সিনহা হত্যা: দ্বিতীয় দফা স্বাক্ষ্যগ্রহণ শুরু
পুলিশের গুলিতে নিহত মেজর (অব.) সিনহা হত্যা মামলার বিচারকার্যের দ্বিতীয় দফা স্বাক্ষ্যগ্রহণ শুরু হয়েছে। রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) বেলা সোয়া ১০টার দিকে মামলার তৃতীয় স্বাক্ষী মোহাম্মদ আলীর স্বাক্ষ্যের মাধ্যমে তা শুরু হয় বলে জানিয়েছেন কক্সবাজার জেলা ও দায়রা জজ আদালতের পাবলিক প্রসিকিউটর (পিপি) অ্যাডভোকেট ফরিদুল আলম।
পিপি ফরিদ বলেন, দ্বিতীয় দফা স্বাক্ষ্যের জন্য নির্ধারিত সময়ানুসারে রবিবার পৌনে ১০টার দিকে মামলার অন্যতম আসামী বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ, পরিদর্শক লিয়াকতসহ ১৫ আসামীকে কারাগার হতে আদালতে আনা হয়। এরই মাঝে হাজির করা হয়, প্রথম দফার স্বাক্ষরের জন্য সমন পাওয়া ১৫ জনের বাকি ১৩ জনকে। তবে, দ্বিতীয় দফার প্রথম দিনের জন্য ৬ জন স্বাক্ষীর হাজিরা দেয়া হয়েছে। তারা হলেন, মোহাম্মদ আলী, ফিরোজ মাহমুদ, মুহিবুল্লাহ, শওকত আলী, কামাল হোসেন ও মো. আমিন। এদের মাঝে তৃতীয় স্বাক্ষী টেকনাফের মিনাবাজার এলাকার মোহাম্মদ আলীর স্বাক্ষ্য গ্রহণের মধ্য দিয়ে দ্বিতীয় দফা কার্যক্রম শুরু হয় সোয়া ১০টায়।
প্রথম দফার বাকি অপেক্ষমাণ স্বাক্ষীরা হলেন, শামলাপুর এলাকার মো. আবদুল হালিম, রামু সেনা নিবাসের সার্জেন্ট মো. আইয়ুব আলী, সিনহার সফরসঙ্গী শিপ্রা দেবনাথ, কক্সবাজার সদর হাসপাতালের চিকিৎসক শাহীন আবদুর রহমান ও রনধীর দেবনাথ এবং টেকনাফের বাহারছরার মারিশবনিয়ার হাফেজ জহিরুল ইসলাম।
আদালতের বরাত দিয়ে অ্যাডভোকেট বাপ্পী শর্মা বলেন, গত ২৩ আগস্ট শুরু হয়েছে মেজর সিনহা হত্যা মামলার আনুষ্ঠানিক বিচার কার্যক্রম। স্বাক্ষ্যগ্রহণে আদালতের নির্ধারণ করা প্রথম তিনদিনের প্রথম দিন ও দ্বিতীয় দিনের অর্ধেক সময় মামলার বাদী নিহত সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়ার ফেরদৌসের স্বাক্ষ্য ও জেরা নেয়া হয়। পরে শুরু হয় সিনহার সফরসঙ্গী ও হত্যার অন্যতম প্রত্যক্ষদর্শী সিফাতের সাক্ষ্য। এ দুজনের স্বাক্ষ্য ও জেরার মধ্য দিয়ে শেষ হয় বিচারকার্যের প্রথম নির্ধারিত তিন দিন। ১৫ আসামীর আইনজীবীগণ স্বাক্ষীদের পৃথক জেরা করতে গিয়ে প্রথম দুজনকে দিয়েই তিনদিন অতিবাহিত হওয়ায় এ তিন দিনের জন্য নোটিশ পাওয়া ১৫ সাক্ষীর মাঝে বাকি ১৩ জনের সাক্ষ্য নেয়া সম্ভব হয়নি। ২৫ আগস্ট আদালত ৫ থেকে ৮ সেপ্টম্বর চারদিন পরবর্তী সাক্ষ্যের জন্য দিন নির্ধারণ করে। সেই মতে রবিবার (৫ সেপ্টেম্বর) সকাল সোয়া ১০টার দিকে বাকি সাক্ষীদের সাক্ষ্য শুরু হয়েছে। স্বাক্ষ্য শেষে প্রয়োজনমতো জেরা করা হবে তাদের। মামলায় মোট সাক্ষী ৮৩ জন। সাক্ষ্য ও জেরার সময় ১৫ আসামিকে কাঠগড়ায় উপস্থিত রাখা হচ্ছে প্রতিদিন। পুরো জেলা জজ আদালত এলাকায় কঠোর নিরাপত্তা ব্যবস্থা জোরদার করা হয়েছে।
