লকডাউনে বিপাকে ঢাকামুখী মানুষ
করোনা সংক্রমণ রোধে আজ মঙ্গলবার (২২ জুন) থেকে দেশের সাত জেলায় লকডাউন ঘোষণা করে সরকার। এতে করে সীমাহীন ভোগান্তিতে পড়েছে ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে আগত ঢাকামুখী মানুষ। সরকারি সিদ্ধান্ত অনুযায়ী ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ জেলার ৩৫ কিলোমিটার অংশে বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন।
তবে সীমিতভাবে ফেরি চলাচল করছে পাটুরিয়া-দৌলতদিয়া এবং আরিচা-কাজিরহাট নৌরুটে। বন্ধ রয়েছে গণপরিবহন পারাপার। শুধুমাত্র সরকার ঘোষিত যানবাহন নৌরুট পারাপারের সুযোগ পাচ্ছে। লঞ্চ ও স্পীড বোট চলাচল বন্ধ থাকায় ফেরিতে করে কিছু কিছু ঢাকামুখী যাত্রীরা নৌরুট পারাপার হচ্ছে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কের মানিকগঞ্জ জেলার অংশটুকুতে গণপরিবহন বন্ধ থাকায় পায়ে হেঁটে এবং রিকশা-ভ্যান, মালবাহী ট্রাকে করে গন্তব্যে যাচ্ছে ঢাকামুখী যাত্রীরা। মহাসড়কের মানিকগঞ্জ জেলার বারবারিয়া বাসস্ট্যান্ড এলাকায় বসেছে পুলিশের চেক পোষ্ট। মানিকগঞ্জ থেকে ঢাকা অভিমুখে এবং মানিকগঞ্জ জেলায় প্রবেশ করতে পারছে না গণপরিবহন। এখানে হাঁটা ছাড়া কোনো উপায় নেই যাত্রীদের। সঙ্গে দুর্যোগপূর্ণ আবহাওয়া হওয়াতে সীমাহীন ভোগান্তির মুখে পড়েছে মানুষ।
বারবারিয়া ব্রিজের পূর্ব পাশে থেকে ঢাকামুখী গণপরিবহন চলছে সীমিতভাবে। সাভারের আমিন বাজার ব্রিজ পর্যন্ত যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে এসব যানবাহন। সেখান থেকে সকল গণপরিবহন আগত পথেই ফিরিয়ে দিচ্ছে ঢাকা মেট্রোপলিটন পুলিশ। কাজেই আমিন বাজার নেমে ফের পায়ে হেঁটে দীর্ঘ পথ পারি দিতে হচ্ছে ঢাকামুখী যাত্রীদের।
অপরদিকে গাজীপুর জেলার চান্দুরা চৌরাস্তা থেকে ঢাকামুখী যাত্রীদেরকে গণপরিবহন থেকে নামিয়ে দিচ্ছে পুলিশ। পরে পাঁয়ে হেঁটে সাভারের বাড়ইপাড়া বাসস্ট্যান্ডে এসে ঢাকামুখী গণপরিবহনে আমিন বাজার যাওয়ার সুযোগ পাচ্ছে যাত্রীরা। এবং আমিন বাজার পৌঁছার আগেই দীর্ঘ যানজটে বসে থাকতে হচ্ছে ঘন্টার পর ঘন্টা।
ঢাকামুখী বাসের দীর্ঘ সারি এসে ছুঁয়েছে হেমায়েতপুর পর্যন্ত। ফলে অনেক যাত্রী মাঝপথে গাড়ি থেকে নেমে পায়ে হেঁটে ঢাকায় পৌঁছার চেষ্টা করছেন। আমিনবাজারের পর বাস শহরে ঢুকতে না দেওয়াতে, দীর্ঘক্ষণপর যারা এখানে পৌঁছাচ্ছেন তাদের পাঁয়ে হেঁটে পৌঁছাতে হচ্ছে গাবতলী।
