গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণ কমাতে গরুকে শৌচাগার ব্যবহারের প্রশিক্ষণ দিচ্ছেন বিজ্ঞানীরা
রীতিমতো প্রশিক্ষণ দিয়ে মূত্রত্যাগ করতে শেখানো হচ্ছে গরুকে। বিজ্ঞানীরা বলছেন, গরুকে এভাবে মূত্রত্যাগ শেখাতে পারলে গ্রিনহাউস গ্যাসের নিঃসরণ কমানো সম্ভব।
গবাদি পশুর নিঃসরণ করা মিথেন জলবায়ু পরিবর্তনের অন্যতম নিয়ামক। তাই বিশ্বজুড়ে মাংস ও দুগ্ধ শিল্প নিয়ে চলছে বিস্তর আলোচনা-সমালোচনা।
তবে বায়ু ও ভূমি উভয়ের বিশুদ্ধতা বজায় রাখার পথে অন্য আরেকটি বড় বাধা হলো গোমূত্র। অকল্যান্ড বিশ্ববিদ্যালয় ও জার্মানির লিবনিজ ইন্সটিটিউট ফর ফার্ম অ্যানিম্যাল বায়োলজি-র একদল বিজ্ঞানী জানিয়েছেন এ তথ্য।
বিশ্বজুড়ে মানুষের কর্মকাণ্ডের কারণে যে পরিমাণ গ্রিনহাউস নিঃসরণ হয়, তার ১০ শতাংশের উৎস গবাদিপশু।
গরুর মূত্রে অতি উচ্চ ঘনত্বের নাইট্রেট থাকে। নাইট্রেট মাটির সঙ্গে মিশে গিয়ে মাটিদূষণ করে। ঠিকমতো ব্যবস্থাপনা না করলে আশপাশের জলাধারও দূষিত হয় নাইট্রেটের মাধ্যমে। গোবরের সঙ্গে মিশে এটি অ্যামোনিয়া তৈরি করে। যা গ্রিনহাউস গ্যাস নিঃসরণে ভূমিকা রাখে।
জার্মানিতে গবেষণার অংশ হিসেবে বিজ্ঞানীরা বাছুরকে মূত্রত্যাগের প্রশিক্ষণ দিয়েছেন। তারা ১৬টি বাছুরকে একটা নির্দিষ্ট শৌচাগার খোঁয়াড়ে মূত্রত্যাগ করার প্রশিক্ষণ দেন। 'মুলু' নামের ওই শৌচাগার খোঁয়াড়ে সফলভাবে মূত্রত্যাগ করতে পারলে বাছুরগুলোকে পুরস্কৃত করা হতো।
যেসব বাছুর মুলু-র বাইরে প্রস্রাব করত, তাদের গায়ে তিন সেকেন্ড ঠান্ডা পানি ছিটানো হতো।
প্রশিক্ষণের তৃতীয় পর্যায়ে পায়খানার সঙ্গে গরুগুলোর দূরত্ব বাড়িয়ে দেওয়া হয়। এ পর্যায়েও মূত্রত্যাগের জন্য পুরস্কার ও শাস্তি অব্যাহত থাকে।
প্রশিক্ষণের ১০টি সেশন শেষ করার পর গবেষকরা দেখতে পান, ১১টি গরু সফলভাবে মূত্রত্যাগের প্রশিক্ষণে উত্তীর্ণ হয়েছে।
গবেষক লিন্ডসে ম্যাথিউস জানান, ১৫-২০ বার প্রস্রাব করানোর পরই প্রাণীগুলো নিজ থেকেই টয়লেটে গিয়ে প্রস্রাব করতে শিখে যায়। তিনি বলেন, প্রশিক্ষণ শেষে দেখা যায়, তিন-চতুর্থাংশ গরুই শতকরা ৭৫ ভাগ সময় টয়লেটে গিয়ে মূত্রত্যাগ করছে।
গবেষণায় বলা হয়, মানবশিশুর মতোই দ্রুততার সঙ্গে বাছুরও টয়লেট ব্যবহার করতে শিখে যায়। বিজ্ঞান জার্নাল সেল বায়োলজিতে এ গবেষণার ফল প্রকাশিত হয়েছে।
গবেষকরা বলছেন, মুলুর মতো পায়খানায় ৮০ শতাংশ গবাদিপশুর মূত্রত্যাগ করানো হলে অ্যামোনিয়া নিঃসরণ ৫৬ শতাংশ কমানো সম্ভব।
তারা আরও বলছেন, গবাদিপশুর থাকার জায়গায় মূত্রের পরিমাণ কমিয়ে আনতে পারলে গরুগুলোর স্বাস্থ্যও ভালো হবে।
গবেষকরা জানিয়েছেন, নিউজিল্যান্ডের ডেইরি শিল্প ইতিমধ্যে মুলু ব্যবহারে আগ্রহ দেখিয়েছে।
- সূত্র: বিবিসি ও ব্লুমবার্গ