ইউরোপে নতুন কোভিড নিষেধাজ্ঞা, অর্ডার কমার শঙ্কায় পোশাক রপ্তানিকারকরা
করোনাভাইরাসের নতুন 'ভ্যারিয়েন্ট' বা ধরনের কারণে বাংলাদেশের রপ্তানি পোশাকের বৃহত্তম বাজার ইউরোপে আবারও লকডাউনের আশঙ্কা দেখা দিয়েছে। মহামারি মোকাবিলায় ইউরোপ যাতে সফল হয় সেই প্রত্যাশাই করছেন বাংলাদেশি পোশাক রপ্তানিকারকরা, কারণ পরিস্থিতি খারাপ হলে ইউরোপের বাজারে তাদের রপ্তানি কমে যেতে পারে।
করোনার নতুন ধরন ওমিক্রনের বিস্তার রোধে ইতোমধ্যেই ইউরোপের বেশ কয়েকটি দেশ নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করেছে। বিশ্ব স্বাস্থ্য সংস্থার (ডব্লিউএইচও) মতে, করোনার এই নতুন রূপ অত্যন্ত 'উদ্বেগজনক'।
প্রধান রপ্তানি বাজার ইউরোপীয় দেশগুলোর পরিস্থিতি গভীরভাবে পর্যবেক্ষণ করছেন দেশের পোশাক প্রস্তুতকারীরা। রপ্তানি বাজারের সাময়িক ধীরতার মধ্যেও তারা আশা করেছিলেন, এবার হয়তো বিশ্বব্যাপী ব্র্যান্ডগুলো তাদের অর্ডার স্থগিত করবে না।
বাংলাদেশ গার্মেন্টস ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিজিএমইএ) সহ-সভাপতি শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, "রপ্তানির অন্যতম প্রধান গন্তব্যস্থল জার্মানিতে প্রতিদিন ৫০ থেকে ৬০ হাজার মানুষ সংক্রমিত হচ্ছে; অন্যদিকে, নেদারল্যান্ডস ইতোমধ্যেই লকডাউন আরোপ করেছে।"
তিনি বলেন, কোভিড-১৯-এর দ্বিতীয় ধাক্কার পর ইউরোপীয় দেশগুলোতে পুনরায় দোকান খোলার গত তিন মাসে, বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিখাত সবে পুনরুদ্ধার করতে শুরু করেছে। এই পরিস্থিতিতে কোভিডের নতুন ধরন রপ্তানি খাতের জন্য নতুন উদ্বেগের কারণ হিসেবে দেখা দিয়েছে।
"আমরা মূলত ক্রেতাদের তাদের অর্ডার আটকে রাখার সম্ভাবনা নিয়ে উদ্বিগ্ন," তিনি আরও বলেন।
বিজিএমইএ'র তথ্য অনুযায়ী, কোভিড-১৯-এর প্রথম ঢেউয়ের সময় বিশ্বব্যাপী ফ্যাশন ব্র্যান্ড ও ক্রেতারা তাদের ৩.১৫ বিলিয়ন ডলারেরও বেশি মূল্যের পোশাকের অর্ডার বাতিল ও স্থগিত করেছিল, যা দেশের অন্তত ১ হাজার ১৩৬টি কারখানার ওপর প্রভাব ফেলেছে।
শহীদুল্লাহ আজিম বলেন, "বিগত কয়েকমাস যাবত ক্রেতারা পণ্য দ্রুত পাঠানোর জন্য আমাদের ওপর চাপ দিলেও, এখন তারা আমাদের উৎপাদন কমিয়ে দিতে বলছে।"
চলতি বছরের অক্টোবরে বাংলাদেশ পোশাক রপ্তানিখাত থেকে আয় করেছে ৪.৭২ বিলিয়ন ডলার, যা একমাসে দেশে আয়ের সর্বোচ্চ রেকর্ড।
রপ্তানি উন্নয়ন ব্যুরোর সাময়িক তথ্য অনুযায়ী, রপ্তানিখাতে ওই মাসের জন্য নির্ধারিত আয়ের লক্ষ্যমাত্রা ছিল ৩.৪৬ বিলিয়ন ডলার। এই লক্ষ্যমাত্রা অতিক্রম করায় এ বছরের আয় বৃদ্ধি পেয়েছে ৬০.৩৭ শতাংশ।
অক্টোবরে বাংলাদেশ থেকে পোশাকের চালান ৫৩.২৭ শতাংশ বেড়ে দাঁড়িয়েছে ৩.৫৬ বিলিয়ন ডলারে, যা এই অর্থবছরের প্রথম চার মাসে মোট রপ্তানি আয়কে উন্নীত করেছে ১৫.৭৪ বিলিয়ন ডলারে।
বাংলাদেশ অ্যাপারেল এক্সচেঞ্জের প্রতিষ্ঠাতা ও সিইও মোস্তাফিজ উদ্দিন বলেন, "বাজার পরিস্থিতি কেমন হয় তা বুঝতে আমাদের ১৫ ডিসেম্বর পর্যন্ত অপেক্ষা করতে হবে।"
তিনি বলেন, "যদি ব্র্যান্ডগুলো পণ্য বিক্রি করতে না পারে বা তাদের ব্যবসা প্রভাবিত হয়, তবে এটি আমাদের ব্যবসায়েও প্রভাব ফেলবে।"
শীর্ষস্থানীয় পোশাক রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান স্নোটেক্স গ্রুপের ব্যবস্থাপনা পরিচালক এসএম খালেদ বলেন, "আমরা ইউরোপীয় ইউনিয়নের কোভিড পরিস্থিতি নিয়ে ক্রেতাদের সঙ্গে কথা বলছি। ব্যবসা টিকিয়ে রাখতে তারা হিমশিম খাচ্ছেন বলে আমাদের জানিয়েছেন।"
"তবে ক্রেতারা আমাদের আশ্বস্ত করেছেন, তারা আমদানি চালিয়ে যাবেন; কারণ তাদের স্টোরের ধারণক্ষমতার তুলনায় পণ্যের ঘাটতি রয়েছে," তিনি যোগ করেন।
খালেদ আরও বলেন, যদি ইউরোপীয় ইউনিয়নের ৮ থেকে ১০টি দেশ নতুন বিধিনিষেধ আরোপ করে, তাহলে অবশ্যই এর প্রভাব বাংলাদেশের পোশাক রপ্তানিখাতের ওপর পড়বে। তবে, কোনো একক দেশের বিধিনিষেধ গার্মেন্টস ব্যবসায়ে তেমন প্রভাব ফেলবে না বলে তিনি মনে করেন। কারণ অনেক দেশেই অন্তত একটি ব্র্যান্ডের কার্যক্রম চলমান রয়েছে।
বাংলাদেশ নিটওয়্যার ম্যানুফ্যাকচারার্স অ্যান্ড এক্সপোর্টার্স অ্যাসোসিয়েশনের (বিকেএমইএ) সহ-সভাপতি ফজলে শামীম এহসান বলেন, "ক্রেতারা মহামারির প্রথম ধাক্কা থেকে শিক্ষা নিয়েছে। তারা জানে, যদি তারা কোনো অর্ডার বাতিল বা স্থগিত করে, তাহলে এটি তাদের ব্র্যান্ডের ভাবমূর্তিকে নষ্ট করবে।"
নতুন এই বিধিনিষেধের সময় ইউরোপীয় ইউনিয়নভুক্ত দেশগুলো জীবন ও জীবিকার ব্যাপারটিও বিবেচনায় রাখবে বলে তিনি আশা প্রকাশ করেন।