করোনার ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ ঠেকাতে যশোরের দিকে নজর দিতে হবে
সীমান্ত বন্ধ থাকলেও যশোরের বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে প্রতিদিন দেশে ফিরছেন ভারত ফেরত অনেক যাত্রী। এরইমধ্যে ভারত থেকে যশোর দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা ছয়জনের শরীরে করোনাভাইরাসের ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হয়েছে।
বিশেষজ্ঞরা বলছেন দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের ছড়িয়ে পড়া ঠেকাতে যশোরের দিকে নজর দিতে হবে। যশোর দিয়ে দেশে ফেরা প্রত্যেককে সঠিকভাবে কোয়ারেন্টিন মেনে চলতে করতে হবে ও করোনা শনাক্ত রোগী পাওয়া গেলেই যতো দ্রুত সম্ভব জিনোম সিকুয়েন্সিং করতে হবে।
যশোরের সিভিল সার্জন ডা. শেখ আবু শাহীন দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, সীমান্ত বন্ধ থাকায় এখন ভারত থেকে যারা দেশে আসছেন তাদের ৯০ শতাংশই যশোর দিয়ে আসছেন। যশোর এখন ভূতাত্ত্বিকভাবে ঝুঁকিপূর্ণ।
যশোরে কোভিড-১৯ রোগীদের চিকিৎসার জন্য কোভিড হাসপাতালে ৬৪টি সাধারণ ও ৩টি আইসিইউ বেড আছে এবং সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন রয়েছে। আরও ৫টি আইসিইউ বেড চালু করার কাজ চলছে।
ডা. শেখ আবু শাহীন বলেন, "যারা ভারত থেকে দেশে ফিরছেন তাদের সবাইকে ১৪ দিনের কোয়ারেন্টিনে রাখা হচ্ছে। এখন পর্যন্ত রোগী কম তাই আমাদের সেবা দিতে সমস্যা হচ্ছেনা,"
"তবে মানুষ স্বাস্থ্যবিধি না মেনে যেভাবে যাতায়াত করছে তাতে ঈদের পর সংক্রমণ বাড়ার ঝুঁকি রয়েছে। এরইমধ্যে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়িয়ে পড়লে পরিস্থিতি মোকাবেলা করা কঠিন হবে।" যোগ করেন তিনি।
করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিস্থিতিতে গত ২৬ এপ্রিল থেকে ১৪ দিনের জন্য ভারতের সঙ্গে সীমান্ত বন্ধ ঘোষণা করে সরকার। তবে কোভিড-১৯ নেগেটিভ সনদ থাকার ভিত্তিতে অনেক বাংলাদেশিকে দেশে প্রবেশের অনুমতি দেওয়া হয়। তাদেরকে বাধ্যতামূলক কোয়ারেন্টিনে রাখা হয়।
এখন পর্যন্ত যশোরের বেনাপোল স্থলবন্দর দিয়ে ২,৫৬৪ জন যাত্রী দেশে ফিরেছেন। এর মধ্যে ১৬ জন করোনা পজিটিভ হয়ে দেশে এসেছেন।
যশোর বিজ্ঞান ও প্রযুক্তি বিশ্ববিদ্যালয়ের (যবিপ্রবি) জিনোম সেন্টারের সহযোগী পরিচালক অধ্যাপক ইকবাল কবির জাহিদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড-কে বলেন, "ভারত ফেরত ১৬ জন কোভিড পজেটিভ রোগীর জিনোম সিকুয়েন্সিং করে আমরা দুই জনের শরীরে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট পেয়েছি,"
"তাদের মধ্যে একজন ৪০ বছর বয়সী নারী ও ১৭ বছর বয়সী পুরুষ। ভারতীয় এ ধরনটি ২০ শতাংশের বেশি হারে সংক্রমণের সক্ষমতা রাখে। সিকুয়েন্সিংয়ের জন্য আমাদের কাছে নতুন করে আর কোনো নমুনা আসেনি।"
ইকবাল কবির জাহিদ বলেন, দেশে ভারতীয় ভ্যারিয়েন্টের সংক্রমণ রোধে ভারত থেকে এখন যারা যশোর দিয়ে দেশে প্রবেশ করছেন তাদের সার্বক্ষণিক পর্যবেক্ষণে রাখতে হবে। জিনোম সিকুয়েন্সিং আরও বাড়াতে হবে।
ভারত মহামারির সেকেন্ড ওয়েভের আঘাতে এতোটাই বিপর্যস্ত যে দেশটির হাসপাতালগুলো অক্সিজেন, শয্যা ও অ্যান্টিভাইরাল ঔষধ সংকটে পড়েছে। হাসপাতালে স্থান সংকুলান না হওয়ায় অনেক রোগীকেই ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