বারবার যান বহন বদল ও হাঁটাতে বাধ্য হওয়ার কারণে তীব্র ভোগান্তির মুখে পড়েছে যাত্রীরা। আমিন বাজার সাভার রাস্তা চার লেনের কাজ চলমান হওয়ায়, যাত্রীদের হাঁটার পথও মসৃণ নয়, খানাখন্দ, মাটির ঢিবি আর পিচ্ছিল কাদায় ভরা।
মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে যানবাহনের অপেক্ষায় প্রহর গুনতে থাকা যাত্রী আনোয়ার হোসেন বলেন, জরুরী প্রয়োজনে ঢাকা যাবেন তিনি।লকডাউনের বিষয়ে জানা না থাকায় পড়েছেন বিপাকে। নির্ধারিত ভাড়ার কয়েক গুণ ব্যয় করে রাজবাড়ী থেকে মানিকগঞ্জ পর্যন্ত এসেছেন। এবার ঢাকা যাওয়ার জন্য দুই ঘন্টা যাবত মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে অপেক্ষা করছেন।
টাঙ্গাইলের নাগরপুর উপজেলার আক্কাছ মিয়া বলেন, জরুরী কাজে আজকের মধ্যেই ঢাকার মিরপুরে এক আদম ব্যবসায়ীর সঙ্গে বৈঠক রয়েছে। সেখানে পৌঁছাতে না পারলে অপূরনীয় ক্ষতি হয়ে যাবে। তাই তিন হাজার টাকা চুক্তিতে মোটরসাইকেল ভাড়া করে ঢাকা যাওয়ার পথে মানিকগঞ্জ বাসস্ট্যান্ডে এসে আটকে গেছেন। এবার বিকল্প কোন ভাবে ঢাকা যেতে চেষ্টা করছেন বলে মন্তব্য করেন তিনি।
ঢাকামুখী আরও একাধিক যাত্রীদের সঙ্গে আলাপ হলে তারা বলেন, হঠাৎ করে লকডাউন এবং গণপরিবহন বন্ধ থাকায় তাদেরকে বিপাকে পড়তে হয়েছে। মানিকগঞ্জ জেলায় গণপরিবহন পুরোপুরি বন্ধ থাকলেও কালামপুর, ধামরাই, নবীনগর, বাইপাইল, শ্রীপুর, বলিভদ্র, জিরানি, সাভার এলাকায় গণপরিবহন চলছে।
ঢাকা-আরিচা মহাসড়কে যাত্রীবাহী বাস চলাচল বন্ধ থাকায় সিংগাইর-হেমায়েতপুর আঞ্চলিক সড়ক দিয়ে কিছু দূরপাল্লার যানবাহন চলাচল করতে দেখা যায় সরেজমিনে।
নাম প্রকাশে অনিচ্ছুক ডি-লিংক পরিবহনের এক বাসচালক বলেন, রাস্তায় গাড়ি চালানো খুব কঠিন। বিভিন্ন এলাকায় পুলিশের অভিযান। সকালে ঢাকামুখী যাত্রীর চাপ থাকলেও দুপুরে সেই চাপ কমে আসে। আর আমিন বাজার পৌঁছাতেই অনেক সময়, গাড়ি ঘোরানোর জন্যও লাইনে বসে থাকতে হয় দীর্ঘসময়। তারপর ঢাকা থেকে ফিরতি যাত্রী কম। এমন অবস্থা চলমান থাকলে গাড়ি চালানোর কোন উপায় নেই বলে জানান তিনি।
এসব বিষয়ে জানতে চাইলে সাভার হাইওয়ে থানা পুলিশের ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা সাজ্জাদ করিম আমিন বাজারের পর যাত্রীদের ভোগান্তির কথা আমলে নিয়ে বলেন, সরকারি সিদ্ধান্ত বাস্তবায়নে মহাসড়ক এলাকায় কাজ করছে হাইওয়ে পুলিশ। আর সাভারের আমিন বাজার এলাকা থেকে ঢাকামুখী গণপরিবহন ঘুরিয়ে দিচ্ছে ঢাকা মেট্রো পলিটন পুলিশের টিম। কাজেই গাড়ি থেকে নেমে যাত্রীরা বাধ্য হয়ে পাঁয়ে হেঁটে গাবতলী যাওয়ার পর বিভিন্ন উপায়ে গন্তব্যে যাচ্ছেন বলে জানান তিনি।