দক্ষিণ এশিয়ায় বাড়ছে সংক্রমণ, ব্যতিক্রম শুধু বাংলাদেশ
দক্ষিণ এশিয়ার দেশ ভারত ও নেপালে আশঙ্কাজনকহারে বাড়ছে কোভিড আক্রান্তের সংখ্যা। উপমহাদেশের অন্যান্য দেশেও দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে কোভিড-১৯ সংক্রমণ। তবে, আশ্চর্যজনক হলেও এক্ষেত্রে ব্যতিক্রম কেবল বাংলাদেশে।
হিন্দুস্থান টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, বিশ্বের দ্বিতীয় জনবহুল দেশ ভারতে শুক্রবার ২৪ ঘন্টায় চার লাখ ১৪ হাজার ১৪৪ জন কোভিড আক্রান্ত শনাক্ত হন। অন্যদিকে, ২৪ ঘন্টায় মৃত্যুবরণ করেন আরও তিন হাজার ৯১৫ জন।
সরকারি রেকর্ড অনুসারে, বর্তমানে ভারতে সংক্রমণ সংখ্যা সর্বমোট দুই কোটি ১৪ লাখ ৯১ হাজার ৫৯৮। অন্যদিকে, কোভিড আক্রান্ত হয়ে মোট মৃতের সংখ্যা দুই লাখ ৩৪ হাজার ৮৩। তবে, স্বাস্থ্য বিশেষজ্ঞদের মতে, প্রাতিষ্ঠানিক তথ্যের চেয়ে প্রকৃত সংখ্যা পাঁচ থেকে ১০ গুণ বেশি।
এদিকে, বুধবার ইন্টারন্যাশনাল ফেডারেশন অব রেড ক্রস এবং রেড ক্রিসেন্ট সোসাইটিজ জানায়, দক্ষিণ এশিয়ায় ভারতের প্রাদুর্ভাব ছড়িয়ে পড়ায় নেপালেও কোভিড-১৯ সংক্রমণ আশঙ্কাজনকহারে বৃদ্ধি পেয়েছে।
এছাড়া, কয়েক মাস আগের তুলনায় নেপালে সংক্রমণ সংখ্যা ৫৭ গুণ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে বলেও উল্লেখ করা হয়। রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, নেপালে কোভিড-১৯ পরীক্ষায় শনাক্তের হার ৪৪ শতাংশ বলেও তুলে ধরা হয়।
বর্তমানে দেশটিতে পূর্ণাঙ্গভাবে টিকাগ্রহণকারীর হার মোট জনগোষ্ঠীর মাত্র এক শতাংশ। চিকিৎসাপ্রার্থী কোভিড আক্রান্তদের বাড়তে থাকা সংখ্যার সাথে তাল মেলাতে ব্যর্থ হচ্ছে নেপালের ভারতীয় সীমার কাছে অবস্থিত শহরগুলো।
দেশটির স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়ের তথ্য অনুযায়ী, বৃহস্পতিবার চব্বিশ ঘন্টায় শনাক্ত হয় আট হাজার ৯৭০ জন। এই নিয়ে মোট শনাক্ত সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে তিন লাখ ৬৪ হাজার ৫৮০ জনে দাঁড়িয়েছে।
নেপাল রেড ক্রসের প্রধান নেত্র প্রসাদ তিমসিনা বলেন, "মুহূর্তে অসংখ্য প্রাণ কেড়ে নেওয়া এই নতুন ঢেউ নিয়ন্ত্রণ করতে না পারলে নেপালে ভারতের বর্তমান পরিস্থিতির ভয়ংকর অবতারণা ঘটবে।"
সংক্রমণ সংখ্যা বৃদ্ধি পাওয়ায় কেরালা, মধ্য প্রদেশ এবং রাজস্থানসহ ভারতের বিভিন্ন রাজ্য পুরোপুরি লকডাউন ঘোষণা করেছে। অন্যান্য রাজ্যে প্রাণঘাতী এই ভাইরাস ঠেকাতে কঠোর বিধিনিষেধ আরোপ করা হয়েছে।
কোভিড-১৯ ঢেউয়ের বিস্ফোরণ ভারতের পাশাপাশি পুরো বিশ্বের জন্যই হুমকিস্বরূপ বলে শুক্রবার সতর্ক করেন ভারতের প্রধান বিরোধীদলীয় নেতা রাহুল গান্ধী ।
রয়টার্সের প্রতিবেদন অনুযায়ী, একটি চিঠির মাধ্যমে তিনি প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদিকে দেশব্যাপী আরেকটি লকডাউনের প্রস্তুতি গ্রহণের আহ্বান জানান। পাশাপাশি, তিনি দ্রুত দেশের টিকাদান কর্মসূচীর সম্প্রসারণ এবং বিজ্ঞানসম্মতভাবে ভাইরাস এবং এর প্রকরণগুলো চিহ্নিত করার দাবি পেশ করেন।
মালদ্বীপে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি
