টানা ৫৮ দিন পর স্বাভাবিক হচ্ছে বুয়েট, আন্দোলনের সমাপ্তি
আবরার ফাহাদ হত্যার প্রতিবাদে টানা ৫৮ দিন আন্দোলন-সংগ্রামের পর অবশেষে বাংলাদেশ প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে (বুয়েট) শিক্ষার্থীদের চলমান আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করা হয়েছে।
বুধবার (৪ ডিসেম্বর) এই সমাপ্ত ঘোষণা করেন শিক্ষার্থীরা। বিশ্ববিদ্যালয়ের শহীদ মিনারে অনুষ্ঠিত এক সংবাদ সম্মেলনে আন্দোলনরত শিক্ষার্থীদের এক মুখপাত্র মো. সায়েম বলেন, “আমাদের সব দাবি-দাওয়া পূরণ করায় আমরা বিশ্ববিদ্যালয়কে ধন্যবাদ জানাই। আমাদের আর কোনো দাবি-দাওয়া নেই। এখন থেকে আমরা আমাদের সমস্ত আন্দোলন সংগ্রামের সমাপ্তি ঘোষণা করছি।”
এছাড়া এই আন্দোলনের সফলতার জন্য বিশ্ববিদ্যালয়ের শিক্ষক, কর্মকর্তা-কর্মচারী, শিক্ষার্থী এবং গণমাধ্যমকর্মীদেরও ধন্যবাদ জানান তিনি।
সায়েম বলেন, "আজ আমরা প্রশাসনের সঙ্গে কথা বলেছি। তারা সবসময় শিক্ষার্থীদের সঙ্গে আছেন বলে আমাদের আশ্বস্ত করেছেন। তাদের আশ্বাসে আমাদের আস্থা আছে।”
আগামী ২৮ ডিসেম্বরে অনুষ্ঠিতব্য টার্ম ফাইনাল পরীক্ষায় তারা অংশগ্রহণ করবেন বলেও জানান তিনি। আবরার হত্যাকারীদের সাজা দ্রুত কার্যকর হবে বলেও আশা প্রকাশ করেন শিক্ষার্থীদের এ মুখপাত্র।
এই আন্দোলনের আরেক মুখপাত্র তিথি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে জানান, শিক্ষার্থীরা পরীক্ষায় অংশগ্রহণ করতে প্রস্তুত।
নিরাপদ ক্যাম্পাসের দাবিতে দীর্ঘসময় আন্দোলনের জন্য শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানান বুয়েট শিক্ষক সমিতির সভাপতি অধ্যাপক ড. একেএম মাসুদ। তিনি বলেন, “শিক্ষার্থীদের আন্দোলন যৌক্তিক। তাদের এই অক্লান্ত এবং নিরবচ্ছিন্ন আন্দোলনের জন্য আমি তাদেরকে ধন্যবাদ জানাই।”
এ ছাড়া শিক্ষার্থীদের আবেগ ও অনুভূতিকে উপলব্ধি করায় বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষকেও ধন্যবাদ জানান অধ্যাপক মাসুদ।
বুয়েটের শিক্ষার্থী কল্যাণ সংগঠনের পরিচালক অধ্যাপক মিজানুর রহমান বলেন, “আন্দোলনের সমাপ্তি ঘোষণা করায় আমরা শিক্ষার্থীদের ধন্যবাদ জানাই। শিক্ষার্থীদের সমস্ত দাবি দাওয়া আমরা পূরণ করেছি। বুয়েট ক্যাম্পাসে কোনো ধরনের অপ্রীতিকর ঘটনা ঘটুক আমরা চাই না। সাধারণ শিক্ষার্থীদের স্বার্থে সবকিছু করতে আমরা প্রস্তুত আছি।”
ভারতের সঙ্গে চুক্তির বিরোধিতা করে ৫ অক্টোবর শনিবার বিকালে সামাজিক যোগাযোগমাধ্যম ফেসবুকে একটি স্ট্যাটাস দেন ফাহাদ। এর জের ধরে ৬ অক্টোবর রাতে শেরেবাংলা হলের নিজের ১০১১ নম্বর কক্ষ থেকে তাকে ডেকে নিয়ে ২০১১ নম্বর কক্ষে বেধড়ক পেটানো হয়। এতে ঘটনাস্থলেই তার মৃত্যু হয়। পিটুনির সময় নিহত আবরারকে ‘শিবিরকর্মী’ হিসেবে চিহ্নিত করার চেষ্টা চালায় খুনিরা। এ ঘটনার পর থেকে বুয়েটে ক্লাস-পরীক্ষা বর্জন করছেন শিক্ষার্থীরা।
এ ঘটনায় মামলা দায়ের করেন আবরারের বাবা। এই মামলায় গত ১৩ নভেম্বর আদালতে অভিযোগপত্র জমা দেয় পুলিশ৷
আবরার হত্যায় অভিযোগপত্রে নাম আসা ছাত্রদের বুয়েট থেকে স্থায়ীভাবে বহিষ্কার, র্যাগিংয়ের ঘটনাগুলোতে জড়িতদের বিচার ও শাস্তি এবং সাংগঠনিক ছাত্র রাজনীতি ও র্যাগিংয়ের জন্য সুস্পষ্টভাবে শাস্তির নীতিমালা প্রণয়ন করায় তাদের তিনটি দাবিই পূরণ হয়েছে। এরপরই বুধবার এ ঘোষণা দেন আন্দোলনকারী শিক্ষার্থীরা।