জুমের মাধ্যমে সিঙ্গাপুর আদালতে সাক্ষ্য দিলেন বাংলাদেশি শ্রমিক
সিঙ্গাপুরে নিয়োগকারী সংস্থার বিরুদ্ধে মামলা ঠুকে দিয়েছিলেন বাংলাদেশি নির্মাণ শ্রমিক জনায়েদ (৪৪)। কিন্তু দুর্ঘটনার ফলে চলনে অক্ষম জনায়েদ আরেক দেশের আদালতে উপস্থিত হয়ে সে মামলায় সাক্ষ্য দেবেন কীভাবে!
প্রযুক্তির কল্যাণে এখন তো আর কোন কিছুই অসম্ভব নয়। জনায়েদ তাই বাংলাদেশে নিজের বিছানায় বসেই সিঙ্গাপুরের আদালতে হাজিরা দিলেন!
জনায়েদ জানান, ২০১৮ সালের নভেম্বর মাসে সিঙ্গাপুরের জুরংয়ের ওয়েস্টগেট টাওয়ারে কাজ করার সময় তিনি ৩ মিটার নিচে পড়ে যান। এ দুর্ঘটনায় তিনি পক্ষাঘাতগ্রস্তের শিকার হন।
ফলে কর্মক্ষেত্রে অবহেলা ও অন্যান্য দায়িত্ব লঙ্ঘনের অভিযোগে তিনি চারটি পক্ষের বিরুদ্ধে মামলা করেন: তার আনুষ্ঠানিক নিয়োগকর্তা, নিউটেক ইঞ্জিনিয়ারিং; এসটিএ রিতা ইঞ্জিনিয়ারিং, যারা তাকে ওয়েস্টগেট টাওয়ারে কাজের জন্য ভাড়া করেছিলেন; জো ইন্টারন্যাশনাল, যা এসটিএ রিতা ইঞ্জিনিয়ারিংয়ের সাথে চুক্তিবদ্ধ এবং সে ভবনটির ম্যানেজমেন্ট বা পরিচালনাকারী সংস্থা।
আদালতের সামনে মামলার সহায়ক কিছু নথিপত্রের উপস্থাপন দরকার ছিল। ফলে জনায়েদকে সহায়তা করার জন্য আদালত তার ভাইকে মামলার বিচার চলাকালীন একই ঘরে থাকতে অনুমতি দেন।
মাঝে একবার ১৫ মিনিটের বিরতি দিয়ে পুরো ৩০ মিনিট জনায়েদের সাক্ষ্য গ্রহণ করা হয়। জনায়েদের হয়ে মামলায় প্রতিনিধিত্ব করেন সিঙ্গাপুরের হহ ল' কর্পোরেশনের এন শ্রীনিবাসন এবং ফীবি ওয়াং।
আদালতের প্রক্রিয়া চলার সময় জনায়েদের সাথে একজন বাঙালি দোভাষীও ছিলেন। গত মাসের দু'দিন এবং এ মাসের ২ তারিখ জনায়েদকে হাজিরা দিতে হয়েছে আদালতের সামনে।
অন্য তিন অভিযুক্তরা জনায়েদের অভিযোগের বিরুদ্ধে লড়ে গেলেও নিউটেক ইঞ্জিনিয়ারিং বিচারকার্যে উপস্থিত হতে রাজি হয় নি।
শ্রীনিবাসন জানান, "মাঝে মাঝেই জনায়েদের হৃদস্পন্দন ও রক্তচাপ বেড়ে যেত এবং তার হাত ও পা অনিচ্ছায় কুঁকড়ে যেত।"
জনায়েদের ভাই আদালতকে তার শারীরিক পরিস্থিতি সম্পর্কে অবগত করলে জনায়েদ যোগ না দেয়া পর্যন্ত আদালত কিছুক্ষণের জন্য মুলতবী ঘোষণা করা হত।
জনায়েদ তার দুর্ঘটনার পরে সিঙ্গাপুরের ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হাসপাতালে ৯১ দিন এবং আলেকজান্দ্রা হাসপাতালে ১৫২ দিন কাটান। তার চিকিৎসা ব্যয় আসে প্রায় ২ লাখ ৯৬ হাজার ডলার যা নিউটেক কোম্পানির পরিশোধের কথা ছিল।
এদিকে দুটি হাসপাতালই প্রথমে এই অর্থের জন্য জনায়েদ এবং নিউটেক উভয়ের বিরুদ্ধে মামলা করে; কিন্তু হাসপাতাল দুটির পরিচালনাকারী সংস্থা ন্যাশনাল ইউনিভার্সিটি হেলথ সার্ভিসেস গ্রুপ জানায়, তারা জনায়েদের কাছ থেকে কোন অর্থ নেবেন না ।
- সূত্র: দ্য স্ট্রেইটস টাইমস