দারিদ্র্যের হার কমাতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত নগদ অর্থ সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ ইআরডি-র
দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনতে ২০২৬ সাল পর্যন্ত দরিদ্র খানাগুলোকে বছরে তিন থেকে ছয়মাস ব্যাপী মাসে ৫ হাজার টাকা হারে নগদ সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করেছে অর্থ মন্ত্রণালয়ের অর্থনৈতিক সম্পর্ক বিভাগ (ইআরডি)।
বছরে তিন মাস করে এই সহায়তা দেওয়া হলে ছয় বছরে সরকারের ৭,৭০০ কোটি টাকা ব্যয় হবে। আর ছয় মাস সহায়তা দেওয়া হলে ব্যয় হবে ১,৫৩০ কোটি টাকা।
ইআরডির প্রস্তুত করা একটি পজিশন পেপার অনুসারে, এতে প্রতি বছর ১২.২ শতাংশ হারে দারিদ্র্য কমে ২০২৬ সালে স্বল্পোন্নত দেশ থেকে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের সময় বাংলাদেশের দরিদ্র মানুষের সংখ্যা কমে দাঁড়াবে ১.৭৪ কোটিতে।
প্রতিবেদনটি ইতিমধ্যে প্রধানমন্ত্রীর কার্যালয়ে পাঠানো হয়েছে বলে জানিয়েছেন ইআরডির কর্মকর্তারা।
ইআরডি প্রথম বছরে ১১.৫ লাখ দরিদ্র খানাকে এই সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করেছে। পরের বছরগুলোতে ধীরে ধীরে এ ধরনের পরিবারের সংখ্যা কমিয়ে ২০২৬ সালে ৬ লাখ খানাকে সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করা হয়েছে।
গত বছরের মার্চে দেশে করোনা সংক্রমণ শুরু হওয়ার পর কয়েক ধাপে দরিদ্র কর্মহীন খানাগুলোকে সরকার ২৫০০ টাকা করে নগদ সহায়তা দিয়েছে।
নগদ সহায়তায় টাকার পরিমাণ দ্বিগুণ করে এটিকে আরও অর্থবহ করার সুপারিশ করে প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, তিন মাস নগদ সহায়তা দেওয়া হলে প্রতি বছর ব্যয় হবে ১,৭২৫ কোটি টাকা। ছয় মাস ধরে সহায়তা দেওয়া হলে ব্যয়ের পরিমাণ দ্বিগুণ হবে। এর পরের বছরগুলোতে ব্যয়ের পরিমাণ কমতে থাকবে।
শেষ বছরে তিন মাসে ব্যয় হবে ৯০৩ কোটি টাকা এবং ৬ মাসে ব্যয় হবে ১,৮০৫ কোটি টাকা।
প্রথম তিন মাস সহায়তা দেওয়ার পর এর ফলাফল মূল্যায়ন করে পরের তিন মাস সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করেছে ইআরডি।
ইআরডি প্রণীত 'অ্যাসেসিং দ্য ইফেক্ট অফ কোভিড-১৯ অন সোশাল প্রটেকশন ইন বাংলাদেশ অ্যান্ড গ্র্যাজুয়েশন ট্র্যাজেক্টরি' শীর্ষক এই পজিশন পেপারে দারিদ্র্যের হার কমাতে নগদ সহায়তা বাড়ানোর পাশাপাশি ব্যাপক হারে কর্মসৃজন কর্মসূচি চালু করার সুপারিশ করা হয়েছে। এছাড়াও শিক্ষা ও পুষ্টিকে প্রাধান্য দিয়ে দ্রুত মানবসম্পদের উন্নয়নের সুপারিশও করা হয়েছে এ প্রতিবেদনে।