উল্লেখ্য, ২০২০ সালের ৩১ জুলাই রাতে কক্সবাজার-টেকনাফ মেরিন ড্রাইভ সড়কের শামলাপুর চেকপোস্টে পুলিশের গুলিতে নিহত হন মেজর (অব.) সিনহা মো. রাশেদ খান। তার সঙ্গে থাকা সাহেদুল ইসলাম সিফাতকে পুলিশ গ্রেফতার করে। এরপর সিনহা যেখানে ছিলেন, সেই নীলিমা রিসোর্টে ঢুকে তার ভিডিও দলের দুই সদস্য শিপ্রা দেবনাথ ও তাহসিন রিফাত নুরকে আটক করে। পরে তাহসিনকে ছেড়ে দিলেও শিপ্রা ও সিফাতকে গ্রেপ্তার করে কারাগারে পাঠায় পুলিশ। এই দুজন পরে জামিনে মুক্তি পান।
সিনহা হত্যার ঘটনায় মোট চারটি মামলা হয়। ঘটনার পরপরই পুলিশ বাদী হয়ে তিনটি মামলা করে। এর মধ্যে দুটি মামলা হয় টেকনাফ থানায়, একটি রামু থানায়। ঘটনার পাঁচদিন পর অর্থাৎ ৫ আগস্ট কক্সবাজার আদালতে টেকনাফ থানার বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, বাহারছড়া তদন্ত কেন্দ্রের পরিদর্শক লিয়াকত আলীসহ ৯ পুলিশের বিরুদ্ধে হত্যা মামলা করেন সিনহার বড় বোন শারমিন শাহরিয়া ফেরদৌস। চারটি মামলা তদন্তের দায়িত্ব পায় র্যাব।
২০২০ সালের ১৩ ডিসেম্বর ওসি প্রদীপ কুমার দাশসহ ১৫ জনকে অভিযুক্ত করে আদালতে অভিযোগপত্র দেন তদন্তকারী কর্মকর্তা ও র্যাব-১৫ কক্সবাজারের সিনিয়র সহকারী পুলিশ সুপার মো. খায়রুল ইসলাম।
অভিযুক্ত আসামিদের মাঝে পুলিশের ৯ সদস্যরা হলেন- বরখাস্ত হওয়া ওসি প্রদীপ কুমার দাশ, পরিদর্শক লিয়াকত আলী, কনস্টেবল রুবেল শর্মা, এসআই নন্দদুলাল রক্ষিত, কনস্টেবল সাফানুল করিম, কামাল হোসেন, আব্দুল্লাহ আল মামুন, এএসআই লিটন মিয়া ও কনস্টেবল সাগর দেব নাথ।
অপর আসামিরা হলেন- আর্মড পুলিশ ব্যাটালিয়ন (এপিবিএন) সদস্য এসআই মো. শাহজাহান, কনস্টেবল মো. রাজিব ও মো. আব্দুল্লাহ এবং টেকনাফের বাহারছড়ার মারিষবুনিয়া গ্রামের বাসিন্দা ও পুলিশের করা মামলার সাক্ষী নুুরল আমিন, মো. নিজাম উদ্দিন ও আয়াজ উদ্দিন।
কারান্তরীণ আসামিদের ১২ জন আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দিয়েছেন। তবে ওসি প্রদীপ, কনস্টেবল রুবেল শর্মা ও সাগর দেব আদালতে স্বীকারোক্তিমূলক জবানবন্দি দেননি। এর আগে আসামিদের তিন দফায় ১২ থেকে ১৫ দিন রিমান্ডে নেয়া হয়েছিল।