দেশটির সীমান্তবর্তী শহর ও গ্রামগুলোতে সংক্রমণের পরিস্থিতি ভয়াবহ আকার ধারণ করেছে। চিকিৎসার প্রয়োজন হওয়া রোগীর সংখ্যাও প্রতিনিয়ত বাড়ছে। এমনকি সমাধিক্ষেত্রেও স্থান সংকুলান হচ্ছে না, মরদেহ সৎকারের কাজও কর্তৃপক্ষের জন্য চ্যালেঞ্জিং হয়ে দাঁড়িয়েছে।
বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে দেশে আসা নাগরিকদের কোয়ারেন্টিনে রাখা হলেও প্রতিদিন পণ্যবাহী অনেক গাড়ি আসছে। সেসব গাড়ির ড্রাইভার ও হেল্পাররা স্বাস্থ্যবিধি না মেনেই ঘুরে বেড়ান। তাদের মাধ্যমেই ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট ছড়াতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেছেন বিশেষজ্ঞরা।
ইকবাল কবির বলেন, বাণিজ্যিক বা অন্য কোনো কারণে বেনাপোল সীমান্ত দিয়ে বাংলাদেশে প্রবেশ করা চালক ও সহকারীদের কঠোরভাবে স্বাস্থ্যবিধি প্রতিপালন ও করোনা টেস্ট করা প্রয়োজন।
আন্তর্জাতিক খ্যাতিসম্পন্ন ভাইরোলজিস্ট ও কোভিড-১৯ বিষয়ক জাতীয় কারিগরি পরামর্শক কমিটির সদস্য অধ্যাপক ডা. নজরুল ইসলাম টিবিএস-কে বলেন, "ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট অনেক বেশি সংক্রামক ও শিশুরাও আক্রান্ত হচ্ছে। তাই আমাদের এখন সীমান্তবর্তী এলাকায় টেস্ট বাড়াতে হবে ও বিদেশ ফেরতদের ১৪ দিনের আইসোলেশন ও কোয়ারেন্টিন নিশ্চিত করতে হবে। শতভাগ মাস্ক পরা বাধ্যতামূলক করতে হবে।"
বাংলাদেশে কোভিড-১৯ পরিস্থিতি
গত ২৪ ঘণ্টায় দেশের আরও ১ হাজার ৩৮৬ জন কোভিড-১৯ শনাক্ত হন, শনাক্তের হার ছিল ৮.১৯ শতাংশ। মহামারি শুরুর পর থেকে সব মিলিয়ে এই শনাক্তের সংখ্যা ৭ লাখ ৭৩ হাজার ৫১৩।
করোনাভাইরাসে আক্রান্ত হয়ে গত ২৪ ঘণ্টায় বাংলাদেশে আরও ৫৬ জনের মৃত্যু হয়েছে। এ পর্যন্ত দেশে ১১ হাজার ৯৩৪ জনের মৃত্যু হয়েছে কোভিডজনিত কারণে। রোববার পর্যন্ত মৃত্যুহার ছিল ১.৫৪ শতাংশ।
ঈদের পর কোভিড পরিস্থিতির অবনতি হতে পারে: স্বাস্থ্য মন্ত্রণালয়
দেশে করোনাভাইরাস সংক্রমণের আশঙ্কাজনক বৃদ্ধির গতি ঈদের পর আরও বাড়তে পারে বলে সতর্ক করেছেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মহাপরিচালকের দপ্তরের মুখপাত্র নাজমুল ইসলাম।
গতকাল রোববার (৯ মে) এক নিয়মিত বুলেটিনে তিনি এমন শঙ্কার কথা তুলে ধরেন।
তিনি জানান, দেশে নতুন ভ্যারিয়েন্ট শনাক্ত হলেও, চিকিৎসা ও ব্যবস্থাপনা পদ্ধতি প্রায় কাছাকাছি থেকে গেছে।
"আমরা যদি সংক্রমণের এই শৃঙ্খল ভেঙে দিতে না পারি, আজ ভারতীয় ভ্যারিয়েন্ট এসেছে, কাল নতুন কোনো ভ্যারিয়েন্ট পাওয়া যাবে," বলেন তিনি।
"আমাদের রোগীর সংখ্যা কিন্তু কমবে না। আমাদের স্বাস্থ্য ব্যবস্থা, উপকরণ, জনবল কিন্তু অসীম নয়," বলেন তিনি।
গত কয়েকদিন ধরে পরীক্ষার বিপরীতে সংক্রমণ শনাক্তের হার ১০ শতাংশের নিচে আছে, এই পরিস্থিতি আশার আলো দেখালেও, তা নিয়ে সন্তুষ্ট থাকার কোনো সুযোগ নেই বলেও উল্লেখ করেন তিনি।
বিশেষ করে, ঈদে রাজধানী ছেড়ে গ্রামের বাড়ি ফিরতে মানুষের ভিড় মারাত্মক আকারে সংক্রমণ ছড়াতে পারে।
লকডাউন শিথিল করা হলে ঈদের পর কোভিড পরিস্থিতি আরও গুরুতর আকার ধারণ করতে পারে বলে আশঙ্কা প্রকাশ করেন তিনি।