ইআরডির প্রতিবেদনটিতে শ্রমবান্ধব ঋণ কর্মসূচি চালু করাসহ চতুর্থ শিল্প বিপ্লবের সঙ্গে মানানসই মানবসম্পদ গড়ে তুলতে পর্যাপ্ত প্রশিক্ষণ ও দক্ষতা উন্নয়ন কর্মসূচি চালুর সুপারিশও করা হয়েছে।
এলডিসি থেকে উত্তরণের সার্বিক বিষয় দেখভাল করতে ইআরডির নেয়া 'সাপোর্ট টু সাস্টেইনেবল গ্র্যাজুয়েশন' শীর্ষক প্রকল্পের আওতায় তৈরি করা এই পজিশন পেপারে বলা হয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীর ওপর ভর করে গত দুই দশকে দেশে দারিদ্র্যের হার এক-পঞ্চমাংশে নেমে এসেছিল।
সাম্প্রতিক বছরগুলোতে সামাজিক নিরাপত্তায় বরাদ্দের পরিমাণ বাড়লেও নগদ সহায়তার অর্ধেকই ব্যয় হচ্ছে সরকারি চাকরিজীবীদের পেনশন ও সঞ্চয়পত্রে বিনিয়োগকারীদের পেঁছনে, যাদের কেউই গরীব নয়।
চলতি অর্থবছরে সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে বরাদ্দের পরিমাণ ১ লক্ষ ৭ হাজার ৬১৪ কোটি টাকা। তবে এর অর্ধেকেরও বেশি বরাদ্দ থেকে সরাসরি দরিদ্ররা লাভবান হয় না। মোট বরাদ্দের প্রায় ২৫ শতাংশ পেনশন, ৯ শতাংশ সঞ্চয়পত্রের সুদের জন্য বরাদ্দ রাখা হয়েছে। এছাড়া, এসএমই ও ক্ষুদ্রঋণের সুদে ভর্তুকিতে ১০ শতাংশ এবং কোভিড নিয়ন্ত্রণ তহবিলে ১৯ শতাংশ বরাদ্দ দেখানো হয়েছে।
ইআরডির প্রতিবেদন অনুসারে, কোভিডপূর্ব সময়ে দেশে দারিদ্র্যের হার ছিল ২০.৫ শতাংশ। লকডাউনে কর্ম হারানোর কারণে এ হার বেড়ে দাঁড়িয়েছে ২৩ শতাংশে। অর্থাৎ দেশে বর্তমানে দরিদ্র মানুষের সংখ্যা ৩.৭৯ কোটি। এর মধ্যে মহামারিতে গত এক বছরে নতুন দরিদ্র হয়েছে প্রায় ৪৫ লক্ষ মানুষ।
যদিও বেসরকারি গবেষণা সংস্থা সেন্টার ফর পলিসি ডায়ালগ (সিপিডি) ও সাউথ এশিয়ান নেটওয়ার্ক ফর ইকোনমিক মডেল (সানেম)-সহ বিভিন্ন প্রতিষ্ঠানের হিসাবে মহামারির কারণে নতুন করে দারিদ্র হওয়া জনগোষ্ঠীর সংখ্যা ২ কোটি থেকে আড়াই কোটির মতো।
অবশ্য ইআরডির প্রতিবেদনে বাংলাদেশ উন্নয়ন গবেষণা প্রতিষ্ঠানের বরাত দিয়ে বলা হয়েছে, কোভিডের কারণে ১.৬৪ কোটি মানুষ দরিদ্রের কাতারে নেমে গেছে।
বাংলাদেশ হাউজহোল্ড ইনকাম অ্যান্ড এক্সপেন্ডিচার সার্ভে-২০১৬ অনুযায়ী, হতদরিদ্রদের মাথাপিছু খরচ ১,৮৬২ টাকা। এর সঙ্গে মূল্যস্ফীতি সমন্বয় করলে এখন এর পরিমাণ দাঁড়ায় ২,৩২৯ টাকা।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, চার সদস্যের একটি খানার মাসিক সর্বনিম্ন ব্যয় ৯,৩১৬ টাকা। এর মধ্যে খাবারের জন্য ব্যয় হয় ৫,১২৩ টাকা। এ প্রেক্ষাপটেই খানাপ্রতি মাসে ৫০০০ টাকা হারে সহায়তা দেওয়ার সুপারিশ করেছে ইআরডি।
ইআরডির প্রতিবেদন তৈরির সময় ব্যক্তিগত পরামর্শদাতা হিসেবে কাজ করেছেন ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অর্থনীতি বিভাগের অধ্যাপক ড. ফিরদৌসী নাহার।
দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে তিনি বলেন, 'জনবহুল গরিব দেশ হিসেবে আমাদের অনেক সমস্যা আছে। তাই আগামী কয়েক বছরে দারিদ্র্যের হার ৪-৫ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্য নির্ধারণ করা হবে খুবই উচ্চাকাঙ্ক্ষী ও বাস্তবতাবর্জিত। তাই উন্নয়নশীল দেশে গ্র্যাজুয়েশনের বছর, ২০২৬ সালের মধ্যে দারিদ্র্যের হার ১০ শতাংশে নামিয়ে আনার লক্ষ্যটা মোটামুটি যৌক্তিক মনে হয়েছে।'
ড. ফিরদৌসী আরও বলেন, প্রথমে কিছু খানাকে তিন মাস নগদ সহায়তা দিয়ে এর ফলাফল মূল্যায়ন করতে হবে। এ সময়ে তাদের টিকাদান, দক্ষতা উন্নয়ন ও কর্মসংস্থানের ব্যবস্থা করতে পারলেই কেবল এ ধরনের সহায়তার সুফল পাওয়া যাবে।
তিন মাস সহায়তা চালাতে প্রথম বছর জিডিপির ০.০৬ শতাংশ এবং ছয় মাসের জন্য ০.১২ শতাংশ ব্যয় করতে হবে। শেষ বছরে এ খরচের পরিমাণ অর্ধেকে নেমে আসবে।
ড. ফিরদৌসীর মতে, উন্নয়নশীল দেশে রূপান্তরের স্বার্থে এই পরিমাণ বিনিয়োগ খুব বড় কিছু নয়।
সিপিডির সম্মানীয় ফেলো অধ্যাপক ড. মোস্তাফিজুর রহমান বলেছেন, দারিদ্র্যের হারকে এলডিসি থেকে উত্তরণের মানদণ্ড বিবেচনা করা হয় না।
মাথাপিছু আয়, মানবসূচক উন্নয়ন সূচক ও অর্থনৈতিক ভঙ্গুরতা সূচক—এ তিনটি মানদণ্ড পূরণ করে ২০২৬ সালে বাংলাদেশ উন্নয়নশীল দেশের কাতারে নাম লেখাবে।
ড. মোস্তাফিজুর রহমান আরও বলেন, 'তবে উন্নয়নশীল দেশে উত্তরণের বছরে দারিদ্র্যের হার উল্লেখযোগ্যভাবে সম্মানজনক স্তরে নামিয়ে আনার প্রত্যাশা ও লক্ষ্য থাকা উচিত আমাদের।'
সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির সিংহভাগ অংশের উপকারভোগীই অদরিদ্র
ইআরডির প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির সবচেয়ে বেশি বরাদ্দ এমন মানুষরা পায়, যারা গরিব নয়।
অর্থ বিভাগের তথ্য বিশ্লেষণ করে প্রতিবেদনটিতে দেখানো হয়েছে, ১২২টি সামাজিক নিরাপত্তা প্রকল্পের মধ্যে সবচেয়ে বড় ১১টি প্রকল্পের জন্যই সম্মলিত বরাদ্দের ৬০ শতাংশ খরচ করা হয়।
এর মধ্যে দুটি কর্মসূচি—অবসরপ্রাপ্ত সরকারি কর্মচারীদের পেনশন এবং সঞ্চয়পত্রের বিপরীতে সুদ প্রদানেই নগদ অর্থ লেনদেনের ৫০ শতাংশ ব্যয় হয়। অথচ এই দুটি কর্মসূচির আওতায় যে শ্রেণির মানুষকে টাকা দেওয়া হচ্ছে, তারা সবাই-ই দারিদ্র্যসীমার ওপরে।
এ প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, কোভিড মহামারির কারণে অনানুষ্ঠানিক খাতে যে বিপুলসংখ্যক মানুষ কর্মহীন হয়েছেন, তাদেরকে এই নগদ অর্থ সহায়তা কর্মসূচির আওতায় রাখা হয়নি।
