ফের বাড়ছে করোনার সংক্রমণ, গরমে শ্যালো ওয়েভের শঙ্কা
দেশে দীর্ঘদিন করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার ৫% এর নিচে থাকার পর আবার বাড়তে শুরু করেছে। সংক্রমণ হার কম থাকায় ও ভ্যাকসিনেশন শুরু হওয়ায় মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে এক ধরণের অনীহা দেখা দিচ্ছে। ফলে গরমে দেশে করোনাভাইরাসের শ্যালো ওয়েভের শঙ্কা করছেন বিশেষজ্ঞরা। পাশাপাশি দেশে করোনাভাইরাসের যুক্তরাজ্যের ধরনটির (ইউ কে ভ্যারিয়েন্ট) বিস্তার রোধে বেশি বেশি জিনোম সিকুয়েন্সিং করার তাগিদ তাদের।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার প্রোটোকল অনুসারে, সংক্রমণের হার টানা তিন সপ্তাহ ৫% এর নিচে থাকলে পরিস্থিতি নিয়ন্ত্রণে আছে, বিবেচনা করা হয়।
প্রায় দুই মাস ধরে দেশে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ হার ৫% এর নিচে ছিল। গত সপ্তাহ থেকে নতুন রোগী শনাক্ত ও সংক্রমণ হার উর্ধ্বমুখী। বর্তমানে সংক্রমণ হার ৬% এর কাছাকাছি। দৈনিক শনাক্ত রোগীর সংখ্যা দু্ই মাস পর ১০০০ ছাড়িয়েছে। হাসপাতালগুলোতে বাড়ছে ভর্তি রোগীর সংখ্যা।
প্রথিতযশা ভাইরোলজিস্ট এবং করোনা বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম টিবিএসকে বলেন, 'শীতকালে আমাদের দেশীয় ভাইরাসগুলো সক্রিয় থাকায় করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কম ছিলো। কিন্তু গরমকালে করোনাভাইরাসের সংক্রমণ কিছুটা বাড়তে পারে। করোনাভাইরাসের একটা শ্যালো ওয়েভ আসতে পারে'।
ঈদকে কেন্দ্র করে সারা দেশে বিপুলসংখ্যক মানুষের যাতায়াত বাড়বে। সেটি নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নতুন করে করোনার সংক্রমণ বাড়বে বলে অনেকেই আশঙ্কা করছেন।
ওষুধ ও সংক্রামক রোগ বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক রিদওয়ানুর রহমান দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'ভ্যাকসিনেশন শুরু হওয়ায় এখন মানুষের মধ্যে স্বাস্থ্যবিধি মানতে এক ধরণের অনাগ্রহ শুরু হয়েছে। কিন্তু করোনাভাইরাসের সংক্রমণ থেকে বাঁচতে স্বাস্থ্যবিধি মানা ও ভ্যাকসিন নেয়ার বিকল্প নেই। তা না হলে সংক্রমণ আরো বেড়ে যেতে পারে। ভ্যাকসিন ৭০% সুরক্ষা দিবে তাই ভ্যাকসিন নেয়ার পরও স্বাস্থ্যবিধি না মানলে যে কেউ করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হতে পারে। কিন্তু ভ্যাকসিন নিলে করোনাভাইরাসে মৃত্যু কমবে'।
ইউ কে ভ্যারিয়েন্টের বিস্তার রোধে নিয়মিতভাবে সারাদেশ থেকে স্যাম্পল সংগ্রহ করে সিকুয়েন্সিং করার পরামর্শ দেন অধ্যাপক রিদওয়ানুর রহমান।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালক অধ্যাপক ডা. এ বি এম খুরশিদ আলম বলেন, 'কক্সবাজার, সিলেটসহ টুরিস্ট স্পটগুলোতে মানুষের ভিড় বাড়ছে। মানুষ মাস্ক পরছেনা, স্বাস্থ্যবিধি মানছেনা সে কারণে সংক্রমণ আবার বাড়তে শুরু করেছে। ঈদের ছুটিতে আবার সংক্রমণ বাড়ার শঙ্কা রয়েছে। তাই ঈদের ছুটি যাতে কমানো হয় সেদিকে গুরুত্ব দেয়া হচ্ছে'।
