বগুড়ায় করোনা ওয়ার্ডে শয্যা সংকট, ফিরিয়ে দেওয়া হচ্ছে রোগীদের
করোনা চিকিৎসার জন্য নির্ধারিত বগুড়ার সরকারি দুই হাসপাতালে প্রতিদিন গড়ে ৮৫ জন রোগী ভর্তি হতে আসছেন। কিন্তু, ভর্তি নেওয়া হচ্ছে শুধু শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে। তবে ২৫০ শয্যার হাসপাতালটিতে তিল ধারনের জায়গা নেই। এ কারণে মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে কোনো রোগী সুস্থ কিংবা কেউ মারা না গেলে; অর্থাৎ শয্যা খালি না হলে নতুন ভর্তি নেওয়ার সুযোগ নেই।
মোহাম্মদ আলী হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, বিশেষ বিবেচনা ছাড়া হাসপাতালে গত শনিবার থেকে নতুন কোনো রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না।
বগুড়ায় গত ২৪ ঘণ্টায় করোনা আক্রান্ত হয়ে ৭ জন ও উপসর্গ যুক্ত ৯ জন মারা গেছেন। এনিয়ে জেলায় মোট করোনায় মৃত্যুসংখ্যা দাঁড়াল ৪৬৫ জনে।
রোববার (১১ জুলাই) করোনায় মৃত্যুর বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন জেলা ডেপুটি সিভিল সার্জন ডা. মোস্তাফিজুর রহমান তুহিন। তিনি বলেন, গত ২৪ ঘণ্টায় জেলায় ৪৮৭টি নমুনা পরীক্ষায় নতুন করে করোনা শনাক্ত হয়েছেন ১৮৩ জন। এনিয়ে জেলায় মোট করোনা আক্রান্তের সংখ্যা দাঁড়াল ১৫ হাজার ৭০৭ জনে।
বর্তমানে করোনা আক্রান্ত হয়ে জেলায় চিকিৎসাধীন রয়েছেন এক হাজার ৭০৫ জন। এর মধ্যে হাসপাতালে রয়েছেন প্রায় ৬০০ জন। বাকিরা বাড়িতেই চিকিৎসা নিচ্ছেন।
জেলা সিভিল সার্জন কার্যালয় সূত্রে জানা গেছে, দেশে প্রথম দফায় করোনা মহামারি শুরুর পর বগুড়ার ২৫০ শয্যার মোহাম্মদ আলী হাসপাতালকে করোনা রোগীদের বিশেষায়িত হাসপাতাল করা হয়। এখানে কেন্দ্রীয় অক্সিজেন ব্যবস্থা চালু রয়েছে। হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে অন্তত ২০টি। আছে আটটি আইসিইউ বেড।
বগুড়া শহীদ জিয়াউর রহমান মেডিকেল কলেজ (শজিমেক) হাসপাতালে উচ্চমাত্রার অক্সিজেন সরবরাহের সুবিধাযুক্ত ২৫০ শয্যার করোনা ইউনিট চালু করা হয়েছে। হাই-ফ্লো ন্যাজাল ক্যানুলা রয়েছে অন্তত ২৫টি। এছাড়া, বেসরকারি হাসপাতাল টিএমএসএস মেডিকেল কলেজে ২০০ আসন থাকলেও, অক্সিজেন সংকটের কারণে রোগী ১০৫ জনের বেশি ভর্তি করা হচ্ছে না।
জেলা স্বাস্থ্য বিভাগ বলছে, হাসপাতালের সিট সংখ্যা বাড়িয়ে আসলে সংকট মেটানো যাচ্ছে না। এত রোগী মাত্র তিনটি হাসপাতালে ভর্তি করানো সম্ভব নয়। এ কারণে যেসব রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরেশন ভালো তাদেরকে কাউন্সেলিং করে বাড়ি পাঠিয়ে দেওয়া হচ্ছে। কেবল আশঙ্কাজনক অবস্থার রোগীকেই ভর্তি করা হচ্ছে হাসপাতালে। তাতেও সংকট মিটছে না, ফিরে যাচ্ছেন অনেক রোগী।
