চট্টগ্রামে সরকারি-বেসরকারি হাসপাতালে খালি নেই আইসিইউ শয্যা
চট্টগ্রাম শহরে সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলোয় মোট আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ১১০টি। আজ বৃহস্পতিবার (১ এপ্রিল) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, এসব আইসিইউ বেডের একটিও খালি নেই। করোনা ভাইরাসের ঊর্ধ্বগতির সাথে সাথে নগরীতে বাড়ছে আইসিইউ বেডের সংকট।
নগরীর সরকারি প্রধান দুই হাসপাতাল- চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের এবং করোনা রোগীর চিকিৎসায় বিশেষায়িত হলিক্রিসেন্ট হাসপাতালের ৩০টি আইসিইউ'র সবকটিতে রোগী ভর্তি রয়েছে। একই সাথে পার্কভিউ, মেট্রোপলিটন, সিএসসিআর, ডেল্টা হেলথ, মা ও শিশু হাসপাতালে, ম্যাক্স হসপিটাল, ন্যাশনাল হসপিটাল ও মেডিকেল সেন্টারসহ বিভিন্ন বেসরকারি হাসপাতালে আইসিইউ বেড আছে ৮০টি। যার সবকটিতে এই মুহুর্তে রোগী ভর্তি রয়েছে।
চট্টগ্রাম জেনারেল হাসপাতালের সিনিয়র কনসালট্যান্ট ডা. আবদুর রউফ ও চমেক হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশিদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানিয়েছেন, সরকারি এ দুই হাসপাতালের মোট ১৬টি আইসিইউ ও চারটি এইচডিইউর সব কটিতে রোগী ভর্তি রয়েছে।
একই অবস্থা নগরের বেসরকারি হাসপাতালগুলোরও। চট্টগ্রাম বেসরকারি হাসপাতাল ডায়াগনস্টিক ওনার্স অ্যাসোসিয়েশনের সাধারণ সম্পাদক ডা. লিয়াকত আলী জানান, বেসরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রামে ৮০টি আইসিইউ সচল রয়েছে। কিন্তু আজ বৃহস্পতিবার সবটিতে রোগী চিকিৎসাধীন আছেন।
বেসরকারি পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. রেজাউল করিম- দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের হাসপাতালে মোট ৯টি আইসিইউ ও ৯টি এইচডিইউ শয্যা রয়েছে। এখনও আইসিইউ শয্যার অপেক্ষায় আছেন আরও ১০-১৫ জন রোগীর স্বজনরা। মার্চ মাসের মাঝামাঝি থেকে এর সবটিতেই রোগী ভর্তি রয়েছে। এছাড়াও, ৬০ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ডের সবকটিতে রোগী ভর্তি আছে।"
"সর্বশেষ করোনায় আক্রান্ত হয়ে আমাদের হাসপাতালে ভর্তি হয়েছেন চট্টগ্রামের সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি"- যোগ করেন তিনি।
স্বাধীনতা চিকিৎসক পরিষদের (স্বাচিপ) সাংগঠনিক সম্পাদক ডা. আ ম ম মিনহাজুর রহমান বলেন, "আমার পরিচিত একজন রোগী করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত কয়েক দিন ধরে চট্টগ্রামের বেসরকারি একটি হাসপাতালে চিকিৎসাধীন রয়েছেন। হঠাৎ করে শ্বাসকষ্ট বেড়ে যাওয়া ওই রোগীর জন্য তার স্বজনেরা সরকারি হাসপাতালে একটি আইসিইউ সিটের জন্য দৌড়ঝাঁপ করেও সফল হননি। এটিই প্রথম নয়, চলতি মার্চ মাসের বিভিন্ন সময়ে এমন আরও ঘটনা ঘটেছে।"
তবে করোনা আক্রান্ত সিভিল সার্জন ডা. সেখ ফজলে রাব্বি- দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "করোনার চিকিৎসায় আইসিইউ যে অপরিহার্য- তা কিন্তু নয়। করোনায় অক্সিজেন আর হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানোলা সবচেয়ে বেশি দরকার। সেসব ক্ষেত্রে আমাদের পর্যাপ্ত প্রস্তুতি রয়েছে। তবুও পরিস্থিতি যেভাবে বদলাচ্ছে, মানুষকে সচেতন হতেই হবে। বরবরই এই একটা বিষয়ে আমরা জোর দিচ্ছি। সচেতনতার কোনো বিকল্প নেই।"
চট্টগ্রামে করোনা প্রাদুর্ভাব শুরুর পর বেসরকারি পর্যায়ে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশন, রাজনৈতিক নেতা, সমাজকর্মী ও চিকিৎসক নেতারা চট্টগ্রামে সাতটি আইসোলেশন সেন্টার ও একটি ফিল্ড হাসপাতাল প্রতিষ্ঠা করেন। সেসব আইসোলেন সেন্টার ও ফিল্ড হাসপাতালে প্রায় সাড়ে ৭শ' রোগীর চিকিৎসার ব্যবস্থা করা হয়েছিলো। কিন্তু, সংক্রমণ কিছুটা কমে যাওয়ায় গত সেপ্টেম্বর থেকে নভেম্বর মাসের মধ্যে এসব আইসোলেশন সেন্টার ও ফিল্ড হাসপাতাল বন্ধ করার ঘোষণা করা হয়। কিন্তু, গত মার্চ মাসের শুরু থেকে চট্টগ্রামে করোনার ঊর্ধ্বগতি দেখা দিলেও এসব স্বাস্থ্য অবকাঠামো নতুন করে চালুর উদ্যোগ নেওয়া হয়নি।
সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় করোনায় চট্টগ্রামে আরও দুজনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে জেলায় মোট মৃতের সংখ্যা ৩৮৮। এসময়ের মধ্যে করোনা আক্রান্ত হিসেবে শনাক্ত হয়েছেন আরও ২৮৭ জন। শনাক্তের সংখ্যা দাঁড়িয়েছে ৪০ হাজার ২৮৩ জনে।