চট্টগ্রামে জোরদার হচ্ছে সিআরবি রক্ষা আন্দোলন
বন্দরনগরীর ফুসফুস খ্যাত চিরসবুজ সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণের চুক্তি বাতিলের দাবিতে চট্টগ্রামে বিক্ষোভ অব্যাহত রয়েছে। এ আন্দোলনে তারুণ্যের পাশাপাশি সংহতি প্রকাশ করছে নানা বয়স, শ্রেণি-পেশার মানুষ, সামাজিক-সাংস্কৃতিক সংগঠন, রাজনৈতিক নেতৃবৃন্দ এবং পরিবেশবাদী সংগঠন।
সিআরবিতে হাসপাতাল চায় না চট্টগ্রাম সিটি করপোরেশন, চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষ (সিডিএ) ও পরিবেশ অধিদপ্তরও। সব মিলিয়ে প্রতিদিনই জোরদার হচ্ছে সিআরবি রক্ষা আন্দোলন।
নাগরিক সমাজ চট্টগ্রামের উদ্যোগে সোমবার ষষ্ঠ দিনের মতো সিআরবি এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণের প্রস্তাবিত স্থানের সামনে আয়োজন করা হয় প্রতিবাদী অবস্থান কর্মসূচি ও সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের।
গান-নাচ, কবিতা, মূকাভিনয় ও কথামালায় সিআরবির প্রাণ-প্রকৃতি ধ্বংস করে হাসপাতাল নির্মাণের প্রক্রিয়ার প্রতিবাদ জানিয়েছেন চট্টগ্রামের সর্বস্তরের সংস্কৃতিকর্মীরা। প্রতিবাদী সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের সাথে একাত্মতা প্রকাশ করতে এসেছিলেন আমজনতা। বাদ যায়নি শিশুরাও।
ইতোমধ্যেই সিআরবিতে এলাকায় হাসপাতাল নির্মাণ না করতে সরকারের সংশ্লিষ্ট দপ্তর বরাবর দুটি আইনি নোটিশ পাঠানো হয়েছে।
বাংলাদেশ পরিবেশ আইনবিদ সমিতি (বেলা), বাংলাদেশ পরিবেশ আন্দোলন (বাপা), অ্যাসোসিয়েশন ফর ল্যান্ড রিফর্ম অ্যান্ড ডেভেলপমেন্ট (এএলআরডি), নিজেরা করি এবং পরিবেশ বাঁচাও আন্দোলন (পবা)'র পক্ষ থেকে একটি এবং বাংলাদেশ হিউম্যান রাইটস ফাউন্ডেশনের ট্রাস্টি অ্যাডভোকেট জিয়া হাবীব আহসানের পক্ষে সুপ্রিম কোর্টের আইনজীবী হাসান এম এস আজিম আর একটি নোটিশ পাঠিয়েছেন।
বাপা চট্টগ্রাম চ্যাপ্টারের সাধারণ সম্পাদক প্রফেসর এ বি এম আবু নোমান বলেন, "বাংলাদেশের সংবিধানের ১৮ক ধারা অনুসারে রাষ্ট্র বর্তমান ও ভবিষ্যৎ নাগরিকদের জন্য পরিবেশ সংরক্ষণ ও উন্নয়ন করবে এবং প্রাকৃতিক সম্পদ, জীব-বৈচিত্র্য, জলাভূমি, বন ও বন্যপ্রাণির সংরক্ষণ ও নিরাপত্তা বিধান করবে। সিআরবি এলাকায় প্রস্তাবিত প্রকল্পটি সাংবিধানিক প্রতিশ্রুতির স্পষ্ট লঙ্ঘন।"
পরিবেশ অধিদপ্তর চট্টগ্রামের পরিচালক মোহাম্মদ নুরুল্লাহ নুরী বলেন, "কোনো হেরিটেজে বাণিজ্যিক স্থাপনা কাম্য নয়।"
সিআরবিকে নগরবাসীর হৃদপিণ্ড আখ্যায়িত করে চট্টগ্রাম সিটি কর্পোরেশনের সাবেক প্রশাসক খোরশেদ আলম সুজন বলেন, "যারা জনগণের হৃদপিণ্ড ছিন্ন করতে চায় তাদের উদ্দেশ্য ভালো না।"
চট্টগ্রাম উন্নয়ন কর্তৃপক্ষের প্রধান প্রকৌশলী কাজী হাসান বিন শামস জানান, "সিআরবিতে যেকোনো ধরনের বাণিজ্যিক স্থাপনা মাস্টারপ্ল্যানের লঙ্ঘন। ১৯৯৯ সালের ৯ ডিসেম্বর প্রজ্ঞাপন জারি করে চট্টগ্রাম নগরে মাস্টারপ্ল্যান কার্যকর করে সরকার। সেখানে সিআরবির মতো হেরিটেজকে রক্ষা করার কথা বলা হয়েছে।"
বিএনপির স্থায়ী কমিটির সদস্য আমীর খসরু মাহমুদ চৌধুরী বলেন, "চট্টগ্রামের ঐতিহ্যের স্বার্থে সিআরবিকে রক্ষা করতে হবে। প্রকৃতির সাথে বসবাসের চট্টগ্রামবাসীর যে অধিকার সিআরবিতে হাসপাতাল নির্মাণ করলে তা কেড়ে নেয়া হবে। এখানে হাসপাতাল নির্মাণ করা হলে তা চট্টগ্রামবাসীর সাথে 'অবিচার' করা হবে।"
হাসপাতাল নির্মাণের চুক্তির সংবাদে উদ্বোগ প্রকাশ করেছে ইঞ্জিনিয়ার্স ইনস্টিটিউশন বাংলাদেশ (আইইবি) চট্টগ্রাম কেন্দ্র। কেন্দ্রের চেয়ারম্যান প্রকৌশলী প্রবীর কুমার সেন বলেন, "প্রায় ৭০ লক্ষ লোকের বাসস্থান বন্দর নগরী চট্টগ্রামে একটি আন্তর্জাতিক মানের আধুনিক হাসপাতালের প্রয়োজন অবশ্যই আছে। এজন্য রেলওয়েসহ নগরীর বিভিন্ন সরকারি প্রতিষ্ঠানের অনেক জায়গা রয়েছে। কিন্তু প্রকৃতির বিশাল সম্পদে পরিপূর্ণ চট্টগ্রামের ফুসফুস হিসেবে পরিচিত সিআরবিতে এটি হতে পারে না।"
সিআরবিতে বাণিজ্যিক হাসপাতাল স্থাপনের প্রতিবাদে প্রকল্প এলাকায় বৃক্ষরোপণ করেছে কনজ্যুমারস অ্যাসোসিয়েশন অব বাংলাদেশ (ক্যাব) চট্টগ্রাম, নগর বিএনপি, সার্ক মানবাধিকার ফাউন্ডেশন, ক্যাব যুব গ্রুপ, লায়ন্স ও লিও প্রগ্রেসিভ ওয়েস্ট, তিলোত্তমা চট্টগ্রামসহ বিভিন্ন সামাজিক সাংস্কৃতিক সংগঠন।