কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট কর্মকর্তাদের বিরুদ্ধে হয়রানির অভিযোগ বিজিএমইএ'র
চট্টগ্রামের রপ্তানিমুখী তৈরী পোষাক শিল্প কারখানার মালিকরা কারখানার পণ্য চালান স্থানান্তর, অতিরিক্ত গুদাম ব্যবহার অনুমোদন, অডিট কার্যক্রমসহ রপ্তানি প্রক্রিয়ায় নানামুখী হয়রানির শিকার হচ্ছেন বলে অভিযোগ করেছেন। কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা নতুন নতুন নিয়ম প্রবর্তন করে পোষাক শিল্প মালিকদের হয়রানি করছেন বলে বিজিএমইএ'র পক্ষ থেকে বন্ড কমিশনারকে চিঠিও দেয়া হয়েছে। এমন পরিস্থিতিতে দেশের প্রধান রপ্তানি খাত তৈরী পোষাক শিল্প রপ্তানি বিপর্যয়ের মুখে পড়বে চলে আশংকা সংশ্লিষ্টদের।
অন্যদিকে কাস্টম বন্ড কমিশনারেট বলছে অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে জরিমানা ও শাস্তির মুখোমুখি হওয়া কিছু প্রতিষ্ঠান এসব ভিত্তিহীন অভিযোগ তুলছে।
এদিকে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট কর্মকর্তাদের হয়রানির বিষয়ে গত ১৮ ফেব্রুয়ারি বিজিএমইএ'র তৎকালীন প্রথম সহ-সভাপতি মোহাম্মদ আবদুস সালাম কাস্টমস বন্ড কমিশনারকে চিঠি দিয়েছিলেন। ওই চিঠিতে উল্লেখ করা হয়, পোষাক শিল্প সমূহ রপ্তানি আদেশ প্রাপ্তির পরবর্তীতে বিদেশী ক্রেতার নির্দেশনা অনুযায়ী তৈরী পোষাক সমূহ ওয়াশিং ও এমব্রয়ডারি করণের জন্য ইনল্যান্ড, এলসি বা চুক্তিপত্রের ভিত্তিতে চালানের মাধ্যমে বিভিন্ন ওয়াশিং ও এমব্রয়ডারি কারখানায় রপ্তানিযোগ্য পণ্য চালান পাঠানো হয়। ইদানিং রপ্তানিযোগ্য চালান সমূহ প্রেরণকালে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামের কর্মকর্তা কর্তৃক আটক করে বিভিন্ন দলিলাদি যাচাই বাছাই পূর্বক সংক্ষিপ্ত বিচারাদেশের মাধ্যমে উচ্চ হারে জরিমানা করা হচ্ছে। এর ফলে নির্ধারিত সময়সীমার মধ্যে পণ্য চালান রপ্তানি ব্যাহত হয়ে সংকটের মুখোমুখি হতে হচ্ছে। যা বর্তমান সংকটময় পরিস্থিতিতে কোনভাবেই কাম্য নয়।
বিজিএমইএ'র নব-নির্বাচিত প্রথম সহ-সভাপতি সৈয়দ নজরুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামের কর্মকর্তারা চট্টগ্রামের পোষাক শিল্প মালিকদের বিভিন্নভাবে হয়রানি করছে। বন্ড কর্মকর্তাদের অহেতুক হয়রানির শিকার কারখানা মালিকরা প্রতিনিয়ত আমাদের কাছে অভিযোগ নিয়ে আসছে। এসব বিষয়ে বিজিএমইএ'র পক্ষ থেকে বন্ড কমিশনারকে লিখিতভাবে জানানো হলেও কোন সুরাহা হয়নি।
তিনি আরো বলেন, করোনার কারণে গত ১ বছর ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে রীতিমতো সংগ্রাম করছে পোষাক শিল্প মালিকরা। এর মধ্যে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেটের কর্মকর্তাদের অহেতুক হয়রানির কারণে সংকট আরো প্রকট হয়ে উঠেছে। এই অবস্থা চলতে থাকলে রপ্তানি মারাত্মকভাবে বাধাগ্রস্থ হবে। জাতীয় অর্থনীতিতে এর নেতিবাচক প্রভাব পড়বে; যা বর্তমান পরিস্থিতিতে কোনভাবেই কাম্য নয়।
ভুক্তভোগী একজন পোষাক কারখানা মালিক নাম প্রকাশ না করার শর্তে দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বিদেশী ক্রেতা জোটের কমপ্লায়েন্স প্রতিপালনের জন্য বাধ্য হয়ে চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় কারখানা স্থানাস্তরের সিদ্ধান্ত নিই । এই বিষয়ে অনুমোদনের জন্য চট্টগ্রাম কাস্টম্স বন্ড কমিশনারেট কার্যালয়ে আবেদন করা হলে গত ৪ মাসেও এ বিষয়ে কোন সিন্ধান্ত দেওয়া হয়নি। অন্যদিকে ঢাকার আশুলিয়ায় নতুন কারখানার ভাড়া বাবদ আমাকে প্রতি মাসে ২০ লাখ টাকা গুনতে হচ্ছে। পূর্বের কমিশনার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় একাধিক কারখানা স্থানান্তরের অনুমোদন দিলেও বর্তমান কমিশনার কেন অনুমোদন দিচ্ছেনা তা বোধগম্য নয়। কারখানা স্থানান্তরের অনুমতি পেতে বন্ড কমিশনারেটের অহেতুক হয়রানির কারণে আমি আর্থিকভাবে ক্ষতিগ্রস্ত হচ্ছি।
