বুদ্ধর পাল্লায় পড়ে প্রথমবার বড়পর্দায় আমার অভিনয় করা: গৌতম ঘোষ
বৃহস্পতিবার সকালে প্রয়াত হয়েছেন ভারতীয় বিখ্যাত চিত্র পরিচালক বুদ্ধদেব দাশগুপ্ত। বর্ষীয়ান এই খ্যাতনামা চিত্র পরিচালকের মৃত্যুতে শোকপ্রকাশ করেছেন দেশটির প্রধানমন্ত্রী নরেন্দ্র মোদী এবং পশ্চিমবঙ্গের মুখ্যমন্ত্রী মমতা বন্দোপাধ্যায়।
টুইট করে মোদী লেখেন, 'শ্রী বুদ্ধদেব দাশগুপ্তর মৃত্যুতে শোকস্তব্ধ। তার কাজ সমাজে একটা ছাপ ফেলেছে। এক খ্যাতনামা সাহিত্যিক ও কবিও ছিলেন তিনি। তার পরিবার এবং অনুরাগীদের প্রতি আমার সমবেদনা রইল।'
অন্যদিকে শোকস্তব্ধ বাংলা চলচ্চিত্র জগত। একাধিক জনপ্রিয় টলিপাড়ার ব্যক্তিত্ব এই প্রখ্যাত পরিচালকের প্রয়াণে শোকপ্রকাশ করেছেন। এই তালিকায় রয়েছেন বুদ্ধদেবের অন্যতম প্রিয় বন্ধু এবং আরও এক জনপ্রিয় চিত্র পরিচালক গৌতম ঘোষ। পঞ্চাশ বছরের বন্ধুত্বে ছেদ পড়ায় ভীষণ মন খারাপ তার। ফোনের ওপর থেকে হিন্দুস্তান টাইমসকে তিনি জানালেন, বুদ্ধদেব দাশগুপ্তের মৃত্যুতে বাংলা ছবির জগতের পাশাপাশি সমগ্র ভারতীয় সিনেমার বিরাট ক্ষতি হলো। এক কথায় অপূরণীয়। তাদের প্রজন্মের যে অন্যতম সেরা পরিচালক ছিলেন 'কালপুরুষ'-এর স্রষ্টা, সে বিষয়েও স্পষ্ট স্বীকারোক্তি 'মনের মানুষ'-এর পরিচালকের। ঘটনাটি যে তার নিজের কাছেও যথেষ্ট 'শকিং', তাও বললেন তিনি।
'নিয়মিত যোগাযোগ ছিল। গত মাসেও বুদ্ধর সঙ্গে ফোনে কথা হয়েছে। আড্ডা মেরেছি। তারপরেই আজকেই এই ঘটনা... বিশ্বাস করতে পারছি না। জানি না কী বলব!' ফোনের ওপর থেকে মৃদু স্বরে জানালেন 'শঙ্খচিল'-এর স্রষ্টা।
আরও জানানলেন দীর্ঘদিন ধরেই কিডনির সমস্যায় ভুগছিলেন বুদ্ধদেব। ডায়ালিসিস চলছিল তার। তবে তা সত্ত্বেও দমে যাননি তিনি। এহেন শারীরিক সমস্যার মধ্যে থাকাকালীন অবস্থাতেও 'উড়োজাহাজ' নামে একটি ছবি তৈরি করে ফেলেছিলেন।
এরপরেই তার প্রিয় 'বুদ্ধ'র ব্যাপারে স্মৃতিচারণ করতে গিয়ে পুরোনো কথায় ডুব দিলেন গৌতম ঘোষ। তার কথাতেই জানা গেল পরিচালক হওয়ার আগে থেকে পরস্পরের সঙ্গে আলাপ হয়েছিল তাদের। সেই আলাপ গড়ায় বন্ধুত্বে। বয়সে বুদ্ধদেব সামান্য বড় হলেও তা কখনো বন্ধুত্বে অসুবিধের কারণ হয়ে দাঁড়ায়নি। বহু বহু মুহূর্ত কেটেছে তাদের কবিতার আলোচনায়, ছবি নিয়ে তর্কে।
'জানেন, এমনও হয়েছে আমার হাতে নিজের কাব্যগ্রন্থ তুলে দিয়ে বুদ্ধ বলেছে আবৃত্তি করতে। ওর ধারণা ছিল আমার গলায় নাকি ওর লেখা কবিতা সবথেকে ভালো ফুটবে,' আক্ষেপের স্বরে জানালেন গৌতম।
বুদ্ধ্বদেব দাশগুপ্তের পাল্লায় পড়ে যে তার প্রথমবার ক্যামেরার সামনে আসা, সে ব্যাপারও ফ্যানস করলেন পরিচালক স্বয়ং। তার কথায়, "মমতা শঙ্করকে নিয়ে একটি ছবি তৈরি করেছিলাম। এরপর বুদ্ধের পরিচালনায় 'গৃহযুদ্ধ' ছবিতে কাজ শুরু করেন তখন মমতা। কথায় কথায় আমার অভিনয় নিয়ে বুদ্ধের কাছে ঢালাও প্রশংসা করেছিলেন তিনি। ব্যস! এরপর একদিন সন্ধ্যেবেলা আমার বাড়িতে এসে হাজির বুদ্ধ ও মমতা দুজনে। এরপর 'গৃহযুদ্ধ' ছবিতে অভিনয়ের প্রস্তাব। শুনে তো আমি অবাক। ওদিকে ওরাও ছাড়বেন না। অবশেষে তাদের জোড়াজুড়িতে সেই প্রথম আমার ক্যামেরার সামনে আসা। তবে সে ছবির শুটিংয়ের সময় পরিচালকের সঙ্গে কিন্তু দেদার ঝামেলা হয়েছিল আমার। তবে ভেবে ভালো লাগে বড়পর্দায় অভিনেতা হিসেবে ডেবিউ করেছিল প্রিয় বন্ধু বুদ্ধের হাত ধরেই।"