২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় বন্ধের প্রতিশ্রুতি বিশ্বনেতাদের
কপ-২৬ শীর্ষ সম্মেলনে ২০৩০ সালের মধ্যে বন উজাড় বন্ধের প্রতিশ্রুতি দিয়েছেন শতাধিক দেশের নেতৃবৃন্দ। জলবায়ু নিয়ন্ত্রণ শীর্ষক এ সম্মেলনের প্রথম বড় চুক্তি এটি।
আমাজন বনের একটি বড় অংশ নির্মূল করে দেওয়া ব্রাজিলও সাক্ষর করেছে এই চুক্তিতে।
আজ মঙ্গলবার স্বাক্ষরিত এই চুক্তি অনুযায়ী, বন উজাড় বন্ধে সরকারি ও বেসরকারি খাত মিলিয়ে প্রায় ১ লাখ ৬৪ হাজার কোটি টাকার তহবিল গড়ে তুলবে বিশ্বনেতারা।
এই পদক্ষেপকে স্বাগত জানিয়েছেন বিশেষজ্ঞরা । তবে ২০১৪ সালে বন উজাড় নিয়ন্ত্রণে বিশ্বনেতাদের পক্ষ থেকে যে ঘোষণা এসেছিল সেটি পূরণে ব্যর্থ হওয়ার কথা স্মরণ করিয়ে সবাইকে সতর্কও করে দিয়েছেন তারা।
গাছ কাটা এবং বন উজাড় করা জলবায়ু পরিবর্তনে সরাসরি ভূমিকা রাখে। কেননা গাছ উষ্ণায়নকারী গ্যাস কার্বন ডাই-অক্সাইড শোষণে অবদান রাখে।
গ্লাসগোর কপ-২৬ সম্মেলনের আয়োজক ব্রিটিশ প্রধানমন্ত্রী বরিস জনসন বলেন, "পূর্বের যেকোনো সময়ের চেয়ে বেশি বিশ্বনেতা নেতা এবার এই গুরুত্বপূর্ণ প্রতিশ্রুতিতে একত্র হয়েছেন।"
বন উজাড় রোধের এই চুক্তিতে সাক্ষর করেছে মোট ১১০টি দেশের প্রতিনিধিরা। স্বাক্ষরকারী দেশগুলোর মধ্যে রয়েছে কানাডা, ব্রাজিল, রাশিয়া ও ইন্দোনেশিয়া।
চুক্তি স্বাক্ষরকারী রাষ্ট্রগুলোর মধ্যেই বিশ্বের ৮৫ শতাংশ বন সম্পদ বিরাজমান।
এছাড়া চুক্তিতে যে তহবিল গড়ে তোলার কথা বলা হয়েছে, সেই তহবিলের একাংশ যাবে উন্নয়নশীল দেশগুলোর ক্ষতিগ্রস্ত জমি পুনরুদ্ধার, দাবানল নিয়ন্ত্রণ ও আদিবাসী সম্প্রদায়কে সহযোগিতা করার কাজে।
২৮টি দেশ খাদ্য ও অন্যান্য কৃষিপণ্যের বাণিজ্যের ক্ষেত্রে বন উজাড় বন্ধ করার ব্যাপারে সম্মত হয়েছে। কৃষিপণ্য উৎপাদনকারী প্রতিষ্ঠানগুলো সাধারণত পশুচারণ ও শস্য উৎপাদনের জন্য বন উজাড় করে থাকে।
আভিভা, শ্রোডার্স এবং এএক্সএ'র মতো ৩০টিরও বেশি বৈশ্বিক অর্থনৈতিক প্রতিষ্ঠান বন উজাড়ের সঙ্গে জড়িত প্রতিষ্ঠানগুলোতে বিনিয়োগ বন্ধের ব্যাপারে একমত হয়েছে।
এছাড়া, বিশ্বের দ্বিতীয় বৃহত্তম ক্রান্তীয় বন কঙ্গো ব্যাসিনকে রক্ষায় ১১০ কোটি ডলারের তহবিল বরাদ্দ করার পরিকল্পনা করা হয় এ সম্মেলনে।
এই চুক্তির ব্যাপারে বিবিসিকে দেওয়া এক সাক্ষাৎকারে ইউনিভার্সিটি কলেজ লন্ডনের জলবায়ু ও বনবিষয়ক বিশেষজ্ঞ অধ্যাপক সাইমন লুইস বলেন, "এতগুলো দেশ থেকে বন উজাড় করা রোধে রাজনৈতিক প্রতিশ্রুতি পাওয়া এবং প্রতিশ্রুতি পূরণে উল্লেখযোগ্য অর্থায়ন পাওয়াটা ভালো সংবাদ।"
বন উজাড়ের গতি কমাতে ২০১৪ সালে নিউইয়র্কে বিশ্বনেতাদের দেওয়া ঘোষণাটির কথাও মনে করিয়ে দেন লুইস। তিনি বলেন, "এরকম ঘটনা আগেও দেখেছি আমরা। কিন্তু বন উজাড়ের গতি একেবারেই কমাতে সক্ষম হননি তারা।"
এবারের চুক্তির ভবিষ্যতও এমন হয় কি না, সেটিই এখন দেখার বিষয়।
সূত্র: বিবিসি।