশ্বকাপ ফাইনাল অনুষ্ঠিত হবে।
অভিবাসী কর্মীদের পেশা বা কর্মস্থল অনুসারে মৃত্যুর রেকর্ড শ্রেণিকরণ করা না হলেও- তাদের বেশিরভাগ বিশ্বকাপ আয়োজনের জন্যে নির্মিত প্রকল্পে কাজ করার সময় মারা গেছেন ধারণা করা হচ্ছে, একথা জানান উপসাগরীয় দেশে শ্রম অধিকার নিয়ে কাজ করা সংস্থা ফেয়ারস্কয়ার প্রজেক্টস- এর পরিচালক নিক ম্যাকগিহান।
"কাতারের বিশ্বকাপ আয়োজন উপলক্ষে বিপুল কর্মসংস্থানের সুযোগ সৃষ্টি হয়। মৃতদের অধিকাংশ এই প্রকল্পগুলোতে কাজ করার জন্যেই দেশটিতে এসেছিলেন," বলে জানান তিনি।
- সূত্র: দ্য গার্ডিয়ান