জমে উঠেনি কোরবানির ঈদ কেন্দ্রিক বাণিজ্য
কোরবানির ঈদ কেন্দ্রিক বাণিজ্য, যেমন মশলা, ছুরি-চাপাতি, সেমাই-নুডুলস, পশুর খাবার, পাটি-খাইটা ইত্যাদির বেচাবিক্রি এ বছর আশানুরূপভাবে জমে উঠেনি। কিছু কিছু পণ্য বিক্রি হচ্ছে গত বছরের তুলনায় অনেক কম।
রাজধানীর বিভিন্ন বাজার ও পশুর হাট ঘুরে ব্যবসায়ীদের সাথে কথা বলে এমন চিত্রই পাওয়া গেছে।
এমনকি ক্ষুদ্র, মৌসুমী ব্যবসায়ীরা চালান উঠবে কিনা সেই আতঙ্কের মধ্যে দিন পার করছেন। বিক্রির জন্য তাদের হাতে এখন শুধু আজকের দিনটাই রয়েছে।
খিলগাঁওয়ের অস্থায়ী দোকানে গরুর খাবার বিক্রেতা মোঃ খাইরুল ইসলাম বলেন, "এ বছর পশুর খাবার খুব বেশি চলছে না। মানুষ অল্প করে নিয়ে চলে যাচ্ছে। আমি ২০,০০০ টাকা বিনিয়োগ করেছি। সেটা উঠাতেই কষ্ট হবে মনে হচ্ছে"।
খিলগাঁও পাইকারি বাজারের মুদি দোকানী মোহাম্মদ হালিম বলেন, "সেমাই-নুডুলস বা মিষ্টান্ন তৈরির পণ্য বিক্রি গত বছরের চেয়ে অনেক কম। আসলে এ বছর ঈদে মানুষের মধ্যে তেমন উত্তেজনা লক্ষ্য করা যাচ্ছে না"।
মালিবাগ বাজার ও কারওয়ান বাজারের কয়েকজন ব্যবসায়ীর সাথে কথা বলেও একই চিত্র পাওয়া যায়।
সাধারণত কোরবানির ঈদে কামারদের দম ফেলার ফুরসত থাকতো না। টানা দুই সপ্তাহের লকডাউনের কারণে এবার তেমন ব্যস্ততা নেই কামারদের। দিনের বেশির ভাগ সময় কাটে অলস। দোকান খোলা রাখলেও ক্রেতা নেই। ঈদের আগে এক মাস জুড়ে কামারদের ব্যস্ততা বেড়ে যেতো। কিন্তু এবার সম্পূর্ণ ভিন্ন চিত্র।
কারওয়ান বাজারের কামারশালার এক দোকানি রহিম শেখ বলেন, "কোরবানি ঈদের এক মাস আগে থেকেই দা, ছুরি, বটি, চাপাতিসহ নানা ধরনের হাতিয়ার তৈরির কাজ শুরু হতো। পাশাপাশি থাকতো পুরাতন হাতিয়ারের মেরামতের কাজ। কিন্তু লকডাউনের কারণে সব শেষ। এইবার তো কাজে কোনো ব্যস্ততা নেই। ঈদ আসতে বাকি না থাকলেও কাজের চাপ বাড়েনি। আগে প্রায় ১ মাস জুড়ে কাজ করতাম দিন-রাত"।
কারওয়ান বাজারের মশলার দোকান জাকির এন্টারপ্রাইজের স্বত্বাধিকারী হেলাল বলেন, "গত বছরের তুলনায় মশলার বিক্রি সামান্য কিছুটা কমেছে এ বছর। আসলে মানুষের আয় কমে যাওয়ায় এবার মানুষ অতিরিক্ত কোন খরচ করতে চাচ্ছে না। যতটুকু দরকার শুধু সেটিই কিনছেন"।
খিলগাঁও-এর পাটি বিক্রেতা মোহাম্মদ কামরুল বলেন, "রোববার সকাল থেকে আমরা এখানে বসা শুরু করেছি। তবে এখন পর্যন্ত খুব ভালো বিক্রি বলা যাবে না। ত্রিশটার মত পাটি বিক্রি হয়েছে, আয় হয়েছে ৫০০০ টাকার মত। ৫০০টি পাটি এনেছি"।
"গত বছর আমরা প্রথম দিন থেকেই খুব ভালো বিক্রি করেছি। দুই দিনের মধ্যে আমাদের সকল পাটি শেষ হয়ে গিয়েছিল", তিনি যোগ করেন।
খিলগাঁও বাজারের হার্ডওয়ারের দোকান মালিক মোঃ বশির বলেন, "এই ঈদে ছুরি ও চাপাতি বেশি চলে। তবে এবার বেচাকেনা কিছুটা কম। গত বছর এমন সময় এই মার্কেটে মানুষের ভিড় লেগে যেত। আমরা সকাল থেকে গভীর রাত পর্যন্ত ক্রেতাদের নিয়ে ব্যস্ত থাকতাম"।
এদিকে পশুর জন্য ঘাস ও কাঁঠালপাতা বিক্রেতা বিমালা আক্তার বলেন, "আমি ইট ভাঙার কাজ করি এবং প্রতিবছর কোরবানির ঈদকে সামনে রেখে ঘাস ও পাতা বিক্রি করি"।
"গত বছরে আমি এই কোরবানির সময়ে দুই দিনে ২৫০০ টাকা লাভ করেছি, ৩০০০ টাকা বিনিয়োগ করে। এবছরও ৩০০০ টাকার ঘাস এনেছি। কিন্তু তেমন একটা চলছে না। গত দুই দিনে মাত্র ১২০০ টাকার মত বিক্রি হয়েছে"।
তিনি বলেন, "আমাদের প্রতি আঁটি ঘাস কেনা পড়েছে ১২ টাকা করে, বিক্রি করি ১৫ থেকে ২০ টাকা দরে"।
জামালপুরের শেরপুর থেকে রাজধানীতে খাইটা বিক্রি করতে আসা মোঃ সুলতান বলেন, "আমি একটি স'মিলে মিস্ত্রির কাজ করি। কোরবানির ঈদের সময় খাইটা বিক্রি করি। আমি ৩০০টি খাইটা নিয়ে আসছি। ৮০টির মত বিক্রি হয়েছে গত দুইদিনে। সামনে আছে একদিন। মনে হয় সব বেঁচতে পারব না"।
"এই খাইটা জামালপুর থেকে আনতে অনেক টাকা ট্রাক ভাড়া দিতে হয়েছে, আবার যদি ফেরত নিতে হয় তাহলেও অনেক খরচ হবে। লাভ থাকবে বলে মনে হয় না। গত বছর সব খাইটা বিক্রি করতে পেরেছিলাম", তিনি যোগ করেন।
দামের বিষয়ে তিনি জানান, বড় খাইটা ৪০০ থেকে ৪৫০ টাকায় ও ছোটগুলো ২০০-২৫০ টাকায় বিক্রি হয়ে থাকে।