পারসিভিয়ারেন্স মঙ্গলের শিলা সংগ্রহে ব্যর্থ হলো যে কারণে
মঙ্গল গ্রহে প্রাণের অস্তিত্ব ছিল কিনা, জানার জন্য অভিযান চালিয়ে যাচ্ছে নাসা। সে উদ্দেশ্যে মঙ্গলপৃষ্ঠের নমুনা সংগ্রহের জন্য পাথর খুঁড়েছে নাসার পাঠানো পারসিভিয়ারেন্স রোভার। কিন্তু উদ্দেশ্য সফল হয়নি।
সম্প্রতি পারসিভিয়ারেন্স নমুনা পরীক্ষা করার সময় একটা অদ্ভুত ঘটনা ঘটেছে। নমুনা হিসেবে মঙ্গলের জেজেরো ক্রেটার অঞ্চল থেকে শিলা সংগ্রহ করে একটি ধাতব টিউবে রেখেছিল রোবটটি। কিন্তু উধাও হয়ে গেছে সেই শিলা।
এরপরই নাসা ঠিক করেছে জেজেরো ক্রেটারে আর খুঁড়বে না পারসিভিয়ারেন্স। তার বদলে আগামী মাস থেকে অন্য অঞ্চলে খোঁড়াখুঁড়ি চালাবে নতুন নমুনা সংগ্রহের উদ্দেশ্যে।
প্রথমবার কেনো মঙ্গলের শিলা সংগ্রহে ব্যর্থ হলো, তা নিয়ে বিস্তর বিশ্লেষণ চালিয়েছে নাসা। তারপর সংস্থাটি জানিয়েছে, নমুনা শিলাকে গুঁড়ো ও ছোট ছোট টুকরো আকারে সংগ্রহ করেছিল পারসিভিয়ারেন্স। এর ফলে এসব শিলা টিউবে না ঢুকে ক্রেটারের মেঝেতে পড়ে গেছে ঝুরঝুর করে।
পৃথিবী থেকে পাঠানো প্রথম রোবট হিসেবে মঙ্গলে গর্ত করেছে পারসিভিয়ারেন্স। ৭ সেন্টিমিটার গভীর গর্তটি থেকে আঙুলের সমান একটি পাথরখণ্ড সংগ্রহ করে সেটিকে বাতাসহীন টিউবে ঢুকিয়ে টিউবটির মুখ বন্ধ করে সেটি পৃথিবীতে পাঠানোর কথা ছিল রোভারের। কিন্তু পৃথিবীতে পাঠানো রোভারের তথ্য ও ছবি বিশ্লেষণ করে টিউবটিতে কোনো পাথরের উপস্থিতি মেলেনি।
নাসার এই মিশনের প্রজেক্ট ম্যানেজার জেনিফার ট্রসপার জানিয়েছেন, প্রকৌশলীরা যতটা আশা করেছিলেন, পারসিভিয়ারেন্সের সংগ্রহ করা শিলা তার চেয়ে বেশি ঝুরঝুরে ছিল। এ কারণেই সংগৃহীত শিলা টিউবের মধ্যে না থেকে ক্রেটারের মেঝেতে পড়ে গেছে।
নাসার বিজ্ঞানীরা জানিয়েছেন, রোভারটি পরবর্তী নমুনা সংগ্রহের জন্য মঙ্গলের সাউথ সেইটাহ নামক জায়গার উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছে। ধারণা করা হচ্ছে, ওখানকার শিলা পৃথিবীতে আনার মতো যথেষ্ট শক্ত হবে। পারসিভিয়ারেন্স আগামী মাসের মধ্যে গন্তব্যে পৌঁছাতে পারবে বলে আশা করা হচ্ছে।
এখন পর্যন্ত বাইরের কোনো গ্রহে পাঠানো রোভারগুলোর মধ্যে সবচেয়ে অত্যাধুনিক প্রযুক্তির রোভার পারসিভিয়ারেন্স। এটি প্রায় ৮ সেন্টিমিটার পর্যন্ত গর্ত করতে এবং উঁচু মানের ছবি তুলে পৃথিবীতে পাঠাতে সক্ষম।
বছরখানেক আগে যুক্তরাষ্ট্রের ফ্লোরিডা থেকে মঙ্গলের উদ্দেশে যাত্রা শুরু করেছিল পারসিভিয়ারেন্স। এ বছরের ফেব্রুয়ারিতে রোভারটি লাল গ্রহের জেজেরো ক্রেটারে অবতরণ করে।
কৃত্রিম উপগ্রহ থেকে পাঠানো ছবির তথ্য বিশ্লেষণ করে বিজ্ঞানীরা অনুমান করেছে, জেজেরো ক্রেটার ৩৫০ কোটি বছর আগে সম্ভবত হ্রদ ছিল। এ ধারণা সত্য হলে মঙ্গলে প্রাণের অস্তিত্বের প্রমাণ পাওয়া যেতে পারে।
২০৩০ সালের মধ্যে মঙ্গল থেকে প্রায় ৩০টি নমুনা পৃথিবীতে আনতে চান বিজ্ঞানীরা।
- সূত্র: নেচারডটকম