দিনে ৪ হাজার বাংলাদেশিকে ভিসা দিচ্ছে সৌদি দূতাবাস
ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাস বর্তমানে প্রতিদিন প্রায় ৪ হাজার বাংলাদেশিকে ভিসা দিচ্ছে। রাজধানীর কোভিড পরিস্থিতির উন্নতি, মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ অর্থনীতির দেশটির ভাইরাসের প্রভাব দ্রুত কাটিয়ে ওঠা এবং বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য বর্ধিত কোটা সুবিধার কারণে ভিসা দেওয়ার এই হার বেড়েছে।
মঙ্গলবার ঢাকায় এক অনুষ্ঠানে বাংলাদেশে নিযুক্ত সৌদি আরবের রাষ্ট্রদূত ঈসা ইউসেফ ঈসা আলদুহাইলান বলেন, কোভিড পরিস্থিতি স্বাভাবিক হওয়ায় সৌদি দূতাবাস সম্প্রতি দিনে ৮,৬০০ বাংলাদেশিকে ভিসা দিয়েছে। এটাই তাদের একদিনে সর্বোচ্চ ভিসা প্রদানের রেকর্ড।
সৌদি আরবে বাংলাদেশের জনশক্তি নিয়োগকারীদের মতে, মহামারির আগে প্রতিদিন গড়ে প্রায় চার থেকে ছয় হাজার বাংলাদেশি দূতাবাস থেকে সৌদি ভিসা পেতেন।
অনুষ্ঠানে বাংলাদেশকে ১৫ লাখ ডোজ করোনাপ্রতিরোধী টিকা উপহার হিসেবে হস্তান্তরের সময় রাষ্ট্রদূত বলেন, বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থা দ্বারা অনুমোদিত চার ধরনের টিকা নিয়ে থাকলে সৌদিতে বাংলাদেশিদের কোয়ারেন্টাইনের প্রয়োজন নেই। এ টিকাগুলো হলো- অক্সফোর্ড-অ্যাস্ট্রাজেনেকা, ফাইজার-বায়োটেক, মডার্না এবং জনসন অ্যান্ড জনসনের টিকা।
এর বাইরে যেসব অভিবাসীরা চীনা টিকা গ্রহণ করেছে, তাদের জন্য উপরের চারটি টিকার যেকোনটির বুস্টার ডোজের প্রয়োজন হবে।
তবে চীনে উৎপাদিত কোভিড-১৯ টিকা অনুমোদনের বিষয়টি বিবেচনা করার জন্য সৌদি সরকারকে লিখবেন বলে জানিয়েছেন সৌদি রাষ্ট্রদূত।
উল্লেখ্য, বাংলাদেশের টিকা গ্রহণকারী জনগোষ্ঠীর একটা বড় অংশই চীনা টিকা গ্রহণ করেছে।
বাংলাদেশি কর্মীদের জন্য এ বছরের জুলাইতেই কোটার পরিমাণ ২৫% থেকে বাড়িয়ে ৪০% করেছে সৌদি। তাছাড়া মহামারির প্রভাব কাটিয়ে উঠতেও দ্রুত সক্ষম হয়েছে সৌদি আরব; এর বাইরে বেড়েছে বিশ্বব্যাপী তেলের দাম। সব মিলিয়ে উপসাগরীয় দেশটি অধিক সংখ্যক অভিবাসী শ্রমিক নিয়োগে আগ্রহী এখন।
একটি বেসরকারি হিসাব অনুযায়ী, বর্তমানে প্রায় ২৫ লাখ বাংলাদেশি সৌদি আরবে কর্মরত রয়েছেন।
চলতি বছরের জানুয়ারি থেকে অক্টোবর পর্যন্ত দেশটি প্রায় নতুন তিন লাখ কর্মসংস্থান তৈরি করেছে, যা বিদেশে বাংলাদেশি কর্মীদের ৭৮ শতাংশ চাকরির চাহিদা মিটিয়েছে।
