আর্মেনীয় হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যার স্বীকৃতি দিলেন মার্কিন প্রেসিডেন্ট
যুক্তরাষ্ট্রের প্রথম প্রেসিডেন্ট হিসেবে ১৯১৫ সালে অটোমান সাম্রাজ্যের বিরুদ্ধে আর্মেনীয় হত্যাকাণ্ডের অভিযোগকে গণহত্যার স্বীকৃতি দিলেন জো বাইডেন।
তবে যুক্তরাষ্ট্রের এ ঘোষণা সরাসরি প্রত্যাখ্যান করেছে তুরস্ক।
তুরস্কের পররাষ্ট্রমন্ত্রী মেভলুত চাভুসোওগলু গতকাল শনিবার বলেন, তুরস্ক যুক্তরাষ্ট্রের এ সিদ্ধান্তের সম্পূর্ণ বিরোধিতা করছে। তিনি বলেন, 'আমাদের ইতিহাসের বিষয়ে কারও কাছ থেকে শিখব না আমরা।'
পরে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় জানায়, আঙ্কারার 'তীব্র প্রতিক্রিয়া' জানাতে তারা যুক্তরাষ্ট্রের রাষ্ট্রদূতকে ডেকে পাঠিয়েছে।
মার্কিন যুক্তরাষ্ট্রের আগের কোন প্রশাসন ন্যাটো সহযোগী তুরস্কের সাথে বিবাদমান সম্পর্কে জড়িয়ে পড়ার উদ্বেগ থেকে আনুষ্ঠানিক বিবৃতিতে গণহত্যা প্রত্যয়টি ব্যবহার করেনি।
আর্মেনীয় গণহত্যা স্মরণে প্রকাশিত বাইডেনের বিবৃতিতে বলা হয়, "অটোমান-যুগের আর্মেনিয়ান গণহত্যায় যারা নিহত হয়েছেন, আমরা তাদের প্রত্যেককে স্মরণ করছি এবং প্রতিশ্রুতিবদ্ধ হচ্ছি যেন এ ধরনের নৃশংসতার কোনরূপ পুনরাবৃত্তি না ঘটে"।
"আমরা এটিও স্মরণে রাখব যেন এ ধরনের ঘৃণ্য প্রভাবের বিরুদ্ধে আমরা সর্বদা সচেতন থাকি"।
কাউকে দোষারূপ করা নয়, বরং যা হয়ে গেছে সেটির পুনরাবৃত্তি ঠেকানোই তার উদ্দেশ্য বলে বাইডেন নিজের বক্তব্য স্পষ্ট করেন।
এর আগেও, ২০১৯ সালে মার্কিন প্রতিনিধি পরিষদে এ গণহত্যাকে স্বীকৃতির দাবিতে একটি বিল গৃহীত হলে সেসময় ডেমোক্র্যাট দলের মনোনয়নপ্রত্যাশী বাইডেন সেটিকে স্বাগত জানান।
বাইডেন প্রশাসনের একজন কর্মকর্তা সাংবাদিকদের জানান, মানবাধিকারের প্রতি দৃষ্টি নিবদ্ধ করতেই প্রশাসন এই প্রত্যয়টি আনুষ্ঠানিকভাবে ব্যবহারের সিদ্ধান্ত নিয়েছে।
আর্মেনীয় হত্যাকাণ্ড নিয়ে হোয়াইট হাউস কয়েক দশক ধরেই সতর্ক ভাষা ব্যবহার করে আসছিল। ১৯৮১ সালে তৎকালীন রাষ্ট্রপতি রোনাল্ড রিগান হলোকাস্টের এক ঘোষণায় 'আর্মেনিয়ান গণহত্যার' উল্লেখ করলেও অন্যরা এই শব্দটি ব্যবহার থেকে বিরত থাকেন।
বাইডেনের পূর্বসূরি ডোনাল্ড ট্রাম্পের প্রশাসনও এই হত্যাকাণ্ডকে গণহত্যা হিসেবে বিবেচনা করেনি। পরিবর্তে ট্রাম্প একে 'বিংশ শতাব্দীর সবচাইতে ভয়াবহতম নৃশংসতার একটি' বলে আখ্যায়িত করেন।
বাইডেনের ঘোষণায় প্রতিক্রিয়া
আর্মেনিয়ার প্রধানমন্ত্রী নিকোল প্যাসিনিয়ান বাইডেনের এই উদ্যোগকে স্বাগত জানিয়েছেন। প্রেসিডেন্ট জো বাইডেনের উদ্ধৃতি আর্মেনীয়দের 'স্মৃতিকে সম্মানীত করেছে' উল্লেখ করে টুইটে প্যাসিনিয়ান বলেন, "মার্কিন যুক্তরাষ্ট্র আরেকবার মানবাধিকার এবং সর্বজনীন মূল্যবোধ রক্ষায় তার দৃঢ় প্রতিশ্রুতি প্রদর্শন করেছে"।
তবে ক্ষুব্ধ প্রতিক্রিয়া জানিয়েছে তুর্কি পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয়। বাইডেনের বিবৃতিকে 'কঠোর ভাষায় প্রত্যাখ্যান ও নিন্দা' জানিয়ে তারা বলে, "উগ্র আর্মেনিয়ান চক্র এবং তুরস্কবিরোধী গোষ্ঠীর চাপে এ উদ্যোগ গৃহীত হয়েছে"।
সেই সাথে তুরস্কের পররাষ্ট্র মন্ত্রণালয় সতর্ক করে বলেছে, এই পদক্ষেপ 'একটি গভীর ক্ষতের সৃষ্টি করবে যা তাদের পারস্পরিক বিশ্বাস এবং বন্ধুত্বকে দুর্বল করে তুলবে'।
ওয়াশিংটনের এ আনুষ্ঠানিক স্বীকৃতি দুই ন্যাটো সহযোগের মধ্যে সম্পর্কের আরও অবনতি ঘটাবে বলেই এ মুহূর্তে পর্যবেক্ষকরা আশঙ্কা করছেন।
- সূত্র-বিবিসি