এই মানুষগুলো যেমন সামাজিক নিরাপত্তা সংস্থাগুলোর স্বীকৃতি পায়নি, তেমনি আনুষ্ঠানিক খাতেও তাদের কর্মসংস্থানের হয়নি। ফলে তারা সবদিক দিয়েই বিপদের মুখে আছেন। অথচ শ্রমশক্তির সিংহভাগই এই অনানুষ্ঠানিক খাতের মানুষগুলোকে নিয়ে গঠিত। অনানুষ্ঠানিক খাতের যেসব কর্মী অন্য কোনো কর্মসূচির আওতাভুক্ত নন, তাদেরকেও নগদ অর্থ প্রদান কর্মসূচির আওতায় আনা উচিত।
ভারতের মতো কর্মসংস্থান কর্মসূচি বাড়ানোর পরামর্শ
অদক্ষ লোকদের জীবনমান বজায় রাখতে ইআরডির প্রতিবেদনে সরকারকে ভারত সরকারের পথে হেঁটে 'বিস্তৃত অর্থনৈতিক প্রণোদনা' হিসেবে কর্মসংস্থান কর্মসূচি বাড়ানোর পরামর্শ দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, বিশ্বের বৃহত্তম কর্মসংস্থান কর্মসূচি, ভারতের এমজিএনআরইজিএ (মহাত্মা গান্ধী ন্যাশনাল রুরাল এমপ্লয়মেন্ট গ্যারান্টি অ্যাক্ট)-এর কার্যক্রম উল্লেখযোগ্য হারে বাড়ানো হয়েছে। বহু শ্রমিকের জন্য—বিশেষত যেসব জেলায় বিপুলসংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক দেশে ফিরে এসেছে—ত্রাতা হয়ে এসেছে এই কর্মসূচি।
ভারত সরকার ২০২০–২১ সালে এমজিএনআরইজিএ কর্মসূচির বাজেট প্রায় দ্বিগুণ করেছে। এই প্রকল্পের আওতায় ইতিমধ্যে ২০২০ সালের প্রথম প্রান্তিকে ১.২৫ বিলিয়ন দিনের মজুরি দেওয়া হয়েছে।
প্রতিবেদনে হতাশা প্রকাশ করে বলা হয়, মহামারিকালের বাজেটে বাংলাদেশে কর্মসংস্থান কর্মসূচির জন্য বরাদ্দ সামগ্রিকভাবে কমেছে।
দক্ষতা ছাড়া অর্থপ্রদানে ঝুঁকি
সম্পদ ও অর্থ প্রদানের পাশাপাশি সরকারকে মানুষের দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর পরামর্শ দিয়েছে ইআরডি। মহামারিকালের বাজেটে শ্রম বাজারের মাধ্যমে সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির বরাদ্দ উল্লেখযোগ্য পরিমাণে বাড়লেও সামাজিক ক্ষমতায়নের জন্য বরাদ্দ এবং দক্ষতা ও সক্ষমতা বাড়ানোর জন্য বরাদ্দ ৫০ শতাংশে নেমে গেছে।
প্রতিবেদনে বলা হয়, 'দরিদ্রদের দক্ষতা ও সামর্থ্য বাড়িয়ে তাদেরকে ফরওয়ার্ড লিঙ্কেজের শৃঙ্খলে যুক্ত করার চেষ্টা না করেই তাদের হাতে নগদ টাকা বা সম্পদ তুলে দিলে এই দরিদ্রদের আরও দারিদ্র্যের দিকে ঠেলে দেওয়ার উচ্চ ঝুঁকি থেকে যায়।'
কম সামাজিক নিরাপত্তা দেওয়া কর্মসূচিগুলো স্থগিত রাখা
সামাজিক নিরাপত্তার ওপর সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনী কর্মসূচির যেসব প্রকল্পের প্রভাব একেবারেই কম, সেগুলো স্থগিত করার পরামর্শ দিয়েছে ইআরডি। তার বদলে মৌলিক চাহিদা পূরণে এবং তহবিলের ওপর চাম কমাতে পরামর্শ দেওয়া হয়েছে সরকারকে।
শহরের দরিদ্র গৃহহীনদের জন্য গৃহনির্মাণের বরাদ্দ প্রভূত পরিমাণে বেড়েছে। ২০২০ অর্থবছরে যেখানে এ প্রকল্পে বরাদ্দ ছিল ১ শতাংশেরও কম, ২০২১ অর্থবছরে তা বেড়ে ২৫ শতাংশ হয়েছে।
এ জাতীয় কর্মসূচিগুলো গুরুত্বপূর্ণ হলেও আপাতত স্থগিত রেখে এই মুহূর্তে দরিদ্রদের পাতে খাবার তুলে দেওয়ার দিকে নজর দেওয়া উচিত।
