জয়ের সমান ড্র দশ জনের বাংলাদেশের
প্রথমার্ধে পিছিয়ে পড়া, দ্বিতীয়ার্ধে আরও বিপদ বাড়ে। বিশ্বনাথ ঘোষ লাল কার্ড দেখে মাঠ ছাড়ায় ১০ জনের দলে পরিণত হয় বাংলাদেশ। এরপরও খেই হারায়নি বাংলাদেশ, একজন কম নিয়েই ৪১ মিনিট বুক চিতিয়ে লড়াই করে গেল জামাল ভূঁইয়ার দল। যে লড়াই ভারতের বিপক্ষে জয় এনে দিনে না পারলেও ম্যাচ হারলো না বাংলাদেশ।
সোমবার সাফ চ্যাম্পিয়নশিপে নিজেদের দ্বিতীয় ম্যাচে মালদ্বীপের জাতীয় স্টেডিয়ামে ভারতের বিপক্ষে ১-১ গোলে ড্র করেছে বাংলাদেশ। সাফের রেকর্ড সাতবারের চ্যাম্পিয়নদের হয়ে একমাত্র গোলটি করেন অধিনায়ক সুনীল ছেত্রি। বাংলাদেশের পক্ষে ম্যাচ বাঁচানো গোলটি করেন লেফট ব্যাক ইয়াসিন আরাফাত। এই ম্যাচে জয় নিয়েও মাঠ ছাড়তে পারতো বাংলাদেশ। কিন্তু তিনটি নিশ্চিত সুযোগ নষ্ট করায় সেটা হয়নি।
ফিফা র্যাঙ্কিংয়ে ভারতের সঙ্গে বাংলাদেশের ব্যবধান আকাশ-পাতাল। দক্ষিণ এশিয়ার অন্যতম সেরা শক্তি ভারত আছে ১০৭ নম্বরে, বাংলাদেশ সেখানে ১৮৯ নম্বরে। ৮২ ধাপ এগিয়ে থাকা দলের বিপক্ষে ১০ জনকে নিয়ে লড়াই করে ম্যাচ ড্র করা প্রমাণ করে অস্কার ব্রুজনের এই দল আগের চেয়ে আলাদা।
বল দখল ও আক্রমণে বাংলাদেশের চেয়ে বেশ এগিয়ে ছিল ভারত। ম্যাচে ৬৮ শতাংশ সময় বল পায়ে রাখেন ছেত্রি-মানবীররা। গোলমুখে ভারত শট নেয় ১২টি, এর মধ্যে ৮টি ছিল লক্ষ্যে। বাংলাদেশ গোলরক্ষক ও রক্ষণভাগের দৃঢ়তায় একবারের বেশি জালের ঠিকানা পায়নি তারা। দারুণ লড়াই করা বাংলাদেশের নেওয়া ৭টি শটের ২টি ছিল লক্ষ্যে।
রেফারি ম্যাচ শুরুর বাঁশি বাজাতেই বল দখলে আধিপত্য নিয়ে নেয় ভারত। নিজেদের পায়ে বল রেখে আক্রমণের চেষ্টা চালাতে শুরু করে তারা। যদিও পরিষ্কার আক্রমণে বাংলাদেশের রক্ষণভাগে হানা দিতে পারছিল না সাফের সাতবারের চ্যাম্পিয়নরা। অষ্টম মিনিটে লিস্টন কোলাচোর ফ্রি-কিক অনেক দূর দিয়ে চলে যায়। পরের মিনিটে উঁচু করে মারা দারুণ এক ক্রসে ভারতের কেউ-ই মাথা ছোঁয়াতে পারেনি।
ম্যাচ এগিয়ে যাচ্ছিল, কিন্তু কোনো দলই পরিষ্কার আক্রমণ সাজাতে পারছিল না। ২১তম মিনিটে জামালের কর্নার ফিরিয়ে দেন ভারতের গোলরক্ষক গুরপ্রিত সিং সান্ধু। একটু পর জামালের ফ্রি কিকে সাদউদ্দিনের চেষ্টা কাজে আসেনি। ২৪তম মিনিটে দারুণ একটি আক্রমণ সাজায় ভারত। যদিও লেফট ব্যাক সুভাশিষ বোসের ক্রসে পা ছোঁয়াতে পারেননি ফরোয়ার্ড মানবীর সিং, বল নিয়ন্ত্রণে নেন বাংলাদেশের গোলরক্ষক আনিসুর রহমান জিকো।
