‘পরিবেশ সুরক্ষার দায়বদ্ধতা থেকে পরিবেশবান্ধব জুতা এনেছে বাটা’
সম্প্রতি পরিবেশবান্ধব জুতা নিয়ে এসেছে দেশের বহুজাতিক জুতা প্রস্তুতকারী প্রতিষ্ঠান বাটা। দেশের ইতিহাসে এ ধরনের জুতা প্রথম। এই জুতায় প্রথমবারের মতো তিনটি অংশেই সম্পূর্ণ পুনর্ব্যবহারযোগ্য প্লাস্টিক ব্যবহার করেছে কোম্পানিটি। এটি পরিবেশ বান্ধবের পাশাপাশি গ্রাহকদের জন্য আরামদায়ক বলেও দাবি করছে কোম্পানিটি। বাটার এই নতুন উদ্ভাবন ও প্রতিষ্ঠানটির বর্তমান ব্যবসায়িক অবস্থা নিয়ে দ্য বিজনেস স্টান্ডার্ডের সঙ্গে কথা বলেছেন বাটার বিপণন বিভাগের প্রধান ইফতেখার মল্লিক।
ইফতেখার মল্লিক জানান, জুতাটির উপরের সোল ফেলে দেওয়া পিইটি বোতল থেকে প্রাপ্ত প্লাস্টিক শতভাগ পুনর্ব্যবহার করে তৈরি করা হয়েছে এবং বাইরের সোলে ৩০ ভাগ ইথিলিন-ভিনাইল অ্যাসিটেট (ইভিএ) ব্যবহার করা হয়েছে।
এছাড়াও ভিতরের অংশটি (ইনসোল) আরামদায়ক করে তুলতে ৯৮ শতাংশ অর্থোলেটাইট ব্যবহার করা হয়েছে। আর এই পুরো প্রক্রিয়াই সম্পন্ন করা হয়েছে বাংলাদেশে।
করোনাকালীন সময়ে মানুষের পরিবেশ সচেতনতাবোধ থেকে উৎসাহ নিয়ে পরিবেশবান্ধব এ জুতার উৎপাদন বলে জানিয়েছেন ইফতেখার মল্লিক।
"কোভিডের পর পরিবেশের গুরুত্ব আমরা সবাই নতুন করে অনুভব করছি। গত বছর লকডাউনের পর সবুজ নগরী দেখার পর সবার মধ্যে একটা আলাদা অনুভূতি তৈরি হয়েছে। এখন অনেককেই দেখা যায় নিয়ম করে হাঁটেন, লাল আটার রুটি খান, ফ্যাক্টরি ও বাসায় 'গ্রিন ইনিশিয়েটিভ'যোগ করছেন। বাংলাদেশের মানুষ পরিবেশ সুরক্ষার বিষয়টি শুধু মন থেকেই অনুভব করেন তা নয়। এখন তারা পরিবেশের জন্য কিছু করতে পারলে গর্ববোধ করেন"।
"আমাদের উদ্যোগটাও ঠিক এ চিন্তা থেকে। করোনার মধ্যে আমরা মাস্ক বিতরণ, এনজিওর মাধ্যমে খাদ্য বিতরণ, পরিবেশ রক্ষায় নানা উদ্যোগের সঙ্গে ছিলাম। এরই ধারাবাহিকতায় পরিবেশবান্ধব এ জুতা নিয়ে আসা। তাছাড়া দেশের জন্য কিছু একটা করা আমাদের দায়িত্বের মধ্যেই পড়ে"।
নতুন জুতা ঠিক কাদের ব্যবহারোপযোগী এ প্রসঙ্গে ইফতেখার বলেন, "এটা মূলত আউটডোরের ক্ষেত্রে বেশি ব্যবহার হয়। তবে জুতাটি এমনভাবে তৈরি করা যে এটা ইনডোরেও ব্যবহার করা যাবে"।
এ জুতার পুনর্ব্যবহার বা রিসাইক্লিং প্রক্রিয়া সম্পর্কে জানতে চাইলে তিনি বলেন, "রিসাইকেল করার জন্য আমাদের একটা প্লান্ট রয়েছে। বর্তমানে এ জুতার ম্যাটেরিয়াল আমরা বাইরে থেকে সংগ্রহ করছি। তবে এর মেয়াদ শেষ হওয়ার পর তা পুনরায় রিসাইকেল করার সক্ষমতা আমাদের রয়েছে"।
"রিসাইক্লিংয়ে ভোক্তাদের উৎসাহ দিতে পুরানো জুতা বদল করে নতুন জুতা কেনার ক্ষেত্রে ডিসকাউন্টের ব্যবস্থাও থাকতে পারে।"
বাংলাদেশে ৬৯ বছরের পথচলায় গত বছর প্রথমবারের মতো লোকসানে যায় বাটা। চলতি বছর এ লোকসান বাড়ছে। ভারতেও লোকসান করছে কোম্পানিটি। হঠাৎ করে লোকসানে পড়ার কারণ ব্যাখ্যা করেছেন ইফতেখার মল্লিক।
