আমদানি বাড়ায় মার্কিন ডলার আরও দামি হয়ে উঠছে
আমদানি খরচ বাড়ার সাথে সাথে প্রবাসী আয় প্রবাহ কমে যাওয়ায় প্রাতিষ্ঠানিক ব্যাংকিং চ্যানেল ও খোলা বাজারে টাকার বিপরীতে মার্কিন ডলারের মূল্য বেড়েই চলেছে। যেকারণে চাপের শিকার হচ্ছে দেশের বৈদেশিক মুদ্রা বিনিময় বাজার।
নগদ ডলারের দাম গত এক সপ্তাহে ০.৩০ পয়সা থেকে ০.৪০ পয়সা বেড়ে, এখন প্রায় ৮৮ টাকায় বিক্রি হচ্ছে।
রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) নাগাদ এলসি'র (লেটার অব ক্রেডিট) দর ০.৩০ পয়সা বেড়ে এখন প্রায় ৮৫.২৫ টাকায় পৌঁছেছে।
ডলার সঙ্কট সামাল দিতে ইতোমধ্যেই বিপুল পরিমাণে কেনার নীতি থেকে সরে এসে উল্টো বাণিজ্যিক ব্যাংকগুলোর কাছে ফরেক্স রিজার্ভ থেকে ডলার বিক্রি করেছে বাংলাদেশ ব্যাংক। মুদ্রা বাজার স্থিতিশীল রাখতেই নেওয়া হচ্ছে এমন পদক্ষেপ।
অথচ গেল ২০২০-২১ অর্থবছরে কম আমদানি ব্যয় ও উচ্চ রেমিট্যান্স প্রবাহের কারণে রেকর্ড পরিমাণ- ৮০০ কোটি ডলার কিনেছিল বাংলাদেশ ব্যাংক।
কিন্তু, কেন্দ্রীয় ব্যাংকের সাম্প্রতিক তথ্যানুসারে, আর্থিক খাতের নিয়ন্ত্রক সংস্থাটি আগস্ট থেকে ৩০৫ মিলিয়ন ডলার বাণিজ্যিক ব্যাংকের কাছে বিক্রি করেছে।
সংশ্লিষ্টরা বলছেন, ডলারের দরবৃদ্ধি দেশে অর্থনৈতিক কর্মকাণ্ড বৃদ্ধিরই ইঙ্গিত। চলাচলে নিষেধাজ্ঞা উঠে যাওয়ায় মানুষ আবারো ঘরের বাইরে যাচ্ছেন, ব্যবসাবাণিজ্য স্বাভাবিক হচ্ছে, আর সেকারণেই ডলারের দাম বাড়ছে বলে মন্তব্য করেন তারা।
অন্যদিকে, গত জুলাইয়ে আমদানি ব্যয় ২১.৬৩ শতাংশের উচ্চগতি লক্ষ্য করা যায়, সে তুলনায় রপ্তানিতে হয় ১০.৫৪ শতাংশের নেতিবাচক প্রবৃদ্ধি। যা ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি ও তার ফলে মুদ্রা বাজারে সংকটের পেছনে ভূমিকা রাখে।
মহামারির প্রথম বছরে দেশে প্রবাসী আয়ের যে উল্লেখযোগ্য প্রবাহ লক্ষ্য করা গিয়েছিল, তা চলতি বছরের শুরু থেকেই কম হওয়ায় ডলারের বাজারেও প্রভাব পড়েছে।
বছরওয়ারি হিসেবে ২০২০-২১ অর্থবছরের প্রথম দুই মাসে রেমিট্যান্স ৫০ শতাংশের রেকর্ড প্রবৃদ্ধি লক্ষ্য করে বাংলাদেশ। সে তুলনায় চলতি অর্থবছরের (২০২১-২২) প্রথম দুই মাসে (জুলাই-আগস্টে) রেমিট্যান্স ১৯ শতাংশ কমেছে।
এ বিষয়ে জানতে চাইলে বাংলাদেশ ব্যাংকের ব্যাংকের নির্বাহী পরিচালক ও মুখপাত্র সিরাজুল ইসলাম দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ড'কে বলেন, "করোনাভাইরাসের টিকার এলসি মুল্য পরিশোধ ও সাম্প্রতিক সময়ে মূলধনী যন্ত্রপাতি আমদানি বেড়েছে। একারণেই দেশের বাজারে ডলারের চাহিদা বৃদ্ধি পাচ্ছে।"
