আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও হার, বিশ্বকাপের আগে নড়বড়ে বাংলাদেশ
কদিন পরই শুরু টি-টোয়েন্টি বিশ্বকাপ। এর আগে দুটি আনুষ্ঠানিক প্রস্তুতি ম্যাচ, বাংলাদেশের প্রতিপক্ষ শ্রীলঙ্কা ও আয়ারল্যান্ড। লক্ষ্য ছিল শেষ মুহূর্তের প্রস্তুতি সেরা নেওয়া। প্রস্তুতি হয়েছে বাংলাদেশের, মিলেছে ব্যাটিং, বোলিং, ফিল্ডিংয়ের সুযোগ। কিন্তু প্রস্তুতি থেকে পাওয়া যায়নি আত্মবিশ্বাস, উল্টো ঘরের মাঠে দারুণ ছন্দে থাকা বাংলাদেশ এখন অস্বস্তিতে।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে ৪ উইকেটে হার মানা বাংলাদেশ এবার আয়ারল্যান্ডের বিপক্ষেও হেরে গেল। বৃহস্পতিবার আবুধাবিতে অনুষ্ঠিত ম্যাচে বাংলাদেশকে ৩৩ রানে হারিয়েছে আইরিশরা। বিশ্বকাপের আগে ভালো প্রস্তুতি বলতে ওমান 'এ' দলের বিপক্ষের ম্যাচটিই। যেখানে ব্যাটে-বলে ছন্দময় বাংলাদেশের দেখা মিলেছিল। কিন্তু অস্বস্তির হারে শেষ হলো লিটন-মুশফিকদের বিশ্বকাপ প্রস্তুতি।
শ্রীলঙ্কার বিপক্ষে হারের পর বিসিবির প্রধান নির্বাচক মিনহাজুল আবেদীন নান্নু জানিয়েছিলেন, প্রস্তুতি ম্যাচের হার নিয়ে চিন্তিত নন তারা। প্রস্তুতিটাই এখানে মূখ্য। কিন্তু কেমন প্রস্তুতি হলো, সেটাও এখন প্রশ্নবিদ্ধ! প্রস্তুতি ম্যাচের হার নিশ্চয়ই হতাশার নয়, তবে মন খারাপের। কারণ যে উদ্দেশে খেলা হয় এসব ম্যাচ, সেটার কোনোটাই হাছিল হয়নি বাংলাদেশের। সব মিলিয়ে ১৭ অক্টোবর বিশ্বকাপে নিজেদের প্রথম ম্যাচে মাঠে নামার আগে বাংলাদেশ নড়বড়ে অবস্থাতেই।
শেখ আবু জায়েদ স্টেডিয়ামে টস জিতে আগে ব্যাটিং করতে নামে আয়ারল্যান্ড। শুরু থেকেই চড়া মেজাজে ব্যাটিং করতে থাকা আইরিশরা মুস্তাফিজ, নাসুম, শরিফুলদের শাসন করে ৩ উইকেটে ১৭৭ রান তোলে। জবাবে ১৫ রানের মধ্যেই ৩ উইকেটে হারানো বাংলাদেশ ১৪৪ রানে অলআউট হয়ে যায়।
ঘরের মাঠে অস্ট্রেলিয়া ও নিউজিল্যান্ডের বিপক্ষে টি-টোয়েন্টি সিরিজ জিতে যাওয়া বাংলাদেশই আয়ারল্যান্ডের বোলারদের সামলাতে পারলেন না। ১৭৮ রানের লক্ষ্যে ব্যাটিংকরতে নেমে ১৫ রানের মধ্যেই ফিরে যান তিন ব্যাটসম্যান। নাঈম শেখ ৩, লিটন দাস ১ ও মুশফিকুর রহিম ৪ রান করে ফিরে যান।
এরপর কিছুটা সময় লড়াই করেন সৌম্য সরকার ও আফিফ হোসেন ধ্রুব। এই জুটিতে ৫২ রানে পৌঁছায় বাংলাদেশ। এ সময় ১৬ বলে ১৭ রান করে আউট হন আফিফ। সৌম্য বেশ সাবলীল ব্যাটিং করে যাচ্ছিলেন। তার সঙ্গে যোগ দেন ওমান 'এ' দলের বিপক্ষে মাত্র ১৫ বলে ৪৯ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলা নুরুল হাসান সোহান।