যুক্তরাজ্য ফেরত ছয়জনের শরীরে ইউ কে ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত
দেশে চলতি বছরের জানুয়ারি মাসে করোনাভাইরাসের ইউ কে স্ট্রেইন বাংলাদেশে পাওয়া গেছে। এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্য ফেরত ছয়জনের শরীরে নতুন এ স্ট্রেইন পাওয়া গেছে বলে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন রোগতত্ত্ব, রোগ নিয়ন্ত্রণ ও গবেষণা ইনস্টিটিউটের (আইইডিসিআর) প্রধান বৈজ্ঞানিক কর্মকর্তা ডা. এ এস এম আলমগীর।
ডা. এ এস এম আলমগীর বলেন, 'যাদের শরীরে নতুন ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে তাদের সবাইকে কন্টাক্ট ট্রেসিংয়ের আওতায় আনা হয়েছে। তাদের কাছ থেকে এখন পর্যন্ত এই ভ্যারিয়েন্ট অন্য কারও মাঝে ছড়ানোর কোনো তথ্য পাওয়া যায়নি'।
বর্তমানে যে সংক্রমণ বাড়ছে তাতে যুক্তরাজ্যের ভ্যারিয়েন্টের কোনো ভূমিকা নেই বলে জানান ডা. আলমগীর। তিনি বলেন, 'মানুষের মধ্যে কিছুটা শিথিলতা চলে আসায় সংক্রমণ বাড়ছে। স্বাস্থ্যবিধি মানার ক্ষেত্রেও কিছুটা শিথিল ভাব দেখা যাচ্ছে। যার কারণে সংক্রমণ বাড়ছে'।
তিনি বলেন, 'ঢাকা ও সিলেটে যুক্তরাজ্য ফেরত যাত্রীদের শরীরে এ ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া গেছে। যেহেতু আমাদের দেশে যুক্তরাজ্য থেকে আসা সবাইকে কোয়ারেন্টাইনে রাখার নিয়ম আছে তাই খুব একটা বেশি ছড়ায়নি এই ভ্যারিয়েন্ট। যাদের মাঝে সংক্রমণ পাওয়া গেছে তারা সবাই কোয়ারেন্টাইনে ছিলেন। আমরা তাদের আইসোলেশনে রেখে তত্ত্বাবধায়ন করেছি। একইসঙ্গে তাদের সংস্পর্শে যারা এসেছে তাদেরকেও কন্টাক্ট ট্রেসিং করে বের করেছি। এখন পর্যন্ত যুক্তরাজ্যের স্ট্রেইন সেদেশে যেভাবে ছড়িয়েছে তেমন কোনো গতি বাংলাদেশে পাইনি'।
ডা. আলমগীর জানান, 'পৃথিবীর প্রায় ৮০টির বেশি দেশে এই ভ্যারিয়েন্ট দেখা গেছে। যুক্তরাজ্যের মতো পৃথিবীর অনেক দেশেই যে সংক্রমণ বেশি হয়েছে বিষয়টা কিন্তু তেমন না। যুক্তরাষ্ট্রের কিছু কিছু জায়গায় দেখেছি যে ইউ কে ভ্যারিয়েন্ট বেশ ছড়াচ্ছে। কিন্তু এই অঞ্চলে নতুন ভ্যারিয়ন্টটি স্প্রেডিংয়ের সক্ষমতা অর্জন করেনি বলেই ধারণা আমাদের। কারণ আমরা এখনো সেরকম কিছু দেখিনি'।
তিনি বলেন, 'যুক্তরাজ্য থেকে আসার পর যাদের পজিটিভ পাওয়া গেছে তাদের নমুনা আমরা সিক্যুয়েনসিং করছি। আমরা এই সিক্যুয়েন্সিং অব্যাহত রেখেছি।
ভ্যাকসিনের কার্যকারিতে বিষয়ে ডা. আলমগীর বলেন, 'বাংলাদেশে আমরা যে ভ্যাকসিন দিচ্ছি সেটি এই ভ্যারিয়েন্টের বিপক্ষে কার্যকর। যুক্তরাজ্যেও এই ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে। সেখানে ভ্যাকসিন কাজ করছে না এমন কোনো প্রমাণ পাওয়া যায়নি।