বিশ্বে ব্যবসা, পর্যটন ও ভ্রমণ বাড়ছে, তবু কর্মীদের টিকাদানে ভিন্ন পথে এয়ারলাইনগুলো
কোভিড-১৯ টিকাদান কর্মসূচি বাড়তে থাকার সাথে, এয়ারলাইনগুলোতেও ভীড় জমাচ্ছেন মানুষ। ব্যবসায়িক কাজ থেকে শুরু করে বাড়ছে ছুটি কাটানোর উদ্দেশ্যে ভ্রমণের হার। ব্যস্ত হয়ে পড়েছে বিমান পরিবহন সংস্থাওগুলোও। নতুন এই পরিস্থিতির সামাল দিতে, সংস্থাগুলো বিমান-কর্মীদের জন্য প্রণয়ন করছে বিভিন্ন ধরনের নীতিমালা।
কয়েকটি সংস্থা কর্মীদের জন্য টিকাদান বাধ্যতামূলক করলেও, অনেকেই টিকাদানের সিদ্ধান্ত কর্মীদের উপর ছেড়ে দিচ্ছেন। আন্তর্জাতিক বিমান সংস্থাগুলো কর্মীদের কী ধরনের দিক-নির্দেশনা প্রদান করছে তা তুলে ধরা হল-
এয়ার ফ্রান্স: ফ্রেঞ্চ পত্রিকা এল'এক্সপ্রেসকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে এয়ার ফ্রান্সের সিইও বেন স্মিথ জানান, তিনি চেয়েছিলেন বিমান কর্মীরা যেন দ্রুত টিকা গ্রহণ করেন। একই সাথে তিনি সরকারি উদ্যোগের অপেক্ষাও করছিলেন।
আমেরিকান এয়ারলাইনস: আমেরিকান এয়ারলাইনসের যোগাযোগ বিষয়ক ব্যবস্থাপক স্টেসি ডে জানান, প্রতিষ্ঠানটি বিমান কর্মীসহ সংস্থার সদস্যদের টিকাদানের পরিকল্পনা করছেন। তবে, তারা টিকাদানের বিষয়টি বাধ্যতামূলক করার কথা ভাবছেন না।
"সুযোগ আসলে আমরা সবাইকে টিকাদানে উৎসাহ প্রদান করছি," বলেন ডে। "নির্দিষ্ট কিছু গন্তব্যে যাত্রার ক্ষেত্রে বাধ্যতামূলক টিকাদান ব্যতীত আমরা সদস্যদের টিকা গ্রহণে কোনও বাধ্যবাধকতা রাখছি না।"
ডেল্টা এয়ারলাইনস: ডেল্টার সিইও এড বাস্টিয়ান জানান, সংস্থাটি হার্টসফিল্ড-জ্যাকসন আটলান্টা এয়ারপোর্টের একতি অংশ দখল করে কর্মীদের জন্য টিকাদান কেন্দ্র স্থাপন করেছে। জর্জিয়ায় অবস্থানরত ডেল্টা কর্মী এবং বিমানবন্দরের ৬৫ বছরের অধিক বয়সীদের টিকাদান কার্যক্রম চলছে।
এমিরেটস: সংযুক্ত আরব আমিরাতের জাতীয় পরিবহন সংস্থাটি সম্প্রতি কর্মচারিদের টিকাদানের উদ্যোগ গ্রহণ করেছে। কেবিন ক্রু, পাইলট এবং অন্যান্য অপারেশনাল কর্মীদের টিকাদানের ক্ষেত্রে প্রাধান্য দেওয়া হচ্ছে। এমিরেটস ফাইজার বায়োএনটেক ছাড়াও চীনা জাতীয় ওষুধ সংস্থা সিনোফার্মের টিকা ব্যবহার করছে।
ইতিহাদ: সংস্থাটির সিইও টনি ডগলাস এক বিবৃতিতে জানান, উদাহরণ সৃষ্টি করতে তিনি নিজেই প্রথমে ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন। তিনি বলেন,জাতীয় টিকাদান কর্মসূচীর প্রতি সংহতি জানাতে এবং ইতিহাদের টিকা গ্রহণে উপযুক্ত সবাইকে অনুপ্রাণিত করতেি তার এই পদক্ষেপ।