এই জুটি ৩২ রান যোগ করে। দলীয় ৮২ রানে থামেন সৌম্য, এর আগে ৩০ বলে একটি চার ও ২টি ছক্কায় ৩৭ রান করেন বাঁহাতি এই ব্যাটসম্যান। এরপর ইনিংস সেরা ৩৮ রান আসে সোহানের ব্যাট থেকে। ডানহাতি উইকেটরক্ষক এই ব্যাটসম্যান ২৪ বলে ৬টি চারে তার ইনিংসটি সাজান।
বাকিটা সময়ে পেসার তাসকিন আহমেদের ব্যাট থেকেই যা রান এসেছে। ১১ বলে একটি চারে ১৪ রানে অপরাজিত থাকেন তিনি। শামীম হোসেন পাটোয়ারী ১, শেখ মেহেদী হাসান ৯, নাসুম আহমেদ ০ ও মুস্তাফিজুর রহমান ৭ রান করেন। আয়ারল্যান্ডের ডানহাতি পেসার মার্ক অ্যাডায়ার সর্বোচ্চ ৩টি উইকেট নেন। ২টি করে উইকেট পান ক্রেইগ ইয়াং ও জুশয়া লিটল। সিমি সিং ও বেন হোয়াইট একটি করে উইকেট নেন।
এর আগে আয়ারল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের বিপক্ষে বাংলাদেশের প্রায় সব বোলারকেই কঠিন পরীক্ষার মুখে পড়তে হয়। শুরু থেকেই মারকুটে মেজাজে ব্যাটিং করতে থাকা আয়াল্যান্ডের ব্যাটসম্যানদের সেভাবে বিপদেই ফেলতে পারেননি বাংলাদেশের বোলাররা। মুস্তাফিজুর রহমান, নাসুম আহমেদ, শরিফুল ইসলামদের ওপর দিয়ে রীতিমতো ঝড় বইয়ে দেন পল স্টার্লিং-গ্যারেথ ডিলানিরা।
রাজস্থান রয়্যালসের হয়ে আইপিএল খেলে দলের সঙ্গে যোগ দেওয়া মুস্তাফিজ ৪ ওভারে খরচা করেন ৪০ রান, পাননি কোনো উইকেট। রাজস্থানের শেষের দিকের ম্যাচগুলোতেও মুস্তাফিজ বল হাতে ছিলেন অনুজ্জ্বল।
সবচেয়ে বেশি ইকোনমিতে রান খরচা করেছেন করেছেন নাসুম আহমেদ। বাংলাদেশের বাঁহাতি এই স্পিনার একটি উইকেট পেলেও ৩ ওভারে ৩৩ রান দেন। শরিফুলও খরুচে ছিলেন। বাঁহাতি এই তরুণ পেসার ৪ ওভারে ৪১ রান খরচা করে উইকেটশূন্য থেকে গেছেন।
আছে ব্যতিক্রমও। দারুণ বোলিং করেছেন তাসকিন আহমেদ। ব্যাট হাতে অপরাজিত ১৪ রান করার আগে ডানহাতি এই পেসার ৪ ওভারে ২৬ রানে ২টি উইকেট নেন। সবচেয়ে হিসেবি বোলিং করেন শেখ মেহেদী হাসান। কোনো উইকেট না পেলেও ডানহাতি এই অফ স্পিনার ৩ ওভারে খরচা করেন মাত্র ১৫ রান। সৌম্য সরকার ২ ওভারে ১৩ রান দিয়ে কোনো উইকেট পাননি।
আয়ারল্যান্ডের পক্ষে সর্বোচ্চ রানের ইনিংস খেলেন ডিলানি। ডানহাতি এই ব্যাটসম্যান ৫০ বলে ৩টি চার ও ৮টি ছক্কায় ৮৮ রানের ঝড়ো ইনিংস খেলেও অপরাজিত থাকেন। স্টার্লিং ১৬ বলে ২২ রান করেন। এ ছাড়া অ্যান্ড্রু ব্যালবার্নি ২৫ ও হ্যারি টেক্টর ২৩ রান করেন।