শহরের জন্য মোট বরাদ্দের ৬ শতাংশ বর্তমানে দুটি কর্মসূচিতে রয়েছে, যা থেকে দরিদ্ররা পরোক্ষভাবে উপকৃত হয়। প্রকল্প দুটি হচ্ছে আরবান পাবলিক এনভায়রনমেন্টাল হেলথ সেক্টর ডেভলপমেন্ট প্রজেক্ট (ইউপিইএইচএসডিপি) এবং আরবান রেজিলিয়েন্স প্রজেক্ট (ইউআরপি)।
শহুরে দারিদ্র্যের ওপর গুরুত্ব দেওয়া
কোভিডপূর্ব প্রবৃদ্ধি ধরে রাখার জন্য শহুরে দারিদ্র্যের ওপর জোর দিতে বলা হয়েছে ইআরডির প্রতিবেদনে।
অর্থনীতি পুনরুদ্ধারে ও মহামারিপূর্ব অবস্থায় ফিরিয়ে নিতে দরিদ্র শ্রমজীবী শ্রেণিকে যৌক্তিক সময়ের জন্য যৌক্তিক পরিমাণে প্রত্যক্ষ সহায়তা প্রদান অত্যন্ত গুরুত্বপূর্ণ।
মহামারিতে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত জনগোষ্ঠী সম্ভবত বাংলাদেশের শহুরে দরিদ্র শ্রেণি। গ্রামের অনেক পরিবারই শহরে বসবাসরত উপার্জনকারী সদস্যের ওপর নির্ভরশীল। সে কারণে শহুরে দরিদ্ররা ক্ষতিগ্রস্ত হলে গ্রামীণ অর্থনীতিও ক্ষতিগ্রস্ত হয়।
রিকশাচালক, ফুটপাতের ব্যবসায়ী, গৃহকর্মী, শিক্ষানবিশ কর্মীরা কর্মহীন হয়ে পড়ায় অথবা তাদের আয় ব্যাপকভাবে কমে যাওয়ায় শহরের অনানুষ্ঠানিক খাত বিশাল ধাক্কা খেয়েছে।
অনিয়ম কমাতে ব্রাজিল ও থাইল্যান্ডকে অনুসরণের পরামর্শ
সামাজিক নিরাপত্তা বেষ্টনীতে দেওয়া বরাদ্দের অপব্যবহার কমাতে থাইল্যান্ড ও ব্রাজিলের মতো বরাদ্দ পাওয়া প্রত্যেক ব্যক্তির তথ্যসংবলিত একটি একক ডেটাবেজ গড়ে তুলে সরকারকে অনুরোধ করেছে ইআরডি।
পরীক্ষিত ব্যবস্থার অভাবে সরকারের এককালীন অর্থ প্রদান কর্মসূচি লকডাউনে সবচেয়ে ক্ষতিগ্রস্ত হওয়ার ঝুঁকিতে থাকা মানুষদের দুয়ার পর্যন্ত নিয়ে যাওয়া যায়নি বলে উল্লেখ করা হয় ইআরডির প্রতিবেদনে।
উপকারভোগীদের শনাক্তকরণ ও অর্থ বিতরণ সংক্রান্ত জটিলতাও ছিল। অনানুষ্ঠানিক খাতের কর্মীদের মধ্যে অর্থ বিতরণে অনিয়মের উদাহরণ দিতে গিয়ে বলা হয়, একই ফোন নম্বর ব্যবহার করে ২০০ ব্যক্তির নামে টাকা বিতরণ করার ঘটনা ঘটেছে। অনেকে একাধিক মোবাইল নম্বর ও নকল জাতীয় পরিচয়পত্র নম্বর ব্যবহার করে জরুরি সহায়তা প্রোগ্রামে নাম তালিকাভুক্ত করেছেন।
প্রতিবেদনে বলা হয়েছে, 'আমরা ব্রাজিল ও থাইল্যান্ডের মতো দেশগুলো থেকে গুরুত্বপূর্ণ শিক্ষা নিতে পারি। এই দেশগুলো সামাজিক নিরাপত্তা কর্মসূচির আওতাভুক্ত নয়, এমন শ্রমিকদের তিন মাসব্যাপী জরুরি অর্থ সহায়তা দেওয়ার জন্য বিদ্যমান জাতীয় সামাজিক রেজিস্ট্রি ব্যবহার করছে।'
দরিদ্রদের অনলাইন প্ল্যাটফর্মের মাধ্যমে আবেদনের সুযোগ দিয়ে অতিরিক্ত চাহিদা সামলাচ্ছে এসব দেশের সরকার। বাংলাদেশেরও এখন এসব সমস্যা দূর করে অনিয়ম বন্ধ করার সময় এসেছে।