আর্টিকুলেটেড বাস প্রকল্পের পরিকল্পনা পরিবর্তন করল বিআরটি
গাজীপুর থেকে এয়ারপোর্ট রুটে আর্টিকুলেটেড বাস চালুর পরিকল্পনা পরিবর্তনের সিদ্ধান্ত নিয়েছে সরকার। এর পরিবর্তে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্বের (পিপিপি) আওতায় মানসম্মত বাস চালু করার নতুন সিদ্ধান্ত নেওয়া হয়েছে।
সরকার ও বেসরকারি কোম্পানির মালিকানায় ৫০- ৭০টি বাস পরিচালনার জন্য আলাদা কোম্পানি গঠন করা হবে।
২০২২ সালের জুনে বিআরটি-৩ এর কাজ সম্পন্নের পর এই পরিষেবা চালু হবে বলে জানিয়েছেন সংশ্লিষ্ট কর্মকর্তারা।
ঢাকা বাস ট্রানজিট লিমিটেডের ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "উচ্চ, মধ্য ও নিম্ন আয়ের যাত্রীদের কথা বিবেচনায় তিন ধরনের বাস চালু হবে,"
বিআরটি-৩ লেনে এই বাসগুলোর পরিচালনার জন্য সরকারের সঙ্গে কাজ করবে বেসরকারি কোম্পানিগুলো। তবে এখনো শেয়ারের অংশিদাত্বের হার নির্ধারণ হয়নি বলে জানান তিনি।
বেসরকারি পরিবহন অপারেটররাও এ উদ্যোগে অংশগ্রহণের ইচ্ছা প্রকাশ করেছেন।
ঢাকা পরিবহন মালিক সমিতির সাধারণ সম্পাদক খন্দকার এনায়েত উল্লাহ জানান, সরকারের নতুন কোম্পানির অধীনে তাদের বাস চলাচলের অনুমতি চেয়ে সরকারের কাছে প্রস্তাবনা পাঠিয়েছে।
"সরকারি কর্মকর্তাদের সঙ্গে এক বৈঠকে নতুন কোম্পানিতে বেসরকারি বাস মালিকদের অংশগ্রহণের সুযোগ দেওয়ার দাবি জানিয়েছি। তবে এব্যাপারে এখনো কোনো সিদ্ধান নেওয়া হয়েছে কিনা আমরা তা এখনো জানি না,"
"এটি বেশ ভালো উদ্যোগ। আমরা সরকারের উত্তরের অপেক্ষায় আছি," গতকাল দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে এসব কথা বলেন এনায়েত উল্লাহ।
সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব কর্তৃপক্ষের প্রধান নির্বাহী কর্মকর্তা সুলতানা আফরোজ জানান, পরিবহন খাতে বেসকারি কোম্পানির অন্তর্ভুক্তিকরণ ইতিবাচক ফলাফল বয়ে আনবে।
"পরিবহন খাতে সরকারি-বেসরকারি অংশীদারত্ব জোরদারের ভালো সুযোগ আছে। প্রতিবেশী দেশ ভারতসহ অনেক দেশই বর্তমানে এধরনের উদ্যোগ নিচ্ছে। বিআরটিতে পিপিপি'র ভালো ফলাফল পাওয়া যাবে," বলেন তিনি।
"এধরনের উদ্যোগ সফল হলে পরবর্তী সময়ে পরিবহন খাতে আরও প্রকল্প পাওয়া যাবে," যোগ করেন তিনি।
প্রাথমিকভাবে বিআরটি-৩ লেনে ১৪০ জন যাত্রী বহনের ক্ষমতসম্পন্ন আর্টিকুলেটেড বাস চালুর পরিকল্পনা করা হয়।
৫৮ কোটি টাকা মূল্যের এধরনের একশোটি বাস চালুর পরিকল্পনা করেছিল সরকার।
"তবে সরকারের এ পরিকল্পনা থেকে সরে আসতে হয়। শুধু সরকারি খাতে বাস পরিবহনের কার্যক্রম সীমাবদ্ধ থাকবে না। বিআরটি লেনে বাস পরিচালনায় সরকার ও বেসরকারি কোম্পানিগুলো যৌথভাবে কাজ করবে," বলেন বিআরটির ব্যবস্থাপনা পরিচালক শফিকুল ইসলাম।