বগুড়া শহরের বাসিন্দা শাপলা খন্দকার। রোববার দুপুরে তিনি মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে তার স্বজনকে ভর্তি করাতে যান। কিন্তু, হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, আমরা আপাতত হাসপাতালে করোনা রোগী ভর্তি বন্ধ করে দিয়েছি। কারণ, আমাদের এখানে শয্যা সংখ্যার চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন। পরে ফিরে আসেন শাপলা। তার স্বজনকে এখন বাড়িতেই চিকিৎসা দেওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়েছেন।
শনিবার মোহাম্মদ আলীতে ভর্তি না নেওয়ায় হাসপাতালের সামনেই গাইবান্ধার এক রোগীর মৃত্যু হয়েছে। এই বিষয় নিয়ে আলোচনা শুরু হলেও হাসপাতাল কর্তৃপক্ষ বলছে, তাদের প্রতিষ্ঠানে নির্ধারিত বেডের চেয়ে বেশি রোগী ভর্তি রয়েছেন।
অবশ্য মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে গিয়েও দেখা যায়, করোনা ওয়ার্ড রোগীতে ভরপুর। তাদের সঙ্গে থাকছেন রোগীর স্বজনেরাও। বারান্দায়ও অনেক রোগীকে অক্সিজেন সিলিন্ডার দিয়ে রাখা হয়েছে। রোগীদের সেবা দিতে হিমশিম খাচ্ছেন ডাক্তার এবং নার্সরা।
জানতে চাইলে, হাসপাতালের তত্ত্ববধায়ক এটিএম নুরুজ্জামান সঞ্চয় বলেন, মোহাম্মদ আলী হাসপাতালে প্রায় ২৮০ জন রোগী ভর্তি আছেন। শজিমেকে সিট খালি রয়েছে। এ কারণে আমরা শজিমেকে রোগী পাঠিয়ে দিচ্ছি। তবে সংকটাপন্ন রোগীকে আমরা ভর্তি করাচ্ছি। তারপরও প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬৫ জন রোগী এখানে ভর্তির জন্য আসছেন।
তবে শজিমেকে হাতে গোণা কয়েকটি শয্যা খালি রয়েছে। এখানেও করোনা রোগী ভর্তির বিষয়ে কড়াকড়ি আরোপ করা হয়েছে।
হাসপাতালের উপ-পরিচালক ডা. আব্দুল ওয়াদুদ বলেন, করোনা পজিটিভ রোগীর অক্সিজেন স্যাচুরোশন ভালে থাকলে তাকে আমরা শুধু কাউন্সেলিং করেই বাড়ি পাঠিয়ে দিচ্ছি। এখানে ২৫০ সিটের বিপরীতে ২১৩ জন রোগী ভর্তি রয়েছে। তবে প্রতিদিন অন্তত ২৫ থেকে ৩০ জন আশঙ্কাজনক অবস্থায় ভর্তি হতে আসছেন হাসপাতালে।
জেলায় করোনা চিকিৎসার একমাত্র বেসরকারি হাসপাতাল টিএমএসএসের চিত্র সরকারি দুটি হাসপাতালের মতোই। এখানে চিকিৎসাও ব্যয়বহুল। এ কারণে টিএমএসএসে চিকিৎসা নেওয়ার জন্য সাধারণ মানুষ কম আসছেন। কিন্তু সংক্রমণ বেড়ে যাওয়ায় এখানেও রোগীর চাপ বেড়েছে।
হাসপাতালে করোনা রোগীর জন্য ২০ শয্যা থাকলেও এখানে রোগী ভর্তি রয়েছে ১০৫ জন। নতুন রোগী ভর্তি নেওয়া হচ্ছে না অক্সিজেনের অভাবে।
হাসপাতালটির মুখপাত্র ডা. আব্দুর রহিম রুবেল গণমাধ্যমকে বলেন, আমাদের কোন সেন্ট্রাল অক্সিজেন লাইন নেই। সিলিন্ডারের মাধ্যমে রোগীকে অক্সিজেন দেওয়া হয়। আমাদের হাসপাতালের সিট ২০০টি হলেও অক্সিজেন স্বল্পতার জন্য আমরা ১০৫ জনের বেশি রোগী ভর্তি করতে পারছি না। তাই আমরা নতুন রোগীদের ফিরিয়ে দিচ্ছি।
জেলায় হাসপাতালগুলোতে শয্যা সংখ্যা বাড়ানোর কোনো পরিকল্পনা আছে কিনা জানতে চাইলে ডেপুটি সিভিল সার্জন মোস্তাফিজুর রহমান বলেন, 'এ ক্ষেত্রে আমি আলাদা কোনো পরিকল্পনার কথা শুনি। তবে শজিমেকে আরও ৫০ শয্যা বাড়ানোর কথা শুনেছি।'