চার প্রদেশে মেয়েদের মাধ্যমিক স্কুল খুলল তালেবান, কাবুলে মিলেনি অনুমতি
আফগানিস্তানের উত্তরাঞ্চলের চার প্রদেশে মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার অনুমতি দিয়েছে তালেবান। আনুষ্ঠানিকভাবে এই ঘোষণা না আসলেও স্থানীয় শিক্ষক, শিক্ষার্থী এবং একজন তালেবান মুখপাত্র বিষয়টি নিশ্চিত করেছেন।
তবে, প্রাদেশিক স্কুল খুললেও এখন পর্যন্ত কাবুলে মাধ্যমিক পর্যায়ে মেয়েদের স্কুলে যাওয়ার বিষয়ে কোনো সিদ্ধান্ত আসেনি।
সেপ্টেম্বরে তালেবানের নির্দেশে আফগানিস্তানে ছেলেদের জন্য মাধ্যমিক স্কুল খুলে দেওয়া হয়। কিন্তু, মেয়েদের বিষয়ে তারা কিছু জানায়নি। ফলে, ধারণা করা হয়েছিল ষষ্ঠ শ্রেণি থেকে মেয়েরা আর স্কুলে যেতে পারবে না।
প্রাথমিক পর্যায়ে ছেলে-মেয়ে সকলের জন্য স্কুল খুলে দেওয়া হলেও তাদের আলাদাভাবে ক্লাস নেওয়ার ব্যবস্থা করা হয়।
বালখ, কুন্দুজ, সার-ই-ফুল এবং জাওজান এই চারটি প্রদেশে স্থানীয় তালেবান সরকার মেয়েদের স্কুল খোলার অনুমোদন দিয়েছে। আফগানিস্তানের দক্ষিণ এবং পশ্চিম অঞ্চলের প্রদেশগুলো অপেক্ষাকৃত রক্ষণশীল। সে তুলনায় উত্তরাঞ্চলের এই চার প্রদেশে ঐতিহ্যগতভাবেই সমাজে নারীরা তুলনামূলক সক্রিয়।
নতুন এই পদক্ষেপ থেকে ধারণা করা যাচ্ছে যে, তালেবান ১৯৯০ সালের মতো সকলের ওপর বাধ্যতামূলকভাবে সামাজিক নিষেধাজ্ঞা আরোপ করবে না। আফগানিস্তানের সাংস্কৃতিক ভিন্নতাকে অনুসরণ করেই সম্ভবত নীতিমালা আরোপের দিকে ঝুঁকছে তারা।
বালখ এবং কুন্দুজে উত্তরাঞ্চলের বৃহৎ দুই শহর মাজার-ই-শরীফ এবং কুন্দুজসহ প্রদেশের অন্যান্য শহরে প্রায় এক মাস ধরেই খোলা রয়েছে মেয়েদের স্কুল।
প্রদেশের শীর্ষ তালেবান কর্মকর্তারা স্কুলের প্রধান শিক্ষকদের সঙ্গে সাক্ষাৎ করে মেয়েদের স্কুলে ফেরানোর নির্দেশনা দেন বলে জানান স্থানীয় প্রত্যক্ষদর্শীরা।
মাজার-ই-শরীফের ফাতিমা বালখি হাই স্কুলের প্রধানশিক্ষক শামায়েল সোভাইদা এই সিদ্ধান্তকে স্বাগত জানিয়ে বলেন, "মেয়েদের জন্য স্কুল পুনরায় খোলায় ও তারা পাঠদানে অংশ নিতে পারায় শিক্ষার্থী এবং আমরা সকলেই খুব খুশি।"
বালখে তালেবানের শিক্ষা বিষয়ক শীর্ষ কর্মকর্তা শিক্ষকদের মেয়েদের স্কুলে ফেরানোর নির্দেশনা দিয়েছেন।
স্থানীয় এক শিক্ষক জানান, যেসকল মেয়েরা স্কুলে আসছে না, তাদের ঘরে ঘরে গিয়ে শিক্ষকদের স্কুলে ফেরার কথা জানাতে বলেন ওই কর্মকর্তা।
সার-ই-ফুল এবং জাওজানেও খুলেছে স্কুল। তালেবান প্রতিনিধিরা প্রায়ই এসব স্কুল পরিদর্শনে আসেন।
তালেবান প্রতিনিধিরা স্কুলে এসে শিক্ষার্থীদের উপস্থিতির খাতা দেখেন বলে জানান সারি-ই-ফুলের দশম শ্রেণির শিক্ষার্থী সাদাফ। কোনো শিক্ষিকা অসুস্থতার জন্য স্কুলে না আসলে তালেবান তাদের অনুপস্থিতি চিহ্নিত করে বলেও জানায় এই শিক্ষার্থী।
"তারা আমাদের ইসলামী হিজাব পরে স্কুলে আসতে বলে। হাই হিল বা স্যান্ডেল পরতে বারণ করে। হাঁটার সময় শব্দ করতে মানা করে," জানায় সাদাফ।
তবে, স্কুল খুললেও শিক্ষার্থীদের সকলে ক্লাসে ফিরেনি। কুন্দুজের উত্তরাঞ্চলের একটি শহরে তিন হাজার মেয়ে শিক্ষার্থীর মধ্যে এক-তৃতীয়াংশই স্কুলে অনুপস্থিত বলে জানান একজন প্রিন্সিপাল।
"অনেক পরিবারই শহর ছেড়ে চলে গেছে। অন্যরা স্থানীয় তালেবানের আশ্বাস সত্ত্বেও মেয়েদের স্কুলে পাঠানোর ভরসা পাচ্ছেন না। অনেকেই ভয় পাচ্ছেন যে স্কুলে যাওয়ার পথে তালেবান যোদ্ধারা মেয়েদের হয়রানি করবে," জানান তিনি।
৯০ এর দশকের শেষে তালেবান শিক্ষা ও কর্মক্ষেত্রে নারীদের ওপর নিষেধাজ্ঞা আরোপ করে। পুরুষ অভিভাবক ছাড়া নারীদের ঘরের বাইরে যাওয়ার ক্ষেত্রেও দেওয়া হয় নিষেধাজ্ঞা।
২০ বছরে তালেবানের মধ্যে আদৌ কোনো পরিবর্তন এসেছে কি না, তা নির্ণয় করবে নারীদের বিষয়ে তাদের অবস্থান। নারী ও মানবাধিকার বিষয়ে তালেবানের গৃহীত পদক্ষেপই এখন আন্তর্জাতিক প্রাঙ্গনে তাদের স্বীকৃতিদানের নির্ণয়ে বড় ভূমিকা রাখবে।
- সূত্র: ওয়াশিংটন পোস্ট