রাজধানীর হাসপাতালগুলোয় বাড়ছে আইসিইউ সংকট
রাজধানীর প্রধান কোভিড হাসপাতালগুলো দ্রুত করোনা আক্রান্ত রোগীতে পূর্ণ হয়ে যাচ্ছে। গত সপ্তাহে প্রায় ৫০ শতাংশ পর্যন্ত সংক্রমণ বৃদ্ধি পাওয়ায় নিবিড় পরিচর্যা কেন্দ্র (আইসিইউ) নিয়েও দেখা দিয়েছে সংকট। ফলে, সংকটাপন্ন রোগীদের চিকিৎসা সেবা পেতে দীর্ঘ সময় ধরে অপেক্ষা করতে হচ্ছে।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল এবং মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালসহ রাজধানীর প্রধান ১০ সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালে রবিবার কোনো আইসিইউ শয্যা ফাঁকা ছিল না।
দুই সপ্তাহের মাথায় কোভিড আক্রান্তদের দৈনিক হাসপাতালে ভর্তির হার ১৫ থেকে ২০০ শতাংশ পর্যন্ত বৃদ্ধি পেয়েছে।
স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য বলছে, রোববার সরকারি কুর্মিটোলা জেনারেল হাসপাতাল, মুগদা মেডিকেল কলেজ হাসপাতাল, বিএসএমএমইউ, ঢাকা মেডিকেল কলেজ, সোহরাওয়ার্দী মেডিকেল কলেজ এবং বেসরকারি ইবনে সিনা, পপুলার, ল্যাব এইড, ঢাকা সেন্ট্রাল ইন্ট্যারন্যাশনাল মেডিকেল কলেজ ও ক্রিসেন্ট হাসপাতালের আইসিইউতে কোন শয্যা ফাঁকা ছিল না।
আইসিইউয়ের জন্য ঢাকার বাইরের রোগীরা ঢাকায় আসছে এবং সিট না পেয়ে তাদের বিভিন্ন হাসপাতালে ঘুরতে হচ্ছে।
ঢাকার ২৮টি সরকারি ও বেসরকারি হাসপাতালের ৮২৫টি আইসিইউ শয্যার মধ্যে ৩১২টি আইসিইউ শয্যা ফাঁকা থাকার কথা স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের তথ্য থেকে জানা গেছে। অন্যদিকে, ৫ হাজার ৫৮৯টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ২ হাজার ৮৪৮টি শয্যা খালি আছে।
রোগীর চাপ বাড়তে থাকায় মৃদু উপসর্গ এবং অক্সিজেন সুবিধার প্রয়োজন নেই এমন রোগীদের ভর্তি না করে হাসপাতাল থেকে ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে।
৪৫ বছর বয়সী আবদুল গনিকে মুগদা হাসপাতাল থেকে যাত্রাবাড়িতে বাসায় ফেরত নিয়ে যাচ্ছিলেন ছেলে সাব্বির আহমেদ। তিনি জানান, আবদুল গনির করোনা শনাক্ত হলেও কোনো মারাত্মক উপসর্গ না থাকায় চিকিৎসকরা তাকে ঘরে থেকে চিকিৎসা গ্রহণের পরামর্শ দিয়েছেন।
অসুস্থ মাকে নিয়ে হাসপাতালে এসেছিলেন মিনাল হোসেন। শুধুমাত্র জটিলতা দেখা দিলেই তাকে হাসপাতালে ভর্তির পরামর্শ দিয়েছেন চিকিৎসকরা।
অন্যদিকে, ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালে ভর্তি থাকা মাকে সাধারণ শয্যা থেকে আইসিইউ শয্যার নিয়ে যেতে শাহানা আক্তারকে দুইদিন অপেক্ষা করতে হয়। শুক্রবার যখন তিনি মাকে নিয়ে হাসপাতালে আসেন, তখনই তার অবস্থা ছিল সংকটাপন্ন। চিকিৎসকরা রোগীকে দ্রুত হাই-ফ্লো অক্সিজেন প্রদানের ব্যবস্থা করেন। রোববার বিকালে তিনি আইসিইউ শয্যা পান।
