চট্টগ্রামে টিকার মজুদ প্রায় শেষ, নগরে মিলছে না দ্বিতীয় ডোজ
চট্টগ্রামে করোনাভাইরাস ভ্যাকসিনের মজুদ সংকটের কারণে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে পারছেন না প্রথম ডোজ টিকাগ্রহীতারা। স্বাস্থ্য বিভাগের পক্ষ থেকে টিকা বন্ধের সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা না থাকলেও গতকাল (রোববার) নগরের কেন্দ্রগুলোতে গিয়ে টিকা না পেয়ে ফেরত এসেছেন হাজারও মানুষ। এমনকি টিকা না পেয়ে রাস্তায় বিক্ষোভও করেছেন ভুক্তভোগীরা।
রোববার সকালে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতালে টিকাদান কর্মসূচি বন্ধের খবর ছড়িয়ে পড়লে হাসপাতালের সামনে ভুক্তভোগীরা বিক্ষোভ ও সড়ক অবরোধ করেন। টিকাদান কার্যক্রম বন্ধ করে দেয় চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালও।
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, কেন্দ্রের সামনে ঘণ্টার পর ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে থেকে ভেতরে ঢোকার পর বিভিন্ন অজুহাতে ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে না।
নগরের চকবাজার থেকে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন জেনারেল হাসপাতালে দ্বিতীয় ডোজের টিকা নিতে যান সাখাওয়াত হোসেন। তিনি বলেন, 'গত মার্চ মাসে করোনার প্রথম টিকা নিয়েছি। নিবন্ধন কার্ডে ৯ মে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়ার তারিখ উল্লেখ আছে। কিন্তু প্রায় তিন ঘণ্টা লাইনে দাঁড়িয়ে কেন্দ্রে ঢোকার পর জানানো হয় এসএমএস ছাড়া ভ্যাকসিন দেওয়া হবে না।'
সিভিল সার্জন কার্যালয় থেকে জানা গেছে, চট্টগ্রামে করোনা ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া শুরু হয়েছে ৮ এপ্রিল থেকে। গত শনিবার পর্যন্ত চট্টগ্রামে দ্বিতীয় ডোজ ভ্যাকসিন পেয়েছেন ৩ লাখ ১১ হাজার ৩৭৭ জন। বন্ধ হওয়ার আগ পর্যন্ত চট্টগ্রামে করোনার প্রথম ডোজ পেয়েছেন ৪ লাখ ৫৩ হাজার ৭৬০ জন। এরমধ্যে প্রথম ভ্যাকসিন গ্রহণ করেছেন এমন প্রায় দেড় লাখ টিকাগ্রহীতা এখনো দ্বিতীয় ডোজ পাননি। কিন্তু চট্টগ্রামের স্বাস্থ্য বিভাগের হাতে টিকা মজুত আছে মাত্র ২৭ হাজার ৩৮০ ডোজ।
ভ্যাকসিনের দ্বিতীয় ডোজের মজুদ স্বল্পতার কারণে মে মাসের শুরু থেকেই ভ্যাকসিন দেওয়ার পরিমাণ তিন ভাগের দুই ভাগ কমিয়ে দেওয়া হয়। এপ্রিলে শুরুর পর থেকে প্রতিদিন গড়ে সাড়ে ১৮ হাজার দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছে। মে মাসের শুরু থেকে প্রতিদিন ৬ হাজারের মতো দ্বিতীয় ডোজের ভ্যাকসিন দেওয়া হচ্ছে।
এ বিষয়ে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের প্রধান স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. সেলিম আকতার চৌধুরী বলেন, 'যাদের টিকার তারিখ ও এসএমএস দেওয়া হয়নি, তারাও টিকা নেওয়ার জন্য ভিড় করছেন। এ অবস্থায় টিকাদান কেন্দ্রগুলোতে মোবাইলে এসএমএস ছাড়া দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হয়েছে।'
ভুক্তভোগীদের অভিযোগ, এসএমএস নিয়ে সুনির্দিষ্ট কোনো ঘোষণা দেওয়া হয়নি। শুরু থেকেই কেন্দ্রগুলোতে প্রথম ডোজ দেওয়ার পর নিবন্ধন কার্ডে যে তারিখ দেওয়া হয়েছিল, সেই তারিখে এসএমএস ছাড়াই শুরুতে দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া হয়েছিল। কিন্তু ঘোষণা ছাড়াই এসএমএস ব্যতীত দ্বিতীয় ডোজ দেওয়া বন্ধ করে দেওয়া হলে দূর-দুরান্ত থেকে বিভিন্ন কেন্দ্রে আসা লোকজন বিপাকে পড়েন।
তবে টিকা সংকটের বিষয়টি স্বীকার করে চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশনের আরেক স্বাস্থ্য কর্মকর্তা ডা. মোহাম্মদ আলী বলেন, 'সারা দেশেই ভ্যাকসিন সংকট আছে। আমাদের কাছেও মজুদ স্বল্পতা আছে। সর্বোচ্চ আর একদিন আমরা ভ্যাকসিন দিতে পারব।'
চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল এস এম হুমায়ুন কবির বলেন, 'আমাদের এখানে টিকার মজুদ ফুরিয়ে এসেছে। সীমিতসংখ্যক টিকা দিয়ে রোববার কার্যক্রম চালিয়েছি। সোমবার থেকে টিকাদান কর্মসূচি বন্ধ থাকবে।'
চট্টগ্রাম বিভাগীয় স্বাস্থ্য পরিচালক ডা. হাসান শাহরিয়ার কবীর দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'চট্টগ্রামে ভ্যাকসিন নেই। জেলায় সীমিতসংখ্যক মানুষকে টিকা দেওয়া হচ্ছে। চট্টগ্রাম মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে অলমোস্ট বন্ধ হয়ে গেছে। আন্দরকিল্লায় জেনারেল হাসপাতালে হয়তো আর এক-দুইদিন চলবে। নতুন ভ্যাকসিন না এলে ঈদের পর আর ভ্যাকসিন দেওয়া সম্ভব হবে না।'