যুক্তরাষ্ট্রের উৎপাদন বৃদ্ধির আহবান নাকচ ওপেক প্লাসের, ফের বাড়ল তেলের দাম
ওপেক প্লাস জোট আন্তর্জাতিক বাজার স্থিতিশীল করতে যুক্তরাষ্ট্রের আহবান প্রত্যাখ্যান করায় অপরিশোধিত জ্বালানি তেলের দাম আবার বেড়ে ব্যারেল প্রতি ৮১ ডলারের দিকে গেছে। বিশ্বব্যাপী নতুন করে করোনাভাইরাস সংক্রমণ বৃদ্ধির পরিপ্রেক্ষিতে এ আহবান জানিয়েছিল যুক্তরাষ্ট্র।
ফলে আন্তর্জাতিক বাজারে অপরিশধিত জ্বালানির অন্যতম সূচক ব্রেন্ট ক্রুডের দর ব্যারেলপ্রতি ৩৬ সেন্ট বা দশমিক ৪৫ শতাংশ বেড়ে ৮০ দশমিক ৯০ ডলারে উন্নীত হয়। ইউএস ওয়েস্ট টেক্সাস ইন্টারমিডিয়েট সূচকে ৬৪ সেন্ট বা দশমিক ৮১ শতাংশ বৃদ্ধি নিয়ে ব্যারেলপ্রতি ৮০ দশমিক ১৭ ডলারে পৌঁছায়। অবশ্য তা পরে কমে ৭৯ দশমিক ৪৫ ডলারে নেমেছে।
যুক্তরাষ্ট্র ছাড়া বিশ্বের অন্যান্য বৃহৎ জ্বালানি তেল উৎপাদক দেশগুলো ওপেক প্লাস জোটভুক্ত, যার মধ্যে রয়েছে রাশিয়া ও সৌদি আরবের মতো আন্তর্জাতিক বাজার নিয়ন্ত্রক শক্তি।
গত বৃহস্পতিবারের এক বৈঠকে ওপেক প্লাসভুক্ত বৃহৎ উৎপাদক দেশগুলো আগামী ডিসেম্বর পর্যন্ত তাদের দৈনিক ৪ লাখ ব্যারেল উত্তোলনের পূর্ব-পরিকল্পনা ধরে রাখার ব্যাপারে সিদ্ধান্ত নেয়। এর ফলে কার্যত, মার্কিন প্রেসিডেন্ট জো বাইডেন সরবরাহ বাড়িয়ে জ্বালানি বাজার শান্ত রাখার যে আহবান জানিয়েছিলেন তা প্রত্যাখ্যান করা হয়।
অর্থনৈতিক প্রতিকূলতার যুক্তিতে যুক্তরাষ্টের প্রেসিডেন্টের এ অনুরোধ রাখা সম্ভব নয় বলে জানিয়েছে জোটের প্রভাবশালী সদস্য সৌদি আরব।
২০২০ সালে মহামারির প্রথম বছর বিশ্বব্যাপী জ্বালানি তেলের চাহিদায় ব্যাপক পতন লক্ষ্য করা যায়। প্রধান প্রধান অর্থনীতির দেশগুলো লকডাউনে চলে যাওয়ায় কমে আসে ভোক্তা চাহিদা। তখনই সরবরাহ সঙ্কোচনের সিদ্ধান্ত নেয় ওপেক প্লাস, যা এখনো ধরে রেখেছে। অবশ্য বিশ্ববাজারে চাহিদা বাড়ার পরিপ্রেক্ষিতে চলতি বছর কিছুটা সরবরাহ বাড়ানো হলেও তা ক্রমবর্ধমান চাহিদার তুলনায় যথেষ্ট নয়। মূলত জ্বালানি তেলের দাম শক্তিশালী রাখতেই এমন পদক্ষেপ।
প্রেসিডেন্ট বাইডেন জ্বালানির দাম নিয়ে নিজ দেশের ভেতরেও রাজনৈতিক চাপে আছেন। ইতোমধ্যেই যুক্তরাষ্ট্রে গ্যাসোলিন গ্যালনপ্রতি ৪ ডলার ছুঁইছুঁই করছে প্রায়। বড়দিনের ছুটির আগে মার্কিন ভোক্তা ও গাড়িচালকদের জন্য যা বড় সমস্যা, তাই চাপ আসছে হোয়াইট হাউজের ওপর। এ বাস্তবতায় জি-২০ ভুক্ত বৃহৎ জ্বালানি সরবরাহকারী দেশগুলোর প্রতি তাদের বাড়তি সক্ষমতা কাজে লাগিয়ে সরবরাহ বৃদ্ধির আহবান জানান বাইডেন।
ওপেক প্লাস বৈঠকে সে আহবান প্রত্যাখ্যাত হওয়ার পর হোয়াইট হাউজ জানায়, যুক্তরাষ্ট্র সরকার এখন তার নিজস্ব ক্ষমতার সবটুকু ব্যবহার করে সব নাগরিকের জন্য সস্তায় জ্বালানি সরবরাহের উদ্যোগ নেবে।
এ প্রসঙ্গে ইউবিএস এর তেলবাজার বিশ্লেষক জিওভান্নি স্টাওনোভো জানান, যুক্তরাষ্ট্রসহ অন্যান্য বৃহৎ জ্বালানি ভোক্তা দেশ তাদের কৌশলগত রাষ্ট্রীয় মজুদ থেকে সরবরাহ বৃদ্ধির উদ্যোগ নেবে কি না সেদিকেই এখন সবার দৃষ্টি।
'এমন সিদ্ধান্তে তেলের দাম পতন লক্ষ্য করবে। তবে কৌশলগত মজুদ সাময়িকভাবে মূল্যের চাপ কমাতে পারলেও তা জীবাশ্ম জ্বালানি খাতে অপেক্ষাকৃত কম বিনিয়োগ ও তার সাথে পাল্লা দিয়ে বাড়া চাহিদার মতো সমস্যা সমাধান করতে পারবে না।'
- সূত্র: রয়টার্স