"গত কয়েকদিনে আমি অন্তত পাঁচজন রোগীকে আইসিইউর অভাবে অন্য হাসপাতালের সন্ধানে চলে যেতে দেখেছি," বলেন শাহানা।
ঢাকা মেডিকেল কলেজ হাসপাতালের পরিচালক ব্রিগেডিয়ার জেনারেল নাজমুল হক চাহিদার তুলনায় আইসিইউ শয্যা কম থাকার বিষয়টি স্বীকার করেন।
তিনি জানান, হাসপাতাল সরাসরি কোনো রোগীকে আইসিইউতে ভর্তি করছে না। কেবলমাত্র কোভিড ওয়ার্ডে চিকিৎসা সেবা গ্রহণকারী রোগীদের জরুরি সেবার প্রয়োজন হলে শয্যা ফাঁকা থাকার সাপেক্ষে তাদের আইসিইউতে স্থানান্তরিত করা হচ্ছে।
"আমাদের মাত্র ২০টি আইসিইউ শয্যা আছে এবং সবগুলো গত ১৫দিন ধরে রোগীতে পরিপূর্ণ," বলেন তিনি।
রবিবার বিকাল পর্যন্ত ঢাকা মেডিকেল কলেজের ৭৮০টি সাধারণ শয্যার মধ্যে ৫৯৫টি শয্যাই পূর্ণ ছিল।
অতিরিক্ত রোগীদের সেবাদানের জন্য হাসপাতালের সুযোগ-সুবিধা বৃদ্ধি করা হলেও কর্তৃপক্ষ জানিয়েছে যে, আগামী দুই-এক সপ্তাহে সংক্রমণ বাড়তে থাকলে চিকিৎসা সেবাদানে বিঘ্ন ঘটবে।
"এক সপ্তাহ আগে আমরা যত রোগীকে ভর্তি করতাম, এখন তার দ্বিগুণ রোগীকে ভর্তি করা হচ্ছে। আগে, দিনে ৮ থেকে ১০ জন রোগী ভর্তি হত। বর্তমানে তা বৃদ্ধি পেয়ে ২৫ থেকে ৩০ জনে এসে দাঁড়িয়েছে," বলেন মুগদা মেডিকেলের পরিচালক ড. অসীম কুমার নাথ।
চিকিৎসক এবং নার্সরাও কোভিড আক্রান্ত হয়ে পড়ছেন বলে উল্লেখ করেন তিনি। ফলে, রোগীর সংখ্যা বাড়ায় চিকিৎসা সেবা প্রদানও কঠিন হয়ে পড়ছে।
এছাড়া, বয়স্ক ব্যক্তিদের প্রাধান্য দিয়ে টিকাদান করা হলে মৃত্যুহার কমবে বলেও পরামর্শ দেন তিনি।
হাসপাতালে আইসিইউ শয্যা সংখ্যা মাত্র ২০টি হলেও কোভিড ওয়ার্ডে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন প্রবাহের ব্যবস্থা আছে। আর তাই, রোগীদের অবস্থা খুব বেশি আশঙ্কাজনক না হলে তাদের আইসিইউতে নেওয়ার প্রয়োজন পড়বে না বলে উল্লেখ করেন তিনি।
বর্তমানে সংক্রমণ প্রতিরোধের বিকল্প নেই বলে মন্তব্য করেন স্বাস্থ্য অধিদপ্তরের মুখপাত্র অধ্যাপক ডা. মো. রোবেদ আমিন।
তিনি বলেন, "রোগীর চাপ বাড়ায় রাজধানীর হাসপাতালগুলোর আইসিইউও দ্রুত পূর্ণ হচ্ছে। তবে ডিএনসিসি মার্কেট হাসপাতালে ২১২ বেডের আইসিইউ স্থাপন করা হয়েছে। সেখানে এখনো বেশকিছু বেড খালি আছে। আশঙ্কাজনক রোগীদের সেখানে পাঠানো হচ্ছে। তবে সংক্রমণ প্রতিরোধের বিকল্প নেই। রোগীর চাপ বাড়তে থাকলে হাসপাতালে জায়গা দেয়া কঠিন হয়ে যাবে।"
"ডেল্টা ভেরিয়েন্ট অনেক বেশি সংক্রামক হওয়ায় রোগী বাড়ছে। তাই সংক্রমণ রোধে সবাইকে সচেতন হওয়ার পাশাপাশি স্বাস্থ্যবিধি মানতে হবে," বলেন ডা. রোবেদ আমিন।