বিমানে সোনার খনি!
দুবাই থেকে ঢাকায় আসা বিমান বাংলাদেশের একটি ফ্লাইটের টিস্যু বক্স থেকে ১২০টি সোনার বার উদ্ধার করেছে শুল্ক গোয়েন্দা ও তদন্ত অধিদপ্তর (সিআইআইডি)। ১৩.৯২ কেজি ওজনের বারগুলোর মূল্য প্রায় ১০ কোটি টাকা।
মঙ্গলবার বিকাল সোয়া চারটার দিকে বাংলাদেশ বিমানের বিজি-৪০৪৮ ফ্লাইটে তল্লাশি চালিয়ে বারগুলো উদ্ধার করা হয়।
গোপন সূত্রে তথ্য পেয়ে এই অভিযান পরিচালনার কথা জানিয়েছে সিআইআইডি। আজ বুধবার এক সংবাদ বিজ্ঞপ্তিতে সংস্থাটির পক্ষ থেকে এ তথ্য জানানো হয়েছে।
ফ্লাইট ৩এফ-১আরসি'র ওয়াশরুম থেকে কালো টেপে মোড়া সন্দেহজনক ছয়টি বান্ডিল উদ্ধার করার কথা জানায় সিআইআইডি। তবে অভিযান চলাকালে কাউকে গ্রেপ্তার করা হয়নি।
শুধু বিমান নয়, যেন সোনার খনি!
হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমান বন্দরের রয়েছে এক লজ্জাজনক 'খ্যাতি'। প্রায়ই অবৈধ সোনাভর্তি বিমান অবতরণ করে এখানে। একাধিকবার তল্লাশির মাধ্যমে সিআইআইডি এ বিমানবন্দরে অবতরণ করা বিমানগুলোর ভেতর অদ্ভুত অদ্ভুত সব জায়গা থেকে উদ্ধার করেছে সোনা।
এমনকি গত ৯ ফেব্রুয়ারি দুবাই থেকে আসা ইউএস বাংলার একটি ফ্লাইটের ময়লার বাক্স থেকেও পাওয়া গেছে সোনার বার। ফ্লাইট বিএস৩৪২ থেকে সেদিন ৬০টি সোনার বার পাওয়া যায়, যার মূল্য সাড়ে ৪ কোটি টাকা। বারগুলো লুকানো ছিল ওই ফ্লাইটের ময়লার বাক্সের নোংরা খাবারের নিচে।
একই মাসের ২২ তারিখে, ১৭ কেজির বেশি ওজনের ১৫০টি সোনার বার উদ্ধার করা হয় আবুধাবি থেকে আসা বিমান বাংলাদেশ ফ্লাইট বিজি১২৮-এ। ১০ কোটি টাকা মূল্যের ওই সোনাগুলো রাখা হয়েছিল ২৬এ ও ১৮এফ সিটের পাশের এয়ার কন্ডিশন প্যানেলের মধ্যে।
চলতি বছরের ৩১ মার্চ, সাড়ে ৪ কেজি ওজনের ৩৯টি সোনার বার উদ্ধার করা হয় বিমান বাংলাদেশ ফ্লাইট বিজি০৪৮-এর আসন ৩এ-এর নিচ থেকে। ওই বিমানটি সকালবেলা এসেছিল দুবাই থেকে, এবং উদ্ধারকৃত সোনার দাম ছিল ৩.১৬ কোটি টাকা।
ওই একই দিনে, ৩ কেজি ওজন ও ২.০৬ কোটি মূল্যের ২৮টি সোনার বার উদ্ধার করা হয় দুবাই থেকে আসা বিমান বাংলাদেশের আরেকটি ফ্লাইটের আসনের নিচ থেকে।
১ এপ্রিল ঢাকা কাস্টমস হাউজের একটি প্রতিরক্ষামূলক দল বিমান বাংলাদেশ এয়ারলাইনসের একজন কর্মচারীকে গ্রেপ্তার করে। সেদিন হযরত শাহজালাল আন্তর্জাতিক বিমানবন্দরে তল্লাশি চালিয়ে ওই কর্মচারীর কাছ থেকে ৬০ লাখ টাকার ১৬০ কেজি সোনা পাওয়া যায়।
দুবাই থেকে আসা ফ্লাইট বিজি৫০৪৬ থেকে ঝন্টু চন্দ্র বর্মণ নামে বাংলাদেশ বিমানের একজন এয়ারক্রাফট টেকনিশিয়ান হেল্পারকে আটক করা হয়। তাকে জিজ্ঞাসাবাদের পর পাওয়া তথ্য অনুসারে ওই বিমানের সিটের হাতল থেকে ১.১ কেজি ওজনের ৭০ লাখ টাকার সোনা উদ্ধার করা হয়।
চমকপ্রদ বিষয় হলো, এর আগে ২০২০ সালের ৬ নভেম্বর সোনা পাচারের জন্য টয়লেট পেপার বক্সও ব্যবহৃত হয়েছিল।
সেদিন ফ্লাইট বিজি২৪৮-এর একটি ওয়াশরুমের টয়লেট পেপার বক্সের নিচ থেকে ৪.৭৩ কোটি টাকা মূল্যের ৬৮টি সোনার বার উদ্ধার করা হয়।
এর আগে ২০১৯ সালের ২ জুলাই কাস্টমস কর্মকর্তারা একটি প্যাসেঞ্জার সিটের পেছনের টিস্যু পেপার বক্স থেকে ৬.৩৮ কোটি মূল্যের সোনার বার উদ্ধার করেন।
গোপন তথ্যের ভিত্তিতে কর্মকর্তারা মাস্কাট থেকে আসা ফ্লাইট বিজি১২২-এ তল্লাশি চালান এবং ১১০টি সোনার বারের সন্ধান পান। সেই বারগুলো সিট ২১এ-এর পেছনের টিস্যু পেপার বক্সের ভেতর কালো টেপ দিয়ে মোড়ানো ছিল।
২০২১-২২ অর্থবছরে সিআইআইডি এ পর্যন্ত ২৮ কোটি টাকা মূল্যের ৪০.১১ কেজি সোনা উদ্ধার করেছে।
এর আগের বছর তারা ১৭৪.৪৯ কেজি সোনা উদ্ধার করেছিল, এবং ২০১৯-২০ অর্থবছরে বেশ কয়েকবার তল্লাশির মাধ্যমে তারা ১৮০.৩৫ কেজি সোনা উদ্ধার করেছিল।
- প্রতিবেদনটি ইংরেজিতে পড়ুন: Gold mine in Biman!