সক্ষমতার অতিরিক্ত রোগী চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোতে, আইসিইউ-সাধারণ শয্যা সংকট
করোনাভাইরাসের সংক্রমণ বাড়তে থাকায় আক্রান্তদের চিকিৎসা দিতে হিমশিম খাচ্ছে চট্টগ্রামের সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালগুলো। চট্টগ্রামের হাসপাতালগুলোয় মোট আইসিইউ শয্যার সংখ্যা ১১০টি।
বুধবার (৭ এপ্রিল) খোঁজ নিয়ে জানা গেছে, বিশেষ প্রয়োজনে শুধু দুটি আইসিইউ বেড খালি রাখা হয়েছে চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে। বাকি ১০৮ টি আইসিইউ'র সবকটিতে রোগী ভর্তি আছে। এছাড়া হাসপাতাল থেকে হাসপাতাল ঘুরে সাধারণ শয্যাতেও ঠাঁই হচ্ছেনা রোগীদের।
চট্টগ্রাম সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, ৯২ শয্যার চট্টগ্রাম মা ও শিশু হাসপাতালে এই মুহুর্তে ৯৫ জন রোগী ভর্তি আছেন। একই সাথে হাসপাতালটির ১৬ টি আইসিইউ শয্যার সবকটিতে রোগী ভর্তি রয়েছে।
৩২ শয্যার ফৌজদার হাট বিআইটিআইডি হাসপাতালে একটি শয্যাও খালি নেই, ৪৩ শয্যার আলমানহিল নার্চার হাসপাতালে ৩৩ জন ও বেসরকারি ইপোরিয়াল হাসপাতালের ৩৩ শয্যার সবকটিতে রোগী ভর্তি আছেন। শয্যার অতিরিক্ত রোগী ভর্তি আছে নগরের পার্কভিউ হাসপাতালে। হাসপাতালটিতে ৫৬ জন রোগীর চিকিৎসা ব্যবস্থা থাকলেও তারা বিশেষ ব্যবস্থায় ৬২ জন রোগীকে চিকিৎসা দিচ্ছেন।
পার্কভিউ হাসপাতালের ব্যবস্থাপনা পরিচালক ডা. রেজাউল করিম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের হাসপাতালে ৫৬ শয্যার আইসোলেশন ওয়ার্ডে ৬২ জন রোগী ভর্তি আছেন। এছাড়া ৯টি আইসিইউ ও ৯টি এইচডিইউ শয্যার সবকটিতে রোগীরা চিকিৎসা নিচ্ছেন। এখনও আইসিইউ শয্যার অপেক্ষায় আছেন আরও ১০-১৫ জন রোগীর স্বজনরা। অনেকেই একটি আইসিইউ পেতে বারবার ধর্ণা দিচ্ছেন, কিন্তু আমরা অসহায়।"
চট্টগ্রামের করোনা আক্রান্ত রোগীদের চিকিৎসার জন্য প্রথম বিশেষায়িত চিকিৎসাকেন্দ্র জেনারেল হাসপাতাল। আজ বুধবার হাসপাতালটিতে ১০টি আইসিইউ শয্যার একটিও খালি ছিল না। এ ছাড়া ১৪০টি সাধারণ শয্যার ৯০ টিতে রোগী ভর্তি আছেন। প্রায় একই অবস্থা চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের। হাসপাতালটির করোনা বিভাগে ১৮০ জন রোগীর চিকিৎসা সুযোগ থাকলেও এই মুহুর্তে ১৬০ জনের বেশি রোগী ভর্তি আছেন।
জেনারেল হাসপাতাল কোভিড ব্যবস্থাপনার প্রধান বিশেষজ্ঞ চিকিৎসক মো. আবদুর রব দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডকে বলেন, "যে হারে রোগী বাড়ছে, তা উদ্বেগজনক। কোনো আইসিইউ শয্যা খালি নেই। বাধ্য হয়ে তারা সাধারণ শয্যায় ভর্তি হয়ে যাচ্ছেন।"