এখনো যথেষ্ট নয়
বাংলাদেশি জনশক্তি নিয়োগকারীরা বলছেন, উপসাগরীয় দেশটিতে যে বিপুল শ্রম চাহিদা রয়েছে তার বিপরীতে ঢাকাস্থ সৌদি দূতাবাসের ইস্যু করা ভিসার পরিমাণ যথেষ্ট নয়।
রিক্রুটিং এজেন্সি রাজধানী ইন্টারন্যাশনালের স্বত্বাধিকারী টিপু সুলতান বলেন, "মহামারির আগে আমরা যেকোনো কর্মদিবসে যেকোনো সংখ্যক পাসপোর্ট জমা দিতে পারতাম, কিন্তু এখন দূতাবাসের তালিকাভুক্ত নিয়োগকারীরা সপ্তাহে একবার মাত্র সীমিত সংখ্যক পাসপোর্ট জমা দিতে পারেন।"
তিনি অভিযোগ করে বলেন, তারা যে পাসপোর্ট জমা দেন তার অর্ধেক ভিসা ছাড়াই ফেরত দেওয়া হচ্ছে। এটি বাংলাদেশ থেকে অভিবাসনের গতি কমিয়ে দিচ্ছে।
এদিকে বাংলাদেশ অ্যাসোসিয়েশন অফ ইন্টারন্যাশনাল রিক্রুটিং এজেন্সির (বায়রা) সাবেক মহাসচিব শামীম আহমেদ চৌধুরী নোমান বলেন, "এখন ভাইরাস পরিস্থিতি প্রায় স্বাভাবিক হয়ে উঠেছে। সৌদির ক্রমবর্ধমান শ্রম চাহিদা মোকাবেলায় দূতাবাসের উচিত আরও অধিক সংখ্যক ভিসা ইস্যু করা।"
নোমান জানান, দুই হাজার নিয়োগকারীর মধ্যে মাত্র ৭০০ রিক্রুটিং এজেন্সি ঢাকার সৌদি দূতাবাসের তালিকাভুক্ত। শ্রম রপ্তানির গতি বাড়াতে তিনি দূতাবাসের প্রতি আরও নিয়োগকারীদের তালিকাভুক্ত করার আহবান জানান।
উল্লেখ্য, মধ্যপ্রাচ্যের তেলসমৃদ্ধ দেশটি অক্টোবরে ৫১,৪৭২ জন বাংলাদেশিকে নিয়োগ দেয়, এর আগে জুনে এ সংখ্যা ছিল ৪৪,৯৮৫।
এই নভেম্বরে দেশটিতে বাংলাদেশি কর্মীদের সংখ্যা, বিশেষ করে পরিচ্ছন্নতা ও নির্মাণ খাতে, ৪০,০০০-৫০,০০০ ছাড়িয়ে যাবে বলে আশা করা হচ্ছে।
অধিকাংশ মানুষ টিকা পেলে তারপর বুস্টার ডোজ: স্বাস্থ্যমন্ত্রী
মঙ্গলবার স্বাস্থ্যমন্ত্রী জাহিদ মালেক বলেছেন, দেশের অধিকাংশ মানুষ টিকার দুই ডোজের আওতায় চলে আসার পর বুস্টার ডোজের কথা চিন্তাভাবনা করা হবে।
সৌদিগামী কর্মীদের বুস্টার ডোজ দেওয়ার ব্যাপারে জানতে চাইলে মন্ত্রী বলেন, "প্রয়োজন পড়লে আমরা বুস্টার শট দেওয়ার ব্যাপারে চিন্তাভাবনা করব।"
সরকার কোভিড-১৯ টিকাদান সংক্রান্ত কারিগরি কমিটি এবং কোভিড সংক্রান্ত জাতীয় পরামর্শক কমিটির সঙ্গে আলোচনা করে ব্যবস্থা নেবে বলে জানান তিনি।
"আমরা কমিটির সুপারিশ অনুসরণ করে বুস্টার ডোজের জন্য ঝুঁকিপূর্ণ জনগোষ্ঠীকে অগ্রাধিকার দেওয়ার চেষ্টা করব," যোগ করেন তিনি।