বিআরটির যাত্রীদের জন্য বিমানবন্দর থেকে নির্ধারিত গন্তব্যে পৌঁছে দিতে আলাদা বাসের ব্যবস্থা করা হবে বলেও জানান তিনি।
এর আগে সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের কর্মকর্তারা জানিয়েছেন, এখনই বিমানবন্দর পয়েন্ট ছাড়া অন্য পরিকল্পনা নেই বিআরটি'র। বিআরটি-৩ লেনের প্রকল্পের কার্যক্রম সফল হলেই মহাখালী ও সদরঘাট হয়ে কেরানীগঞ্জ রুটের ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেওয়া হবে।
তবে পরিবহন বিশেষজ্ঞরা বিআরটি'র এধরনের আংশিক পদ্ধতির ব্যাপারে সন্দিহান।
বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ের (বুয়েট) পুরকৌশল বিভাগের অধ্যাপক ড. মো. শামসুল হক বলেন, "শুধু এয়ারপোর্ট থেকে গাজীপুর পর্যন্ত বিআরটি-৩ লেনের কাজ বাস্তবায়ন হলে এবং সরকার বাকি প্রকল্প বাস্তবায়নে উদ্যোগ না নিলে এটি সফল হবে না,"
"ফলস্বরূপ, যাত্রীরা বছরের পর বছর একই যানজট পরিস্থিতির মুখে পড়বেন। বিআরটি'র প্রধান উদ্দেশ্যই ছিল শহরের যানজট কমিয়ে আনা," যোগ করেন তিনি।
বিআরটি লাইনে বাস পরিচালনা এবং খন্ডিত বিআরটি লাইনের ওপর ভিত্তি করে সিদ্ধান্ত নেওয়ার ফলে বিআরটি লাইন-৩ এর নির্মাণ কাজ অশ্চিয়তার মুখে পড়বে বলে ধারণা করছেন সংশ্লিষ্টরা।
বিশ্ব ব্যাংকের পরামর্শ অনুযায়ী ঢাকায় যানজট কমাতে এক দশক আগে পাঁচটি ম্যাস র্যাপিড ট্রানজিট (এমআরটি) এবং দুটি বিআরটি লাইন নির্মাণের সিন্ধান্ত নেয় সরকার। এরই অংশ হিসেবে তিনটি এমআরটি এবং বিআরটি-৩ প্রকল্পের কাজ চলছে।
বিআরটি গাজীপুর –বিমানবন্দর প্রকল্প হল বিআরটি লাইন-৩ এর অংশ। বিআরটি লাইন-৩ হবে গাজীপুর থেকে কেরানীগঞ্জের ঝিলমিল প্রকল্প পর্যন্ত। এর অংশ হিসেবে গাজীপুর-বিমানবন্দর প্রকল্পের কাজ শুরু হয় ২০১২ সালে। এরপর বিমানবন্দর থেকে মহাখালী, মহাখালী থেকে সদরঘাট এবং সদরঘাট থেকে ঝিলমিল পর্যন্ত আলাদা আলাদা প্রকল্প বাস্তবায়নের পরিকল্পনা ছিল সরকারের।
গাজীপুর থেকে বিমানবন্দর প্রকল্পের মোট ব্যয় ধরা হয়েছে ৪ হাজার ২৬৮ দশমিক ৩২ কোটি টাকা। ২০২২ সালের জুনের মধ্যে প্রকল্পের বাস্তবায়ন শেষ করার লক্ষ্যমাত্রা নির্ধারণ করা হয়েছে।
এখন পর্যন্ত প্রকল্পের ভৌত অগ্রগতি হয়েছে ৩৫ শতাংশ। ভূমি অধিগ্রহণ এবং বিভিন্ন সংস্থার সমন্বয়হীনতার কারণে প্রকল্পের বাস্তবায়ন ধীরগতিতে এগোচ্ছে।
সড়ক পরিবহন ও মহাসড়ক বিভাগের সচিব মো নজরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, ব্যস্ত সড়কের যানজট এড়াতে এখনই এয়ারপোর্ট-মহাখালী প্রকল্প সম্প্রসারণের কথা ভাবছে না মন্ত্রণালয়।
"গাজীপুর-এয়ারপোর্ট লাইনের কাজ সম্পন্ন হলে তার ভিত্তিতে প্রকল্পের সম্প্রসারণের ব্যাপারটি বিবেচনা করা হবে," যোগ করেন তিনি।