চমেক হাসপাতালের অ্যানেসথেসিয়া বিভাগের সহযোগী অধ্যাপক ডা. হারুনুর রশিদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ১৮০ জন রোগীর চিকিৎসা সুযোগ থাকলেও আমরা বিশেষ ব্যবস্থায় প্রায় ২০০ রোগীকে সেবা দেওয়ার ব্যবস্থা করেছি। এছাড়া আইসিইউ শয্যা রয়েছে ১০টি। আজ দুপুর পর্যন্ত এখানে রোগী ছিলেন ১৬০ জন। আইসিইউতে ৮ জন রোগী আছেন। দুটি জরুরি প্রয়োজনের জন্য খালি রাখা হয়েছে।"
কিট সংকট নেই, বিদেশগামীদের পরীক্ষা বাড়াচ্ছে নমুনা জট:
করোনা মহামারির শুরুতে চট্টগ্রামে বেশ কয়েক দফায় নমুনা পরীক্ষায় কিট সংকট দেখা দিলেও এবার পরীক্ষাগারগুলোতে কিট সংকট নেই। তবে প্রতিদিন প্রায় দেড় হাজার প্রবাসগামীদের নমুনা পরীক্ষার কারণে চট্টগ্রামের সাধারণ নাগরিকরা পরীক্ষার ফল পেতে দুর্ভোগ পোহান। অনেক ক্ষেত্রে নমুনা দেওয়ার ৭২- ৯৬ ঘন্টা পরও রিপোর্ট না পাওয়ার অভিযোগ রয়েছে।
চট্টগ্রামের বিভাগীয় স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. হাসান শাহরীয়ার কবির বিষয়টি স্বীকার করে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "প্রতিদিন প্রায় হাজার থেকে ষোল'শ প্রবাসগামী তাদের নমুনা জনা দেন। সব মিলিয়ে প্রতিদিন আমরা আড়াই হাজার- তিন হাজার নমুনা পরীক্ষা করি। প্রবাসগামীদের অধিকাংশের ফল নেগেটিভ আসে। এ হিসেব বাদ দিলে চট্টগ্রামে করোনা আক্রান্তের হার আরও বেশি হবে।"
তিনি বলেন, 'প্রবাসগামীদের এই বাড়তি চাপের কারণে প্রতিদিনের রিপোর্ট প্রতিদিন দেওয়া সম্ভব হয়না। অনেক ক্ষেত্রে ৪৮ ঘন্টারও বেশি সময়ের প্রয়োজন হয় সাধারণ নাগরিকদের ফলাফল জানাতে।'
বাংলাদেশ ইনস্টিটিউট অব ট্রপিকাল এন্ড ইনফেকশাস ডিজিজেসের (বিআইটিআইডি) ল্যাবরেটরি ইনচার্জ অধ্যাপক ডা. শাকিল আহমেদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, "আমাদের সক্ষমতা রয়েছে পাঁচশ নমুনা পরীক্ষার, কিন্তু বাধ্য হয়ে হাজারের উপর নমুনা পরীক্ষা করতে হয়। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ, চট্টগ্রাম ভ্যাটেনারি বিশ্ববিদ্যালয় বা চট্টগ্রাম বিশ্ববিদ্যালয় ল্যাব; সবখানেই একই অবস্থা। তারপরও এবার এখনো বড় ধরনের নমুনা জটের সৃষ্টি হয়নি। রিপোর্ট পেতে হয়তো কিছুটা দেরি হচ্ছে।"
চট্টগ্রামে সর্বশেষ ২৪ ঘণ্টায় নতুন করে ৪১৪ জন করোনা ভাইরাসে আক্রান্ত হয়েছেন। চট্টগ্রামে মোট করোনা আক্রান্ত রোগীর সংখ্যা ৪২ হাজার ৭১৫ জন। নতুন করে গতকাল করেনায় ৩ জনের মৃত্যু হয়েছে। এনিয়ে করোনায় চট্টগ্রামে মোট ৪০০ জনের মৃত্যু হলো।