বঙ্গবন্ধু বলেছিলেন- বাংলাদেশকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না: নরেন্দ্র মোদি
জাতীয় প্যারেড স্কয়ারে অনুষ্ঠিত স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও জাতির পিতা শেখ মুজিবুর রহমানের জন্মশতবার্ষিকীর অনুষ্ঠানে বিশেষ অতিথি হিসেবে যোগ দিয়েছেন ভারতীয় প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদি। এসময় তিনি জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের বলিষ্ঠ নেতৃত্ব ও জাতি গঠনে তার অবদানের ভূয়সী প্রসংসা করেছেন।
স্বাধীনতা দিবসে তিনি বাংলাদেশের জনগণকে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার নেতৃত্বে অর্থনৈতিক ও সামাজিক উন্নয়ন অর্জন করায় আন্তরিক অভিনন্দন জানান।
এসময় তিনি বাংলাদেশের জাতির পিতা বঙ্গবন্ধুর কথা স্মরণ করে বলেন, তিনি বলেছিলেন- বাংলাদেশকে কেউ দমিয়ে রাখতে পারবে না। বাংলাদেশের উন্নতি তার কন্যার নেতৃত্বে কেউ থামিয়ে রাখতে পারেনি।
তিনি বলেন, তার রাজনৈতিক জীবনের শুরুই হয়েছিল প্রতিবেশী বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবিতে আন্দোলনে যোগ দেওয়ার মাধ্যমে।
"আমার রাজনৈতিক পদচারণাতেও গুরুত্বপূর্ণ একটি অধ্যায় ছিল বাংলাদেশের স্বাধীনতা সংগ্রাম। আমি ও আমার রাজনৈতিক সহকর্মীরা বাংলাদেশের স্বাধীনতার দাবিতে ভারতে সত্যাগ্রহ আন্দোলনে যোগ দেই। আমার বয়স তখন ২০'র শুরুর দিকে। এদেশের স্বাধীনতার জন্য সত্যাগ্রহ আন্দোলন করায় আমাকে ভারতে জেলে যেতেও হয়েছিল, যাকে আমি নিজের জন্য সৌভাগ্য বলে মনে করি।"
"এদেশের স্বাধীনতার জন্যে যেসব বীর মুক্তিযোদ্ধারা জীবন দিয়েছিলেন এবং যেসব ভারতীয় সৈনিক বাংলাদেশের পক্ষে লড়েছিলেন তাদের অবদান চির স্মরণীয়। তাদের সাহস ও আত্মত্যাগ আমরা কখনোই ভুলব না," বলেন মোদি।
ভাষণের সময় নরেন্দ্র মোদি বাংলাদেশ-ভারত সম্পর্ক মজবুত করতে তরুণদের মধ্যে যোগাযোগ বাড়ানোর তাগিদ দেন। এ সময় মোদি ভাষা শহীদ সালাম, রফিক, বরকত, জব্বারকে স্মরণ করেন। অনুষ্ঠানে গোবিন্দ হালদারের লেখা গান 'এক সাগর রক্তের বিনিময়ে, বাংলার স্বাধীনতা আনলে যারা, আমরা তোমাদের ভুলব না' গানটিও বাংলায় উচ্চারণ করেন।
এছাড়াও ১৯৭১ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের ঐতিহাসিক ৭ মার্চ এর ভাষণের খণ্ডাংশও স্মরণ করেন। তিনি জোরালো কণ্ঠে বলেন-'এবারের সংগ্রাম, মুক্তির সংগ্রাম। এবারের সংগ্রাম, স্বাধীনতার সংগ্রাম'।
১০ দিন ব্যাপী স্বাধীনতার সুবর্ণজয়ন্তী ও বন্ধবন্ধুর জন্মশতবার্ষিকীর শেষদিনের অনুষ্ঠানমালার আজ ২৬ মার্চ, শেষদিন। সমাপনী অনুষ্ঠানে প্রধান অতিথি রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদ।
অনুষ্ঠানে আরো উপস্থিত আছেন প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনাসহ বঙ্গবন্ধুর কনিষ্ঠ কন্যা শেখ রেহানা ও জাতীয় সংসদের স্পিকার ড. শিরিন শারমিন চৌধুরীসহ বাংলাদেশ, ভারতসহ বিভিন্ন দেশের উচ্চপর্যায়ের কর্মকর্তারা।
এ অনুষ্ঠান বাংলাদেশ টেলিভিশন, বাংলাদেশ বেতার, দেশের বিভিন্ন বেসরকারি টেলিভিশন চ্যানেল, অনলাইন মিডিয়া এবং স্যোশ্যাল মিডিয়ায় সরাসরি সম্প্রচার করা হচ্ছে।
সন্ধ্যায় ভারতের প্রধানমন্ত্রী বঙ্গবন্ধু আন্তর্জাতিক সম্মেলন কেন্দ্রে প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনার সাথে যৌথভাবে 'বঙ্গবন্ধু-বাপু যাদুঘর' উদ্বোধন করবেন। সেখানে মোদি প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা আয়োজিত রাষ্ট্রীয় ভোজ সভায় যোগ দেবেন।
সফরের দ্বিতীয় দিন শনিবার সকালে নরেন্দ্র মোদি গোপালগঞ্জের টুঙ্গীপাড়ায় জাতির পিতা বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানের সমাধিসৌধ পরিদর্শন এবং পুষ্পস্তবক অর্পণ করে বঙ্গবন্ধুর প্রতি শ্রদ্ধা নিবেদন করবেন।
এরপর গোপালগঞ্জের কাশিয়ানি উপজেলায় ওরাকান্দি মন্দির পরিদর্শন এবং সাতক্ষীরার শ্যামনগরের ঈশ্বরিপুরে অবস্থিত যশোরেশ্বরী দেবী মন্দির পরিদর্শনের কথা রয়েছে।
বিকালে নরেন্দ্র মোদী প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে দ্বিপক্ষীয় বৈঠক করবেন। এ সময় দুই দেশের প্রধানমন্ত্রীর উপস্থিতিতে বিভিন্ন সমঝোতা স্মারক স্বাক্ষর এবং বেশ কয়েকটি প্রকল্পের ভার্চুয়ালি উদ্বোধন করার কথা রয়েছে।
পররাষ্ট্রমন্ত্রী ড. এ কে আবদুল মোমেন জানান, ভারতের প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদির সফরের সময় বাংলাদেশ ও ভারতের মধ্যে পাঁচটিরও বেশি সমঝোতা স্মারক (এমওইউ) সই হওয়ার সম্ভাবনা রয়েছে।
পরে বঙ্গভবনে রাষ্ট্রপতি মো. আবদুল হামিদের সাথে সাক্ষাৎ করবেন ভারতের প্রধানমন্ত্রী।
নরেন্দ্র মোদি ২৭ মার্চ সন্ধ্যায় নয়াদিল্লীর উদ্দেশে ঢাকা ত্যাগ করবেন।