কর্মকর্তাদের ইউজার আইডি পাসওয়ার্ড জালিয়াতি রোধে কাস্টমসের ১২ নির্দেশনা
রপ্তানি পণ্য শুল্কায়নে শুল্ক কর্মকর্তাদের ইউজার আইডি পাসওয়ার্ড জালিয়াতি করে সফটওয়্যারে অনুপ্রবেশ ঠেকাতে ১২ ধরনের নির্দেশনা জারি করেছে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস। সম্প্রতি চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের চট্টগ্রাম ইপিজেড ডিভিশনের কর্মকর্তাদের ইউজার আইডি পাসওয়ার্ড জালিয়াতির ঘটনায় এক গণবিজ্ঞপ্তির মাধ্যমে এই নির্দেশনা জারি করা হয়েছে।
সিইপিজেড ডিভিশনের আওতাধীন সকল আমদানিকারক, রপ্তানিকারক, ইনভেস্টর, কমার্শিয়াল ম্যানেজার, সিএন্ডএফ এজেন্ট, কাস্টম ও জেটি সরকারদের বিজ্ঞপ্তিতে এসব নির্দেশনা দেয় কাস্টমস কর্তৃপক্ষ। চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের সিইপিজেড ডিভিশনের ডেপুটি কমিশনার মিজানুর রহমান সম্প্রতি এই বিজ্ঞপ্তি জারি করেছেন।
বিজ্ঞপ্তিতে উল্লেখ করা হয়, দুই জন কর্মকর্তার আইডি ও পাসওয়ার্ড চুরি, প্রযুক্তিগত প্রক্রিয়ায় কৌশলগত উপায়ে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী সহযোগিতায় কাস্টমস এ্যসাইকুডা ওয়ার্ল্ড সিস্টেমে প্রবেশ করে। সিস্টেম্যাটিক শুল্কায়ন দেখিয়ে বেপজা ইপিজেডস্থ রপ্তানিমুখী শিল্প প্রতিষ্ঠানের কাঁচামাল শুল্কায়নের তড়িৎ ও তৎক্ষণাৎ সেবা (ট্রেড ফেসিলিটেশন) এর আড়ালে কিছু জাল, বানোয়াট, ভুয়া অসত্য, ভিত্তিহীন দালিলাদি দাখিল করে পণ্য চালান অবৈধভাবে খালাস গ্রহণের অপচেষ্টা চালানো হয়। এ ইস্যুটি জাতীয় গণমাধ্যমে বহুলভাবে সম্প্রচারিত হয়েছে। বিষয়টি নিয়ে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস কর্তৃক গঠিত তদন্ত কমিটি এবং সরকারী একাধিক দপ্তর ও সংস্থা কাজ করছে।
এ অবস্থায় ভবিষ্যতে এ ধরনের অপকর্ম চিহ্নিত করার উদ্দেশ্যে ও কর্মকর্তাদের আইডি পাসওয়ার্ড সুরক্ষা, জাল জালিয়াতি রোধে সার্বিক নিরাপত্তা সতর্কতামূলক কার্যক্রমের অংশ হিসেবে সিইপিজেড ডিভিশন কাস্টমস কর্তৃপক্ষ গণবিজ্ঞপ্তি জারি করে।
নির্দেশনাগুলোর মধ্যে রয়েছে, প্রত্যেক কর্মদিবসের বেলা ১২টার মধ্যে যে সকল ত্রুটিমুক্ত আবেদন, নিবেদন, ফোল্ডার, ডকেটিং, বিল অব এক্সপোর্ট পাওয়া যাবে তা ওই দিনই নিষ্পত্তির লক্ষ্যে কার্যক্রম গ্রহণ করতে হবে। কর্মকর্তাদের টেবিলের সামনে নথি হাতে অযথা জটলা বা ভিড় করা যাবে না। কায়িক পরীক্ষার নথি পর্যালোচনার কোন ফাইন্ডিংস পরিলক্ষিত হলে তা দ্রুত সময়ের মধ্যে উর্ধ্বতন কর্মকর্তাকে অবহিত করতে হবে এবং মেরিটযুক্ত ফাইল ব্যক্তিগত তদারকিতে নিষ্পত্তি করতে হবে।