২৬তম মিনিটে জামালের ফ্রি-কিক থেকে বাংলাদেশের কেউ সুযোগ তৈরি করতে পারেনি। এ সময়ই এগিয়ে যায় ভারত। ডান প্রান্ত থেকে পাস পেয়ে বাংলাদেশের ডি-বক্সে ঢুকে পড়েন উদান্তা সিং। ডি-বক্স থেকে সুনীল ছেত্রির উদ্দেশে কাট-ব্যাক করেন তিনি। ডান পায়ের প্লেসিং শটে বল জালে জড়ান ভারতের তারকা এই ফরোয়ার্ড। এটা তার ৭৬তম আন্তর্জাতিক গোল, যা দক্ষিণ এশিয়ার মধ্যে সর্বোচ্চ।
পরের মিনিটেই সমতায় ফেরার দারুণ সুযোগ পায় বাংলাদেশ। দ্রুততার সঙ্গে পাল্টা আক্রমণে বল নিয়ে ভারতের ররক্ষণভাগে হানা দেয় বাংলাদেশ। মতিনের কাটব্যাকে শট বিপলু আহমেদ, কিন্তু শট অনেকটা দূর দিয়ে বেরিয়ে যায়। ৩৫তম মিনিটে লিস্টন কোলাচোর দুর্বল শট তালুবন্দী করেন জিকো। ৩৮তম মিনিটে ডি-বক্সের বাইরে থেকে পর ছেত্রির বাঁ পাঁয়ের দারুণ শটটি কর্নারের বিনিময়ে ফেরান বাংলাদেশ গোলরক্ষক।
কর্নার ফিরিয়েই পাল্টা আক্রমণে যায় বাংলাদেশ। মাঝমাঠ থেকে মতিনের থ্রু পাস ধরে সাদউদ্দিন আড়াআড়ি ক্রস বাড়ান বিপলুর উদ্দেশ্যে। কিন্তু এ ফরোয়ার্ডের কোনাকুনি শট ঝাঁপিয়ে ফেরান ভারতের গোলরক্ষক গুরপ্রিত। ৫২তম মিনিটে দারুণ সুযোগ পায় বাংলাদেশ। সাদউদ্দিনের কাটব্যাকে বক্সে ফাঁকায় থাকা রাকিব শট নেন। ফাঁকা জাল পেয়েও গোল আদায় করতে পারেননি তিনি।
এরপর বিপদ বাড়ে বাংলাদেশের। ৫৪তম মিনিটে কোলাচোকে পেছন থেকে টেন ধরায় বিশ্বনাথ ঘোষকে লাল কার্ড দেখান রেফারি। ১০ জনের দলে পরিণত হয় বাংলাদেশ। কিন্তু একজন খেলোয়াড় যে কম, সেটা বাংলাদেশের খেলা বোঝা যায়নি। ৬১তম মিনিটে নিশ্চিত গোল থেকে দলকে বাঁচান জিকো। প্রথমে বাঁ দিক থেকে শট নেন মানবীর সিং, ফিরিয়ে দেন জিকো। ফিরতি বলে শট নেন উদান্তা, তার শটও ফিরিয়ে দেন বাংলাদেশ গোলরক্ষক।
এরপর তিনটি বদলি নামান বাংলাদেশের কোচ অস্কার ব্রুজেন। ইব্রাহিমকে তুলে মাহবুবুর রহমান সুফিলকে নামানোর পর বিপলু ও মতিনের জায়গায় সোহেল রানা ও সুমন রেজাকে নামান তিনি। ৭৪তম মিনিটে মেলে গোলের দেখা। বাঁ দিক থেকে নেওয়া জামালের কর্নারে রাকিবের মাথা ছুঁয়ে বল চলে যায় দূরের পোস্টে। সেখানে থাকা ইয়াসিন আরাফাত ডাইভিং হেডে বল জালে জড়ান।
৮৫তম মিনিটে সুমন রেজার দারুণ পাস দৌড়ে গিয়ে আয়ত্তে নিতে পারেননি সুফিল। এ সময়ই মানবীরের শট হেড করে দলতে বিপদমুক্ত করেন তপু বর্মণ। বাকিটা সময় আক্রমণ সাজালেও বাংলাদেশের জালের ঠিকানা পায়নি ভারত। রাউন্ড রবিন লিগ পদ্ধতির এবারের আসরে আগামী বৃহস্পতিবার স্বাগতিক মালদ্বীপের মুখোমুখি হবে বাংলাদেশ।