মালদ্বীপেও বৃদ্ধি পেয়েছে সংক্রমণ সংখ্যা। গত ২৪ এপ্রিল দেশটিতে চব্বিশ ঘন্টায় শনাক্ত সংখ্যা মাত্র ২১৮ হলেও কয়েক দিনের ব্যবধানে ৬ মে শনাক্ত সংখ্যা বৃদ্ধি পেয়ে দাঁড়ায় ৭০৩ জনে।
স্থানীয় নির্বাচন চলাকালে জনসভার আয়োজন করায় দেশটিতে বেড়েছে সংক্রমণ হার। বুধবার দেশটি সংক্রমণ নিয়ন্ত্রণে আনতে রাত্রিকালীন কারফিউ জারি করে। রিপাবলিক টিভির প্রতিবেদন অনুযায়ী, রমজানে ঘরোয়া জমায়েত এবং বিদেশি পর্যটকদের আগমন বৃদ্ধি পাওয়ায় সংক্রমণ সংখ্যাও বাড়ছে।
মালদ্বীপে রাষ্ট্রপতির কার্যালয়ের মুখপাত্র মাবরুক আজিজ বলেন, "সংক্রমণ সংখ্যা বেশ উচ্চ। আমরা যদি কার্যকরভাবে সংখ্যা কমাতে ব্যর্থ হই, তবে সামনে কঠিন দিনের মুখোমুখি হতে হবে। তাই আমাদের প্রস্তুত হতে হবে।"
ভারতের ওপর শ্রীলঙ্কার ভ্রমণ নিষেধাজ্ঞা
শ্রীলঙ্কায় দ্রুত বৃদ্ধি পাচ্ছে সংক্রমণ সংখ্যা। এ মাসের প্রথম পাঁচদিনই দৈনিক শনাক্ত সংখ্যা ছিল প্রায় দুই হাজারের কাছাকাছি। অথচ, মধ্য-এপ্রিলেও গড়ে দৈনিক শনাক্ত সংখ্যা ছিল ২০০।
দেশটির স্বাস্থ্য কর্তৃপক্ষ নতুন ঢেউকে 'যুক্তরাজ্যের দ্রুত সংক্রামক ভ্যারিয়েন্ট ঘটিত' বলে উল্লেখ করেছে। পাশাপাশি, নতুন বছরের এই গুচ্ছ সংক্রমণ মধ্য এপ্রিলের ঐতিহ্যবাহী নতুন বছরের আয়োজনের মাধ্যমে ছড়িয়েছে বলেও জানায় তারা।
বৃহস্পতিবার দেশটি ভারত থেকে সকল ধরনের আগমনের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে।
এছাড়া গত সপ্তাহে শ্রীলঙ্কান নৌবাহিনী জানায়, তারা দেশটির উত্তর এবং উত্তর-পশ্চিম সমুদ্র অঞ্চলে নজরদারি বৃদ্ধি করেছে। ভারতীয় কোভিড আক্রান্ত জেলেরা যাতে আন্তর্জাতিক সীমা লঙ্ঘন করে স্থানীয়দের সংস্পর্শে না আসে, সেজন্য নেওয়া হয়েছে বাড়তি সতর্কতা।
অক্সিজেন সংকটে ভুগছে পাকিস্তানের হাসপাতাল
পাকিস্তানে এ বছর কোভিডের দ্বিতীয় ঢেউ বেশ আগেই আঘাত হানে। ফেব্রুয়ারি মাস থেকেই দেশটিতে সংক্রমণ সংখ্যা উত্তরোত্তর বৃদ্ধি পেয়ে চলেছে।
খালিজ টাইমসের প্রতিবেদন অনুসারে, জীবনরক্ষাকারী তরল মেডিকেল অক্সিজেনের তীব্র সংকটে দেশটির হাসপাতাল এবং স্বাস্থ্যসেবা ব্যবস্থা ভেঙে পড়েছে। এছাড়া, গত বছর থেকে এই সংক্রমণ ব্যাধির বিরুদ্ধে লড়াই করে সম্মুখসারির স্বাস্থ্যকর্মীরাও ক্লান্ত হয়ে পড়েছেন বলে উল্লেখ করা হয় ঐ প্রতিবেদনে।
মাঠ পর্যায়ের বাস্তবতা অনুযায়ী দৈনিক সংক্রমণ সংখ্যা বিস্ফোরক হারে বাড়তে থাকায় কোনো উত্তরণ খুঁজে পেতে ব্যর্থ পাকিস্তান। এছাড়া, কোভিড-১৯ ভাইরাসের অভিযোজিত ব্রিটিশ প্রকরণের কবলে দিশেহারা হয়ে পড়েছে দেশটির স্বাস্থ্য খাত। পাকিস্তানের ইতিহাসে নজিরবিহীন এই স্বাস্থ্য সংকটের গভীরতা বাড়িয়ে তুলেছে ভাইরাসের নতুন প্রকরণ।
৪০ দিনে সর্বনিম্ন মৃত্যু দেখলো বাংলাদেশ
শুক্রবার সকাল আটটা পর্যন্ত গত ২৪ ঘন্টায় বাংলাদেশে কোভিড আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন ৩৭ জন। গত ৪০ দিনের হিসাবে এই হার সর্বনিম্ন।
গত ২৮ মার্চ কোভিডে আক্রান্ত হয়ে ৩৫ জন মৃত্যুবরণ করেন। এরপর থেকেই বাড়তে থাকে মৃত্যুহার।
এছাড়া, গত ২৪ ঘন্টায় এক হাজার ৬৮২ জন শনাক্ত হওয়ার পর দেশে সর্বমোট শনাক্ত সংখ্যা দাঁড়ায় ৭ লাখ ৭০ হাজার ৮৮২।
শুক্রবার প্রকাশিত তথ্য অনুযায়ী, দেশে শনাক্তের হার ৯.৮৯ শতাংশ। এর একদিন আগে শনাক্তের হার ছিল ৮.৪৪ শতাংশ।