তিনি আরও বলেন, যেহেতু আমদানি বাড়ছে, তাই ডলারের চাহিদাও বাড়ছে। সে তুলনায় রপ্তানির পরিমাণও বাড়লে ডলারের মুল্য স্বাভাবিক অবস্থানে ফিরে আসবে।
"এছাড়া, ডলারের দাম অস্বাভাবিক পর্যায়ে যাওয়ার কোনো অন্য কোনো লক্ষণ দেখতে পাচ্ছি না, কারণ আমাদের হাতে পর্যাপ্ত পরিমাণ ডলার রিজার্ভ রয়েছে। বাজার স্থিতিশীল রাখতে আমরা ব্যাংকগুলোর কাছেও চাহিদা অনুযায়ী ডলার বিক্রি করছি," যোগ করেন তিনি।
দীর্ঘদিন স্থিতিশীল থাকার পর গত মাসের শুরু থেকে টাকার বিপরীতে ডলারের দাম বাড়তে শুরু করে।
আগস্টে আন্তব্যাংক লেনদেনে ডলারের দাম বেড়েছে ৪০ পয়সা। কেন্দ্রীয় ব্যাংকের নির্ধারণ করা আন্তঃব্যাংক ডলার বিনিময় রেট এখন ৮৫ টাকা ২০ পয়সা। এর আগে গত বছরের জুলাই থেকে গেল আগস্ট পর্যন্ত ডলারের দাম ৮৪ টাকা ৮০ পয়সায় স্থিতিশীল ছিল।
ব্যাংকগুলোর তথ্যানুযায়ী, আজ রোববার (৫ সেপ্টেম্বর) আমদানি দায় মেটাতে ব্যবসায়ীদের থেকে দেশি ও বিদেশি খাতের বেশিরভাগ ব্যাংক ৮৫ টাকা ২৫ পয়সা। তবে নগদ ডলারের মূল্য বেশিরভাগ ব্যাংকে ৮৭ টাকার ওপরে রয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক নগদ ডলার সাড়ে ৮৮ টাকায় বিক্রি করছে।
রোববার বাংলাদেশ ব্যাংক প্রদত্ত তথ্যানুযায়ী, আমদানি দায় মেটাতে ব্যবসায়ীদের থেকে দেশী ও বিদেশী খাতের বেশিরভাগ ব্যাংক প্রতি ডলারে ৮৫ টাকা ২৫ পয়সা করে নিচ্ছে। তবে নগদ ডলারের মূল্য বেশিরভাগ ব্যাংকে ৮৭ টাকার ওপরে রয়েছে। কয়েকটি ব্যাংক নগদ ডলার ৮৮ টাকা ৫০ পয়সা দরেও বিক্রি করছে।
কেন্দ্রীয় ব্যাংকের ওয়েবসাইটে গত ২ সেপ্টেম্বর ব্যাংকগুলোর ঘোষিত মুদ্রা বিনিময় হার অনুযায়ী, নগদ ডলারের দর সবচেয়ে বেশি উঠেছে ব্র্যাক ব্যাংক, এনআরবিসি ও আইসিবি ইসলামী ব্যাংকে। ব্যাংকগুলোর নগদ ডলারের দর ছিল ৮৮ টাকা ৫০ পয়সা। এছাড়া, বেশিরভাগ ব্যাংকই ৮৭ টাকা থেকে ৮৮ টাকায় ডলার বিক্রি করছে।
সর্বনিম্ন দরে নগদ ডলার বিক্রি করছে ন্যাশনাল ব্যাংক অব পাকিস্তান ৮৫ টাকায় এবং বাংলাদেশ কমার্স ব্যাংকের প্রতি ডলারের দর ছিল ৮৫ টাকা ৬০ পয়সা।
এছাড়া, রোববার কার্ব বলে পরিচিত মুদ্রা বিনিময়ের খোলা বাজারে প্রতি ডলার বিক্রি হচ্ছে ৮৭ টাকা ৮০ পয়সা থেকে ৮৯ টাকা পর্যন্ত এবং কিনছে ৮৭ টাকা থেকে ৮৭ টাকা ৩০ পয়সা পর্যন্ত।