সূর্যের কাছাকাছি গিয়ে যে পাঁচটি বিষয় আবিষ্কার করেছে নাসার মহাকাশযান
সূর্যের রহস্য ভেদের মিশন নিয়ে ২০১৮ সালের ১২ আগস্ট পার্কার সোলার প্রোব নামে একটি মহাকাশযান পাঠায় মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা।
ওই বছরের ২৯ অক্টোবর পৃথিবী থেকে পাঠানো যেকোন মহাকাশযানের তুলনায় সূর্যের সবচেয়ে কাছাকাছিতে পৌঁছায় পার্কার সোলার প্রোব।
সূর্যের এতোটা কাছে গিয়ে অবাক করা কিছু বিষয় দেখলো নাসার এই মহাকাশযান।
পার্কার সোলার প্রোব যে সব ঘটনা দেখেছে, তা সম্প্রতি প্রকাশ করেছে আন্তর্জাতিক বিজ্ঞান-জার্নাল ‘নেচার’।
যে পাঁচটি বিষয় আবিষ্কার করলো পার্কার সোলার প্রোব
সূর্যকে কেন্দ্র করে অস্বাভাবিক জোরে সৌরবায়ুর ঘুর্ণন
সুর্যের কাছাকাছি গিয়ে পার্কার সোলার প্রোব দেখেছে, নিজের কক্ষপথে সূর্য যখন ঘুরছে, তখন তার থেকে বেরিয়ে আসার সময় সূর্যকে কেন্দ্র করে সৌরবায়ুও ঘুরছে। ঘুরতে ঘুরতে ওই সৌরবায়ু সূর্য থেকে বেরিয়ে সৌরমণ্ডলের বিভিন্ন গ্রহ উপগ্রহে ছড়িয়ে পড়ছে।
সূর্যের আশেপাশে কোন ধূলিকণা নেই
বিজ্ঞানীদের এতোদিনের ধারণা ছিল, মহাবিশ্বের সর্বত্রই ছড়িয়ে আছে ধূলিকণা। তবে মহাকাশ যান পার্কার প্রথমবারের মতো দেখল, সূর্যের কাছাকাছি এমন একটি এলাকা আছে যেখানে কোন ধূলিকণার উপস্থিতি নেই। সেটাকে বলা হয় ‘ডাস্ট ফ্রি জোন’। ডাস্ট ফ্রি জোনে ধূলিকণা না থাকার কারণ হচ্ছে, সেখানে কোন ধূলিকণা থাকলে সূর্যের তাপে তা বাষ্প হয়ে যায়।
সৌরবায়ুর উল্টোমুখী আচরণ
বিজ্ঞানীদের আগে ধারণা ছিলো, সৌরবায়ু সূর্য থেকে বেরিয়ে সৌরমণ্ডলের বিভিন্ন প্রান্তে ছড়িয়ে পড়ে। তবে পার্কার সোলার প্রোব মহাকাশের এই মিশনে দেখেছে, সৌরবায়ু সূর্য থেকে বেরিয়ে মুহুর্তেই ১৮০ ডিগ্রী ঘুরে সূর্যের দিকে ফিরে যায়। তারপর আবার সূর্য থেকে বেরিয়ে এসে আবার সৌরমণ্ডলে ছড়িয়ে যায়। এটাকে বলা হয় ‘সুইচব্যাক’।
সূর্য থেকে দ্রুত বেরিয়ে আসছে সৌরবায়ু
নাসার মহাকাশযান পার্কার সোলার প্রোবের অভিযানে দেখা যায়, সূর্যের কোথাও কোথাও সৌরবায়ু অনেক ধীর গতিতে বইছে। আবার কোথাও কোথাও তা অনেক বেশি জোরে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, এই ঘটনা সূর্যের পৃষ্ঠের চেয়ে বায়ুমণ্ডলের (করোনা) তাপমাত্রা একলাফে কয়েক লক্ষ গুণ বাড়িয়ে দেওয়ার ক্ষেত্রে উল্লেখযোগ্য ভূমিকা নিতে পারে।
আগের তুলনায় কমেছে সূর্যের ঘুর্ণন গতি
সূর্য থেকে বেরিয়ে আসার সময় সূর্যের সঙ্গে সৌরবায়ু যে গতিতে ঘুরতে পারে বলে এত দিন ধারণা ছিল বিজ্ঞানীদের, সেটাও বদলে গেছে পার্কারের অভিযানের পর। সূর্য থেকে বেরিয়ে আসার পূর্ব মুহূর্তে সূর্যের সঙ্গে অনেক বেশি জোরে ঘোরে সৌরবায়ু। তার পর উল্লম্ব ভাবে বেরিয়ে পড়ে সৌরমণ্ডলের দিকে। বিজ্ঞানীদের ধারণা, প্রায় ৫০০ থেকে সাড়ে ৫০০ কোটি বছর ধরে নিজের কক্ষপথে ঘুরতে ঘুরতে সূর্যের ঘূর্ণন-গতি (স্পিন) যে হারে কমে আসছে বলে ভাবা হয়েছিল, তার চেয়ে অনেক বেশি দ্রুত হারে তা কমে আসছে।