"লোকসান করার একটা বড় কারণ কোভিড। রিটেইলারদের মোট বিক্রির একটা বড় অংশই হয় ঈদে। করোনার কারণে আমরা দু'বছরের ঈদই মিস করছি। সর্বশেষ রমজান মাসেও আমাদের আউটলেটে ফুটফল অর্ধেক ছিল। এটার একটা প্রভাব ছিল। এছাড়া বিক্রি কমে গেলে স্টক বেড়ে যায়। ফলে স্টকের পেছনে একটা ব্যয় হয়।"
আমাদের চামড়ার বিপুল যোগান থাকার পরও কেন রপ্তানি বাজারে বাটা ভালো অবস্থানে নেই তার ব্যাখ্যা দেন ইফতেখার।
"বাটা মূলত খুচরা ব্যবসাই করে থাকে। আমাদের রপ্তানি খুব বেশি নয়। রিটেইলে নিজেদের বিশেষত্বের কারণেই রপ্তানির চেয়ে এখানে বেশি ফোকাসড থাকি আমরা। রপ্তানি করলেও তা আন্তঃকোম্পানি হয়ে থাকে।"
চামড়ার দাম কম হওয়ার পরও বাংলাদেশে জুতার দাম কেন বেশি হয় বিষয়টি ব্যাখ্যা করে ইফতেখার মল্লিক বলেন, "মানুষের মধ্যে এ বিষয়টি নিয়ে প্রশ্ন থাকে। সামাজিক যোগাযোগ মাধ্যমেও এটি বেশ আলোচিত বিষয়। জুতা আসলে সরাসরি চামড়া থেকে উৎপাদন হয় না। বেশ কয়েকটি প্রক্রিয়ার মধ্য দিয়ে যেতে হয়। চামড়াকে একটা গ্রেডে উন্নীত করতে হয়। অনেক সময় দেশীয় চামড়া দিয়ে সব জুতা বানানো যায় না। প্রক্রিয়াজাতের মাঝখানের ধাপগুলোতে খরচ অনেক বেড়ে যায়। ফলে চামড়ার দামের সঙ্গে জুতার দাম মেলনো যাবে না"।
বাটা 'মাল্টিস্টোর টেলিং' কেন করে না এমন প্রশ্নে তিনি বলেন, "নাইকি, হাশপাপি, এডিডাস, ক্লার্কের জুতা বিভিন্ন স্টোরে পাওয়া যায়। বাটার জুতা কেন অন্য স্টোরে পাওয়া যায় না! বাটার নিজস্ব ব্র্যান্ড পাওয়ার, নর্ডস, স্নিকারস ব্র্রান্ড বেশ শক্তিশালী।
ভারতসহ অনেক দেশেই অন্য কোম্পানির আউটলেটে বাটার জুতা বিক্রি করছে। বাংলাদেশেও আমরা এমনটি চেয়েছি। কিন্ত কোথায় গিয়ে করবো, এটার একটা সংকট রয়েছে। আমাদের প্ল্যাটফর্ম খুব প্রতুল তা বলা যাবে না। ভবিষ্যতে এ ধরনের ক্ষেত্র তৈরি হলে আমরা অবশ্যই তা করবো"।
করোনা আসার পর বাটার বিক্রি ই-কমার্স নির্ভর হয়েছে জানিয়ে তিনি বলেন, "কোভিডের সময় গোটা পৃথিবী অমনি চ্যানেলে ঢুকছে। অমনি চ্যানেল হলো- আপনি একটা পণ্য কিনতে চাইলে সেটা অনলাইনে, ফোন করে, ফিজিক্যাল আউটলেট বা এক আউটলেটে গিয়ে অন্য আউটলেটের সাপ্লাইসহ যেকোন মাধ্যমে যেন কিনতে পারেন"।
"বেশ কয়েক বছর আগে থেকেই আমরা অমনি চ্যানেল নিয়ে কাজ করছি। দেশের সবচেয়ে বড় অমনি চ্যানেলটা বাটার। যা বাটা বিডি ডট নামে পরিচিত। এর মাধ্যমে আমাদের যে কোন পণ্যের ডেলিভারি চার্জ ফ্রি। গত দেড় বছরে আমাদের ই-কমার্স ব্যবসা অনেকগুণ বেড়েছে"।
উন্নত বিশ্বে খুচরা বিক্রেতারা অল্প পরিসরে আউটলেট করে সেখানে গ্রাহকদের পায়ের সাইজ অনুযায়ী অর্ডার নেয় এবং পরে ওই জুতা গ্রাহকের ঠিকানায় পৌঁছে দেয়। এতে কোম্পানির ব্যয় সংকোচনও হচ্ছে। এমন উদ্ভাবন নিয়ে বাটাও কাজ করছে বলে জানিয়েছেন ইফতেখার মল্লিক।
"আমরা 'বাটা হোম' নামে নতুন একটি পদ্ধতি নিয়ে কাজ করছি। গ্রাহকরা কোনো আউটলেটে গিয়ে অর্ডার করলে আমরা তাদের জুতা বাসায় পৌঁছে দেবো। এক আউটলেটে গিয়ে অর্ডার করলে আরেক আউটলেট থেকে পৌঁছে দিচ্ছি। তবে বিষয়গুলো নিয়ে এখনো কাজ হচ্ছে। সর্বশেষ পর্যায়ে পৌঁছতে একটু সময় লাগবে।"