শুল্কায়ন ও রাজস্ব সংক্রান্ত কোন অনিষ্পন্ন বিল অব এন্ট্রি/ এক্সপোর্ট সিএন্ডএফ এজেন্ট আমদানিকারক কর্মকর্তা কর্তৃক ধরে রাখলে লাইসেন্সিং বিধিমালা অনুযায়ী ব্যবস্থা গ্রহণের সুপারিশ করা হবে। পারমিটধারী কাস্টমস সরকার ও জেটি সরকারগণকে অবশ্যই বৈধ পরিচয়পত্র (আইডি কার্ড) বহন ও চাওয়ামাত্র তা প্রদর্শন করতে হবে।
বিল অব এক্সপোর্ট সংশোধনী আবেদনের প্রেক্ষিতে সিএন্ডএফ এজেন্ট আবেদন করলে সংশোধিত দলিলাদি আমদানি রপ্তানিকারক প্রতিষ্ঠান বা তার কমার্শিয়াল ম্যানেজার কর্তৃক সত্যায়িত হতে হবে এবং সংশোধনের ক্ষেত্রে কলাম নং পূর্বের তথ্য ও সংশোধনযোগ্য তথ্য ছক আকারে উল্লেখ করতে হবে। নির্ধারিত সময়ের বাইরে কর্মকর্তাদের কক্ষে দর্শনার্থী হিসেবে (রপ্তানি কার্যক্রম ব্যতিত) প্রবেশ করা যাবে না। আমদানি-রপ্তানি প্রতিষ্ঠান বা নিযুক্ত কর্মকর্তা সিএন্ডএফ এজেন্ট ওয়ার্ক পারমিট ও আইডিকার্ড ধারী বৈধ কাস্টম জেটি সরকার ব্যতিত কেউ অত্র দপ্তর ও কার্য এলাকায় বিনা অনুমতিতে প্রবেশ বা ঘোরাঘুরি করতে পারবে না। বহিরাগতদেরকে অবৈধ অনুপ্রবেশকারী হিসেবে চিহ্নিত করে ঘটে যাওয়া দুর্ঘটনার সন্দেহভাজন আশঙ্কায় অনুসন্ধান,তদন্তের স্বার্থে আইনের আশ্রয়ে সোপর্দ করা হবে।
চট্টগ্রাম কাস্টম হাউসের ডেপুটি কমিশনার মিজানুর রহমান বলেন, সম্প্রতি কাস্টম কর্মকর্তাদের ইউজার পাসওয়ার্ড জালিয়াতি ঘটনার আর যাতে পুনরাবৃত্তি না ঘটে সেজন্য সংশ্লিষ্ট প্রতিষ্ঠানগুলোকে ১২ ধরনের নির্দেশনা দেওয়া হয়। আশা করছি সংশ্লিষ্টরা এসব নির্দেশনা মেনে দায়িত্বশীল ভূমিকা রাখবেন।
সম্প্রতি সরকারের আর্থিক প্রণোদনা আত্মসাতের জন্য ২৪টি রপ্তানি চালানে করা হয়েছে জালিয়াতি। পণ্য রপ্তানি না করেও কাগজপত্রে ১২ কোটি ৭৮ লাখ টাকার আমের জুস, ড্রাই কেক, মসলা ও বিস্কুট রপ্তানি দেখানো হয়েছে। কৃষিজাত পণ্য রপ্তানিতে সরকার ২০ শতাংশ আর্থিক প্রণোদনা দেয়। ভুয়া রপ্তানির এসব চালানে সরকারের ২ কোটি ৫৫ লাখ টাকা প্রণোদনা আত্মসাৎ করা হয়েছে।
এই ঘটনায় রাজস্ব কর্মকর্তা মাহবুবুর রহমান সরকার এবং শাহ আলমের ইউজার আইডি ব্যবহার করা হয়। মাই ফুডস লিমিটেড, নাবিহা অ্যাগ্রো লিমিটেড এবং অলিভ সোর্সিং সংযুক্ত আরব আমিরাত, সিঙ্গাপুর, মালয়েশিয়া, ডেনমার্ক ও মালদ্বীপে এসব পণ্যের রপ্তানি দেখানো হয়। এই ঘটনায় গত ১৫ নভেম্বর ৪ সদস্য বিশিষ্ট একটি তদন্ত কমিটি গঠন করে চট্টগ্রাম কাস্টম হাউস।