জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার বন্ধের আহ্বান দালাই লামাসহ ১০০ নোবেলবিজয়ীর
প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন কর্তৃক আয়োজিত ভার্চুয়াল সম্মেলনে যোগ দিতে আসা বিশ্বের ক্ষমতাধর নেতৃবৃন্দের প্রতি জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার না করার ওপর গুরুত্ব দেওয়ার আহ্বান জানিয়েছেন দালাই লামাসহ আরও ১০০ জন নোবেলবিজয়ী।
মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন ও বৃহস্পতিবারের সম্মেলনে যোগ দিতে যাওয়া নেতৃবৃন্দকে চিঠি দিয়েছেন মোট ১০১ জন নোবেল বিজয়ী। জলবায়ু পরিবর্তন রোধে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহার কমিয়ে আনার পদক্ষেপ নেওয়ার আহ্বান জানান তারা।
চিঠিটিতে বলা হয়, 'শিল্প বিপ্লবের পর থেকে জীবাশ্ম জ্বালানির ব্যবহারই ৮০ শতাংশ কার্বন-ডাই অক্সাইড নির্গমনের জন্য দায়ী। তাই এর প্রসার ঘটতে দেওয়া একেবারেই অযৌক্তিক কাজ।'
চিঠিতে স্বাক্ষরকারীরা এও পরিষ্কার জানিয়ে দিয়েছেন, শিল্প নয়, বরং নেতারাই মূল ক্ষমতার মালিক। তাই এই সংকট নিরসনে এগিয়ে আসা তাদের নৈতিক দায়িত্ব।
বিশ্ব নেতৃবৃন্দের এই মুহূর্তে ৩ টি পদক্ষেপ নেয়া দরকার বলে নোবেল বিজয়ীরা জানান। এর মধ্যে রয়েছে তেল, গ্যাস ও কয়লা উৎপাদনের আর প্রসার না ঘটানো, বর্তমান জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন ন্যায্য উপায়ে কমিয়ে আনা এবং নবায়নযোগ্য শক্তি উৎপাদনে পূর্ণ বিনিয়োগ করা।
চিঠিতে আরও বলা হয়, 'নির্গমনের মূল উৎসগুলো ছাড়াও স্থানীয় পর্যায়ে আরো অনেক দূষণ হয়ে থাকে। এর মধ্যে রয়েছে জীবাশ্ম জ্বালানি আহরণ, পরিশোধন, পরিবহণ ও পোড়ানো সম্পর্কিত পরিবেশগত ও স্বাস্থ্যগত ব্যয়।'
জীবাশ্ম জ্বালানির প্রসার-রোধ উদ্যোগ কমিটির সঙ্গে সমন্বিতভাবে লেখা এই চিঠিতে স্বাক্ষর করেছেন বিশ্বের বিশিষ্ট বিজ্ঞানী, শান্তিস্থাপক ও লেখকরা।
স্বাক্ষরকারীদের এই তালিকার মধ্যে রয়েছেন ১৯৯৭ সালে ল্যান্ডমাইন নিষিদ্ধকরণ ক্যাম্পেইনের জন্য নোবেল বিজয়ী জোডি উইলিয়ামস, নারী অধিকার কর্মী ও ২০১১ সালে শান্তিতে নোবেল বিজয়ী লেইমাহ বোয়ী, ২০১৮ তে রসায়নে নোবেল বিজয়ী ফ্রান্সেস এইচ আর্নল্ড , ২০০৫ সালে সাহিত্যে নোবেল বিজয়ী আলফ্রিড জেলিনেক এবং ২০১০ সালে অর্থনীতিতে নোবেল বিজয়ী ক্রিস্টোফার পিসারিডস।
জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে আনার আহ্বান এবারই প্রথম নয়। জাতিসংঘের ভাষ্যে, মানবসৃষ্ট জলবায়ু পরিবর্তন বিপর্যয় কমাতে চাইলে এমন পদক্ষেপ নিতেই হবে।
২০১৫ সালের প্যারিস জলবায়ু প্রণোদনার লক্ষ্য ছিল ২ ডিগ্রি সেলসিয়াসের নিচে উষ্ণায়ন সীমাবদ্ধ রাখা।
এই লক্ষ্য পূরণে ২০২০ থেকে ২০৩০ সালের মধ্যে প্রতি বছর বিশ্বে জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদন কমাতে হবে অন্তত ৬ শতাংশ। কিন্তু সাম্প্রতিক অভিক্ষেপে দেখা গেছে এর মাত্রা উল্টো ২ শতাংশ বেড়ে গিয়েছে।
গতবছর জাতিসংঘ জানিয়েছিল, ২০৩০ সালের মধ্যে পৃথিবী আরও ১২০ শতাংশ বেশি জীবাশ্ম জ্বালানি উৎপাদনের পথে হাঁটছে।
গতবছর যদিও মহামারির ফলে বৈশ্বিক গ্রিনহাউজ গ্যাস উৎপাদন সামান্য কমেছিল, কিন্তু ইন্টারন্যাশনাল এনার্জি এজেন্সির এ সপ্তাহে দেওয়া তথ্যমতে, তা আবারও আগের অবস্থানে ফিরে এসেছে।
প্রতিবেদনটিতে বলা হয়, শক্তি ব্যবহারের ফলে কার্বন নির্গমনের পরিমাণ ২০২১ সালের মধ্যেই ১ দশমিক ৫ বিলিয়ন টনে চলে আসবে। এর কারণ এশিয়ায়, বিশেষত চীনে অতিমাত্রায় কয়লা ব্যবহার। আর এটিই হবে কার্বন নির্গমনের ইতিহাসে দ্বিতীয় সর্বোচ্চ বার্ষিক বৃদ্ধি।
চিঠির লেখকরা জানিয়েছেন, প্যারিস চুক্তি বাস্তবায়ন প্রচেষ্টা ও জীবাশ্ম জ্বালানি ব্যবহার কমিয়ে আনা অসম্ভব হয়ে যাবে যদি এর সরবরাহ এ হারে বাড়তেই থাকে।
তাদের মতে, জীবাশ্ম জ্বালানি প্রক্রিয়াটি বৈশ্বিক এবং এর বৈশ্বিক সমাধানই দরকার, জলবায়ু সম্মেলনের নেতৃবৃন্দের দিতে হবে বলে জানান তারা। আর এর প্রথম পদক্ষেপই হলো জীবাশ্ম জ্বালানিকে মাটিতেই রাখা।
- সূত্র: সিএনএন