আইফেল টাওয়ারের নির্মাণের সঙ্গে কি আসলেই এক ব্যর্থ প্রেম জড়িত ছিল?
বিশ্বব্যাপী প্যারিসকে যেমন 'ভালোবাসার শহর' হিসেবে দেখা হয়, তেমনি আইফেল টাওয়ারকে দেখা হয় ভালোবাসার প্রতীক হিসেবে।
এবার নতুন এক ফরাসি সিনেমায় একটি রোমান্টিক তত্ত্ব তুলে ধরা হয়েছে। 'আইফেল' নামের এই সিনেমার মতে, প্রথম জীবনের প্রেমিকার কথা স্মরণ করেই আইফেল টাওয়ারের কাঠামোটি নির্মাণ করেছিলেন গুস্তাভ আইফেল।
আগামীকাল, ১৪ই অক্টোবর মুক্তি পেতে যাওয়া এই চলচ্চিত্রে নির্মাতা গুস্তাভ আইফেলের জীবনের গল্প উঠে এসেছে।
শুরুতে ১৮৮৯ সালের ইউনিভার্সাল এক্সিবিশনের প্রবেশদ্বার হিসেবে একটি অস্থায়ী কাঠামো তৈরির স্বার্থে এই টাওয়ার নির্মাণ করার কথা উঠেছিল। ৩২৪ মিটার উচ্চতার এই টাওয়ার নির্মাণের ব্যাপারে প্রথমে অনিচ্ছুক ছিলেন আইফেল।
কিন্তু পরবর্তীতে আকস্মিকভাবে মত পরিবর্তন করে এই কাঠামো নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এই প্রকৌশলী।
সিনেমায় এই মত পরিবর্তনের কারণ হিসেবে দেখানো হয়েছে আদ্রিয়ান বুর্জ নামের এক নারীকে, যাকে প্রথম জীবনে ভালোবাসলেও বিয়ে করার অনুমতি পাননি গুস্তাভ আইফেল।
এই সিনেমা অনুসারে, পরবর্তীতে একদিন আদ্রিয়ানের সঙ্গে দুর্ঘটনাক্রমে দেখা হয়ে যায় আইফেলের। সাবেক প্রেমিকার সঙ্গে সাক্ষাতের পরই আইফেল টাওয়ার নির্মাণের সিদ্ধান্ত নেন এই ফরাসি প্রকৌশলী, আদ্রিয়ানের নামের প্রথম অক্ষর 'A' অনুসারে আঁকেন টাওয়ারটির নকশা।
স্ক্রিপ্ট থেকে পর্দায় আসতে এক দশকেরও বেশি সময় নেওয়া এই সিনেমাকে ঘিরে ফরাসি দর্শক ও সমালোচকদের প্রত্যাশা অনেক। সিনেমাটির প্রযোজক ভ্যানেসা ভ্যান জুইলেন তো একে 'ফ্রান্সের টাইটানিক' বলেই আখ্যা দিয়ে দিয়েছেন।
জীবনী হিসেবে আইফেল অনেকাংশেই ঐতিহাসিকভাবে সঠিক, তবে এর সঙ্গে একটি কাল্পনিক প্রেমের গল্পও জুড়ে দেওয়া হয়েছে।
গুস্তাভ আইফেলের সঙ্গে বুর্জের পরিচয় আসলেই ছিল। ফ্রান্সের বোর্দো শহরে পরিচিত হয়েছিলেন এই যুগল। তখন গুস্তাভের বয়স ছিল ২৭, বুর্জের ১৭। তখন সবেই পেশাদার জীবনে পা রেখেছেন গুস্তাভ। সে শহরেও গিয়েছিলেন একটি সেতু নির্মাণের কাজে।
বুর্জের প্রেমে নাস্তানাবুদ হয়ে গুস্তাভ তাকে বিয়ের প্রস্তাবও দিয়েছিলেন। কিন্তু সে প্রস্তাব ফিরিয়ে দেন বুর্জের বাবা। নিজের কন্যার জন্য গুস্তাভকে যোগ্য মনে করেননি তিনি।
আইফেলের লেখক ক্যারলিন বোনগ্রান বলেন, "তিনি এতে বেশ কষ্ট পেয়েছিলেন, ব্যাপক অপমানিত বোধও করেছিলেন। এরপর তার সব কাজেই এই ঘটনার প্রভাব ছিল। এমন না যে তিনি প্রতিশোধ নিতে চেয়েছিলেন, তিনি শুধু নিজেকে প্রমাণ করতে চেয়েছিলেন। বিশ্বকে দেখাতে চেয়েছিলেন তিনি কী করতে পারেন।
"এরপর নিজের মা'কে লেখা এক চিঠিতে গুস্তাভ জানান, 'আমার জন্য এটাই শেষ। এখন আমাকে একজন ভালো মেয়ে খুঁজে দাও, যে চরিত্রবান ও নম্র স্বভাবের। তার প্রেমে পড়তে হবে না আমার। আমি শুধু বিয়ে করতে চাই।"
সেই 'ভালো মেয়েটি' হচ্ছে মারগুয়েরিট গঁদালে। নিজ শহরের এই তরুণীকে বিয়ে করেন গুস্তাভ। ১৮৭৭ সালে মাত্র ৩২ বছর বয়সে মারা যান গঁদালে।
৪২ বছর বয়সে বিপত্নীক হওয়া গুস্তাভ পরে আর বিয়ে করেননি।
সিনেমার কল্পিত কাহিনী অনুসারে এ সময়ই আবার বুর্জের সঙ্গে সাক্ষাৎ হয় গুস্তাভের। নিজের এক বন্ধুর সঙ্গে বিবাহিত বুর্জের প্রেমে পড়ে যান আবার।
বোনগ্রানের গল্প অনুসারে, বুর্জকে মুগ্ধ করতেই আইফেল টাওয়ারের কাজ হাতে নেন গুস্তাভ।
তবে এই কাহিনীর যথাযথতা নিয়ে ইতোমধ্যে প্রশ্ন তুলছেন ইতিহাসবিদরা।
'লা ভ্রাই ভিয়ে ডি গুস্তাভ আইফেল' (গুস্তাভ আইফেলের প্রকৃত জীবন) -এর রচয়িতা ক্রিস্টিন কার্ডেল্যান্ট এই কাহিনীকে সরাসরি 'সত্য নয়' বলে আখ্যা দিয়েছেন।
তিনি জানান, টাওয়ারটির নকশা করেছিলেন আসলে আইফেলের সহকারীরা। তবে 'A' আকৃতিটি গুস্তাভকে আদ্রিয়ান ও তার প্রিয় চাচাতো বোন এলিসের কথা মনে করিয়ে দিতো বলে জানান তিনি।
ত্রুটি থাকা সত্ত্বেও সিনেমা বিশ্লেষকরা আইফেলের কাছ থেকে বড় কিছু আশা করছেন। আইফেল ফ্রান্সে রেকর্ড মাসিক আয় করবে, এ পূর্বাভাসও দিয়েছেন অনেকে।
সূত্র: ডেইলি মেইল।