রাজশাহী থেকে বৈশ্বিক সোয়েটার বাজারে সাকোয়াটেক্স
১৫০ কোটি টাকার বেশি বিনিয়োগ নিয়ে মাত্র চার বছরেই রপ্তানি বাজারে প্রবেশ করেছে রাজশাহীর সাকোয়াটেক্স সোয়েটার কোম্পানি।
এনা গ্রুপের চেয়ারম্যান এমপি এনামুল হক ২০১৭ সালে রাজশাহীর সপুরায় বিসিক শিল্পনগরী এলাকায় সোয়েটার কারখানাটি স্থাপন করেন। এই কারখানায় স্থানীয় ১,২০০ জন কর্মীর কাজের সুযোগ সৃষ্টি হয়েছে, যার মধ্যে ৮০ শতাংশই নারী।
তবে মহামারি জনিত অভিঘাতের কারণে কারখানায় বর্তমানে ৮০০ জন কর্মী রয়েছে।
নতুনভাবে এ কারখানায় আরো ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগ করতে চায় ইসলামী ব্যাংক। ফলে আগামী দুই বছরের মধ্যে এখানে ১০ হাজার মানুষের কর্মসংস্থান হবে।
কোম্পানিটির কর্মকর্তারা জানান, তাদের কারখানায় প্রতিদিন ১০ হাজার পিস সোয়েটার উৎপাদন হয়, বেশিরভাগের দাম ২৫-১৫০ ডলার পর্যন্ত। তবে বেশি বিক্রি হয় ৬৫ ডলার দামের সোয়েটার। এসব সোয়েটার প্রধানত কানাডা ও ইতালিতে রপ্তানি করা হয়।
সাকোয়াটেক্সের ইয়ার্ন (সুতা) বিভাগের ইনচার্জ মোস্তাফিজুর রহমান জানান, 'বছরে আমরা গড়ে ৮-১০ লাখ পাউন্ড সুতা আমদানি করি। এর মধ্যে, ৬০-৬৫ শতাংশ সুতা আমদানি করা হয় চীন থেকে। অবশিষ্ট সুতা ভিয়েতনাম ও ভারত থেকে আমদানি হয়। ক্রমবর্ধমান চাহিদার কথা মাথায় রেখে আমদানি আরো বাড়াতে হবে।'
প্রোডাকশন ম্যানেজার ফারুক সরকার জানান, 'আমাদের কাছে জাপান ও চীন থেকে আমদানি করা ২০০টি অটোমেটিক মেশিন রয়েছে। যার এক একটির দাম পড়েছে ২৮-৩০ হাজার মার্কিন ডলার। এছাড়া জমির প্লট নেওয়া, বিল্ডিং তৈরি, গ্যাস ও বিদ্যুৎ সংযোগসহ প্রায় ১৫০ কোটি টাকা খরচ হয়েছে।'
রপ্তানির জন্য রাজশাহী থেকে ট্রাকে করে পণ্য চট্টগ্রাম যায়। ফলে পরিবহন খরচ অনেকগুণ বাড়ে। রাজশাহীর অন্যান্য রপ্তানিকারকরাও একই সমস্যা তাড়িত।
তাছাড়া, প্রতি ঈদ মৌসুমে যমুনা সেতু দিয়ে উত্তরবঙ্গমুখী যাত্রীর চাপ বাড়লে ট্রাক চলাচল স্থবির হয়ে পড়ে, তখন বিমানেও পণ্য রপ্তানি করতে হয়, যা উৎপাদিত পণ্যের দাম কয়েকগুণ বৃদ্ধি করে। এর সমাধানে তারা পণ্য পরিবহনে বঙ্গবন্ধু সেতুর পাশে প্যারালাল একটি রেলসেতু স্থাপনের দাবি করেছেন। রেলসেতুটি কম খরচে ট্রেনযোগে রপ্তানিমুখী পণ্য পরিবহনের সুযোগ তৈরি করবে।
এনা গ্রুপ ও সাকোয়াটেক্সে সোয়েটার কোম্পানির চেয়ারম্যান এনামুল হক দ্য বিজনেস স্ট্যান্ডার্ডকে বলেন, 'রাজশাহীতে দক্ষ শ্রমিকদের সংকট রয়েছে। আরেকটি বর সমস্যা পরিবহন। এসব প্রতিকূলতা দূর করতে হবে। আবার সরকার দেশজুড়ে রপ্তানিমুখী শিল্পকে ১ শতাংশ হারে নগদ প্রণোদনা দেয়। কিন্তু, এই অঞ্চলের জন্য ২ শতাংশ হারে দেওয়া দরকার। নাহলে এই অঞ্চলে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে উঠবে না।'
তিনি আরও বলেন, 'রাজশাহীতে কোন ব্যাকওয়ার্ড লিংকেজ শিল্প নেই। তাই সোয়েটারের বিভিন্ন উপাদান যেমন- জিপার, বোতাম সবই চাহিদা অনুসারে তৈরি করতে হয় আমাদের সোয়েটার ফ্যাক্টরিতেই।'
এনামুল হক জানান, এ উদ্যোগের সাফল্য নিয়ে সংশয় থাকায় শুরুতে কেউই এখানে বিনিয়োগ করতে চাননি। কিন্তু, সে অবস্থা বদলেছে। ইসলামী ব্যাংক এখন আমাদের কাছে প্রায় ৪০০ কোটি টাকা বিনিয়োগের প্রস্তাব দিয়েছে। নতুন বিনিয়োগে ব্যাপক আকারে বর্ধিত হবে কারখানার পরিসর। সবকিছু ঠিকঠাক থাকলে, দ্বিতীয় ফেজের কাজ শুরু হবে।
'শিল্প কারখানায় গ্যাস সংযোগ পাওয়া আমাদের বড় উপকার করেছে। এখন রেলসেতু হয়ে গেলে বড় বড় শিল্পপতিরা রাজশাহী অঞ্চলে ইন্ডাস্ট্রি গড়ে তুলতে আগ্রহী হবেন। রাজশাহীতে শিল্পায়নের জন্যই প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা রাজশাহী বিসিক শিল্পনগরী-২ স্থাপন করছেন। এ জেলায় খাদ্য, কনস্ট্রাকশনসহ বিভিন্ন খাতে শিল্প স্থাপনের সম্ভাবনা রয়েছে। তবে এজন্য সহজ শর্তে ব্যাংক ঋণসহ অন্যান্য সহায়তাও একান্ত জরুরি।'
এনা গ্রুপ চেয়ারম্যান বলেন, সহায়তা পেলে আরো অনেক দেশে রপ্তানি করা সম্ভব হবে। চাকরির সন্ধানে ঢাকা না গিয়ে স্থানীয় অনেকেই এখানে সোয়েটার কারখানায় কাজ করতে চাইবে।
সাকোয়াটেক্স সোয়েটার কারখানার একজন কর্মী মিলি আক্তার বলেন, 'রাজশাহীতে হওয়াতে এখানে কাজ করে বাড়তি আয়ের সুযোগ পাচ্ছি। সাকোয়াটেক্সে কাজের পরিবেশও খুব ভালো। এখানে কাজ করে নারীরা স্বাবলম্বী হচ্ছেন।'