মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে দুই পুলিশের চাঁদাবাজি
মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে চাঁদাবাজির অভিযোগে সূত্রপুর থানা পুলিশের দুই এসআইকে গ্রেফতার করেছে পল্টন থানা পুলিশ। তারা হলেন- এসআই রহমাত উল্লাহ ও এএসআই রফিকুল ইসলাম। গোয়েন্দা পুলিশ (ডিবি) পরিচয়ে রাজধানীর শান্তিনগরের এক ফ্ল্যাটে গিয়ে এ ঘটনা ঘটায় তারা।
দুই পুলিশ সদস্যকে গ্রেফতারের বিষয়টি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন ডিএমপির মতিঝিল বিভাগের উপ-কমিশনার আব্দুল আহাদ। তবে মাদক সংশ্লিষ্টতার বিষয়টি অস্বীকার করেন তিনি।
গ্রেফতার হওয়া পুলিশের দুজনকে ইতোমধ্যে সাময়িক বরখাস্ত করা হয়েছে বলে জানিয়েছেন ঢাকা মহানগর পুলিশের (ডিএমপি) লালবাগ বিভাগের একজন উর্ধ্বতন পুলিশ কর্মকর্তা দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে নিশ্চিত করেছেন। গ্রেফতারের পর ভুক্তভোগী নাজমুল হক সুমন পল্টন থানায় ওই দুই এসআইকে অভিযুক্ত করে মামলা করেছেন। মামলার কপি দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডের হাতে রয়েছে।
গত ২০ জুন পল্টন থানার পরিদর্শক (তদন্ত) সেন্টু মিয়ার নেতৃত্বে একটি দল সূত্রাপুর থানায় এসে ওই দুজনকে গ্রেফতার করে। গ্রেফতারের বিষয়টি অনেকটা গোপন রেখে তাদের আদালতে পাঠানো হয়েছে বলে জানা গেছে।
পল্টন থানা সূত্রে জানা গেছে, সূত্রাপুরের দুজন পুলিশ শান্তিনগরে আসেন একজন মাদক কারবারিকে ধরার কথা বলে। কিন্তু তারা তাকে না ধরে সামারি করে চলে যান (অর্থাৎ টাকা নিয়ে ছেড়ে দেন)। তবে মামলায় মাদক দিয়ে ফাঁসিয়ে টাকা আদায়ের ঘটনায় প্রথমে দুজন সাধারণ ব্যক্তির নাম পাওয়া যায়। পরে তাদের গ্রেফতার করা হলে তারা পুলিশের দুজন সদস্যের নাম জানায়। এরপরই তাদের গ্রেফতার করা হয়েছে। এ ঘটনায় ফরহাদ হোসেন ও হাসিব হাসান শোভন নামে আরও দুজনকে গ্রেফতার করা হয়।
ভুক্তভোগী নাজমুল হক সুমনের মামলার এজাহার সূত্রে জানা গেছে, তার বাসা শান্তিনগরের ইস্ট্রার্ন পীস ভবনে। সেখানে গত ১৪ জুন রাত ৯টার দিকে সাদা পোশাকে দুজন তাদের বাসার দরজায় নক দেন। ভেতর থেকে সুমনের বাবা দরজা খুলে দিলে তারা নিজেদের ডিবি পুলিশের পরিচয় দিয়ে প্রবেশ করেন। এরপর সুমনের রুমে যান। এরপর রুমের আলমারি, ওয়্যারড্রোব, বিছানা ওলট-পালট করেন। তাদের মধ্যে একজন পকেট থেকে ইয়াবার মতো দেখতে কিছু ট্যাবলেট সুমনের রুমের টেবিলের ওপরে রাখেন। আর সুমন ইয়াবার ব্যবসা করেন বলে হুমকি দেন। এ থেকে বাঁচতে চাইলে তাদের টাকা দিতে হবে বলে জানান। সুমন উপায়ান্ত না পেয়ে তার কাছে থাকা ৫৫ হাজার টাকা তাদের দেন। এ সময় ডিবির পরিচয় দেওয়া একজন সুমনের মোবাইলফোন হাত থেকে কেড়ে নিয়ে তার পরিচিত ফরহাদকে তার বাসায় আসতে বলেন। ফরহাদ রাত ১১টার দিকে সুমনের বাসায় যান। বাসায় যাওয়ার পর ডিবি পুলিশের একজন ফরহাদের হাতে হ্যান্ডকাফ পরান। এসময় তারা বলেন- ফরহাদকে ছাড়াতে হলে তার মোটরসাইকেলটি দিতে হবে এবং পরে ১ লাখ টাকা দিয়ে মোটরসাইকেল নিয়ে আসতে হবে। পরিচিত বিবেচনায় টাকা দেওয়ার শর্তে তারা ফরহাদকে ছেড়ে দেন। যাওয়ার সময় কোন প্রকার বিকল্প ব্যবস্থা গ্রহণ না করার জন্য সতর্ক করেন এবং ফরহাদের মোটরসাইকেলটি নিয়ে যান। ফরহাদ ও শোভন গত ১৬ জুন বেলা ১১টায় সুমনের বাসায় আসেন। শোভন মোটরসাইকেলটি ছাড়িয়ে আনার জন্য সুমনকে চাপ দেন। ফরহাদ এসময় ডিবি পরিচয় দেওয়া দুজনের সঙ্গে একাধিকবার মোবাইলফোনে কথা বলেন এবং সুমনের সঙ্গে ফোনে ধরিয়ে দিলে তারা সুমনকে জানায়- ১ লাখ টাকা পেলে তারা মোটরসাইকেল দিয়ে দিবেন। তখনও তারা বিকল্প কোন ব্যবস্থা নেওয়ার বিষয়ে নিষেধ করে। পরে সুমন বুঝতে পারেন যে- ফরহাদ, শোভন এবং ডিবির পরিচয় দেওয়া দুজন যোগসাজশে পরিকল্পিতভাবে নাটক করে ঘটনাটি ঘটিয়েছেন।
এদিকে সূত্রাপুর থানা থেকে জানা যায়, থানার ভারপ্রাপ্ত কর্মকর্তা (ওসি) ও পরিদর্শক (তদন্ত) এর সঙ্গে কথা বলেই মূলত মাদক ব্যবসায়ী ধরবেন জানিয়ে শান্তিনগর গিয়েছিলেন। কিন্তু তারা মাদক ব্যবসায়ী না ধরে টাকা নিয়ে ফিরে আসেন।
এ প্রসঙ্গে জানতে চাইলে সূত্রাপুর থানার ওসি মামুনুর রশিদ দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, বিষয়টা পল্টন থানাকে জিজ্ঞাস করেন। আমাকে এর মধ্যে জড়াবেন না।