বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার নিষেধাজ্ঞা সত্ত্বেও বাংলাদেশে কোভিড চিকিৎসায় রেমডিসিভির ব্যবহার
গত বছরের ১৯ নভেম্বর, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা ( ডব্লিউএইচও) জানায়, অ্যান্টিভাইরাল ড্রাগ রেমডিসিভির ব্যবহারের ফলে করোনায় মৃত্যুহার কমেছে, এমন কোনও তথ্য পাওয়া যায়নি।
রেমডিসিভির ব্যবহার না করার জন্য ডব্লিউএইচও এর সুপারিশ সত্ত্বেও বাংলাদেশে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসায় অহরহ রেমডিসিভির ব্যবহার করা হচ্ছে।
চিকিৎসকেরা বলছেন, রোগের প্রাথমিক পর্যায়ে রেমডিসিভির ব্যবহার করলে অনেক সময় ভালো ফল পাওয়া যায়। এছাড়া রেমডিসিভির দেশীয় ওষুধ কোম্পানির উৎপাদিত ওষুধ বলে অনেক সময় ওষুধ কোম্পানিগুলোর 'পুশ সেলিং' বিক্রয় কৌশলের কারণে ও রোগীদের স্বজনদের চাপেও রেমডিসিভির ব্যবহার করেন চিকিৎসকেরা।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা রেমডিসিভির নিয়ে নিজেদের গবেষণা প্রতিবেদনের ফল তুলে ধরে জানায়, করোনার চিকিৎসায় রেমডিসিভিরের কার্যকারিতা নেই বললেই চলে।
বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার গবেষণার ওই ট্রায়ালে বিশ্বের ৩০টি দেশের ১১ হাজার ২২৬ জন প্রাপ্তবয়স্ক করোনা রোগীর ওপর রেমডিসিভির, হাইড্রোক্সিক্লোরোকুইন এবং এইচআইভি প্রতিরোধের ওষুধ প্রয়োগ করা হয়। ট্রায়ালে দেখা যায়, রেমডিসিভির ওষুধটি ব্যবহারের পর রোগীদের মৃত্যুঝুঁকি কমেনি।
বাংলাদেশে প্রতি ভায়াল রেমডিসিভিরের দাম ৫ থেকে ৬ হাজার টাকা। একেকজন রোগীকে ৫ থেকে ১০টি ভায়াল দেয়া হয়। এতে রেমডিসিভিরে রোগীর ব্যয় ৬০ হাজার টাকার বেশি হয়।
ঢাকার মুগদা জেনারেল হাসপাতালের আইসিইউয়ের অ্যানাস্থেসিওলজিস্ট ডা. অনিরুদ্ধ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'কোভিড-১৯ চিকিৎসায় এখনো অক্সিজেন ও ব্লাড থিনার ছাড়া নির্দিষ্ট কোন ওষুধ নেই। রেমডিসিভির সাধারণত ব্যবহার করা হয় না। রোগীর প্রাথমিক পর্যায়ে ভাইরাল লোড যখন বাড়তে থাকে তখন রেমডিসিভির ব্যবহার করলে ভালো ফল পাওয়া যায়'।
ডা. অনিরুদ্ধ বলেন, 'আমরা ডব্লিউএইচও ও স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের প্রটোকল অনুযায়ী রোগীদের চিকিৎসা দিচ্ছি। তারপরও অনেক সময় রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী রেমডিসিভির ব্যবহার করা হয়। ডব্লিউএইচও কিছু দিন পর পর প্রটোকল পরিবর্তন করে; ডব্লিউএইচও এর প্রটোকলে নেই এমন ওষুধ ব্যবহার করেও আমরা ভালো ফল পাচ্ছি'।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক একজন আইসিইউ বিশেষজ্ঞ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'আমাদের দেশে অহরহ রেমডিসিভির ব্যবহার করা হয়। ওষুধটি দেশীয় কোম্পানিগুলো উৎপাদন করে তাই পুশ সেলিংয়ের কারণে অনেক সময় অপ্রয়োজনেও এটি ব্যবহার করা হচ্ছে। এমনকি অনেক সময় রোগীর স্বজনেরাও ওষুধটি দিতে বলে। মিডিয়ার কল্যাণে সবাই রেমডিসিভিরের নাম জানে তাই রোগীর অবস্থার অবনতি হলেই স্বজনেরা রেমডিসিভির দিতে বলে'।
চিকিৎসকেরা বলেন, কোভিড চিকিৎসার জন্য মৌলিক প্রটোকল অনুসরণ করা হয়। কোন রোগীকে কখন অক্সিজেন, স্টেরয়েড দেয়া হবে তা সেভাবেই মানা হয়। তবে গাইডলাইনের বাইরে গিয়েও অনেক সময় রোগীর প্রয়োজন অনুযায়ী চিকিৎসা দেয়া হয়।
বাংলাদেশ ফার্মাকোলজিকাল সোসাইটির চেয়ারম্যান অধ্যাপক মো. সায়েদুর রহমান টিবিএসকে বলেন, 'ডব্লিউএইচও এর প্রটোকল ভলান্টিয়ারি বা ঐচ্ছিক প্রটোকল। সবাই এটি মানতে বাধ্য থাকবে তা নয়। রেমডিসিভির ব্যবহারের ক্ষেত্রে টাইমিং অনেক জরুরি। চিকিৎসকেরা যদি রোগীর উপকারের জন্য কোন ওষুধ ব্যবহার করে তাহলে কোন সমস্যা নেই'।