বিজিএমইএ চট্টগ্রাম অঞ্চলের নতুন নির্বাচিত পর্ষদ জানিয়েছেন, বন্ড কমিশনারেট কর্মকর্তাদের কার্যক্রম সম্পাদনে দীর্ঘসূত্রিতা ও জটিলতায় চট্টগ্রামের পোষাক শিল্প খাতে চরম অনিশ্চয়তা তৈরী হয়েছে। কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট এর কমিশনার হিসেবে ২৬ জানুয়ারী দায়িত্ব গ্রহণের পর পোশাক শিল্পসহ অন্যান্য জেনারেল বন্ড, প্রচ্ছন্ন রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠানে বিভিন্ন নতুন নতুন নিয়ম প্রবর্তন করায় পোষাক শিল্প মালিকদের অতিরিক্ত অর্থ ব্যয় ও জটিলতা সৃষ্টি হচ্ছে। বর্তমানে গার্মেন্টস ব্যবসায়ীরা তৈরী পোশাকের ওয়াশিং, এমব্রয়ডারী ও প্রিন্টিং-এর লক্ষ্যে পণ্য চালান স্থানান্তরে, কারখানা সম্প্রসারণ, স্থানান্তর এবং অতিরিক্ত গুদাম ব্যবহার অনুমোদনে সময়ক্ষেপন, অডিট কার্যক্রম অনুমোদনে অতিরিক্ত অর্থ দাবী সহ নানামুখী হয়রানির শিকার হচ্ছে কারখানা মালিকরা।
বিজিএমইএ চট্টগ্রাম অঞ্চলের একজন কর্মকর্তা জানান, পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠানের বাৎসরিক অডিট কার্যক্রম অনুমোদনে বর্তমানে নির্ধারিত দলিলাদি যাচাই-বাছাই ছাড়াও আমদানি ও রপ্তানি চালানের ওজন পরীক্ষা করা হচ্ছে। এ'ছাড়াও বিভিন্ন পর্যায়ে তথ্য উপাত্ত পুনঃযাচাই-বাছাইয়ে সময়ক্ষেপণ ও দীর্ঘসূত্রিতার সৃষ্টি হচ্ছে। ফলে সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানসমূহ অডিট সম্পাদনে আগ্রহ হারিয়ে ফেলছে। পূর্বে অডিট কার্যক্রম অনুমোদনে সর্বোচ্চ ৮০ থেকে ৯০ হাজার টাকা ব্যয় হত, বর্তমানে তা অতিরিক্ত হারে বৃদ্ধি পেয়ে ২ থেকে আড়াই লক্ষ টাকা পর্যন্ত ব্যয় হচ্ছে। এক্ষেত্রে ঊর্ধতন কর্মকর্তাদের বাধ্য হয়ে মোটা অংকের ঘুষ দিতে হচ্ছে পোষাক শিল্প মালিকদের।
বিজিএমইএ সূত্র জানায়, বর্তমান পরিস্থিতিতে প্রায় চার বিলিয়ন ডলারের রপ্তানী আদেশ বাতিল এবং স্থগিত হয়েছে। চট্টগ্রামে এর পরিমান প্রায় এক বিলিয়ন মার্কিন ডলার। করোনা পরিস্থিতিতে এ' পর্যন্ত ঢাকাতে ২৮১টি এবং চট্টগ্রামে ৩০টি পোশাক শিল্প প্রতিষ্ঠান বন্ধ হয়েছে। পোশাক শিল্পের বর্তমান এই সংকটময় পরিস্থিতি উত্তরণে বন্ড সংশ্লিষ্ট কার্যক্রম সহজীকরণের মাধ্যমে দ্রুত অনুমোদন প্রদান করে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট, চট্টগ্রাম রপ্তানি বৃদ্ধির ক্ষেত্রে গুরুত্বপূর্ণ ভূমিকা পালন করতে পারে।
এই বিষয়ে কাস্টমস বন্ড কমিশনারেট চট্টগ্রামের কমিশনার মাহবুবুর রহমান বলেন, ঢালাওভাবে অভিযোগের কোন সুযোগ নেই। পোষাক শিল্প মালিকদের হয়রানির সুনির্দিষ্ট কোন অভিযোগ থাকলে তা অবশ্যই বিবেচনায় আনা হবে।
চট্টগ্রাম থেকে কারখানা স্থানান্তরের হয়রানি প্রসঙ্গে মাহবুবুর রহমান বলেন, পূর্বের একজন কমিশনার চট্টগ্রাম থেকে ঢাকায় কারাখানা স্থানান্তরের অনুমতি দিয়েছিলেন। কিন্তু এক্ষেত্রে কিছু আইনগত বাধ্যবাধকতা আছে। অনিয়মের আশ্রয় নিয়ে জরিমানা এবং শাক্তির মুখোমুখি হওয়া কিছু প্রতিষ্ঠান হয়রানির অভিযোগ তুলতে পারে।