সম্প্রতি সংস্থাটি ঘোষণা দিয়েছে যে, তাদের কর্মরত পাইলট এবং কেবিন ক্রুরা সকলেই টিকা গ্রহণ করেছেন। এবং বিশ্বে তারাই প্রথম পূর্ণাঙ্গ ভ্যাকসিনেটেড বিমান সংস্থা।
কোরিয়ান এয়ার: কোরিয়ান এয়ারের জনসংযোগ প্রতিনিধি সোইয়ন পার্ক কোরিয়ার সরকারের কথা টিকাদান কর্মসূচীর কথা উল্লেখ করে বলেন, দেশটি বর্তমানে নার্সিং হোম, হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যখাত ভিত্তিক বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানে টিকাদানের পরিকল্পনা করছে। বিমান সংস্থাটি বিমান কর্মীদের জন্যও একই ধরনের নীতিমালার অপেক্ষা করছে।
ক্যানটাস: অস্ট্রেলিয়ার বিমান সংস্থা ক্যানটাসের সিনিয়র ব্যবস্থাপক স্টেসি ফারার জানান, ক্যানটাসের আন্তর্জাতিক ফ্লাইটগুলোর জন্য ত্রু এবং যাত্রীদের কোভিড টিকা দিতে হবে। তবে অভ্যন্তরীণ ফ্লাইটগুলোর জন্য বিষয়টি প্রযোজ্য নয়।
"আমরা সম্ভবত ব্যতিক্রম কিছু করছি না। কেননা, বহু দেশেই প্রবেশের ক্ষেত্রে সম্ভবত টিকাদান বাধ্যতামূলক," বলেন ফেরার।
সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস: সিয়া গ্রুপের তিনটি বিমান সংস্থাই (সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনস, সিল্ক এয়ার ও স্কুট) বিশ্বে পূর্ণাঙ্গ ভ্যাকসিনেটেড পাইলট এবং বিমান ক্রুদের নিয়ে পরিবহনে শীর্ষে অবস্থান করছে। ভ্যাকসিনের পূর্ণাঙ্গ সুরক্ষা নিয়ে ফেব্যুয়ারির ১১ তারিখে সিয়ার প্রথম ফ্লাইটটি সিঙ্গাপুর থেকে ইন্দনেশিয়ার জাকার্তায় উড়াল দেয়।
প্রতিষ্ঠানিক এক বিবৃতিতে, সিঙ্গাপুর এয়ারলাইনসের সিইও গোহ চুন ফং জানান, সিঙ্গাপুর সরকার টিকাদানের ক্ষেত্রে দেশতির বিমান খাতকে প্রাধান্য দিয়েছে। এখন পর্যন্ত ৯০ শতাংশ ক্রু এবং পাইলট ভ্যাকসিনের নিবন্ধন করিয়েছেন।
ইউনাইটেড এয়ারলাইনস: জানুয়ারি মাসের এক সভায় ইউনাইটেডের সিইও স্কট কিরবি কর্মীদের টিকাদান ব্যবস্থাপনা সম্পর্কে মন্তব্য করেন।
কিরবি বলেন, "কোভিডে আমরা যেসব সহকর্মীদের হারিয়েছি, তাদের পরিবারের কাছে চিঠি লেখা সম্ভবত আমার কর্মজীবনের সবথেকে বাজে অভিজ্ঞতা ছিল। যেহেতু আমার নিরাপদ ভ্যাকসিনে বিশ্বাস আছে, তাই, বিতর্কিত জেনেও আমি মনে করছি যে, ইউনাইটেড এয়ারলাইনস সহ সকল প্রতিষ্ঠানের জন্য টিকাদান বাধ্যতামূলক করা উচিত।"
"ভ্যাকসিন নিরাপদ তা আমি জানি। আমি এটাও জানি যে, আমাদের কর্মী এবং গ্রাহক যাদের নিয়ে আমরা পুরো পৃথিবী অতিক্রম করি তাদের সুরক্ষিত রাখতে এই টিকাদান জরুরি," বলেন তিনি।
- সূত্র: ব্যারনস