সৃজনশীলতা বাড়াতে চান? তাহলে টমাস এডিসন ও সালভাদর দালির মতো ঘুমিয়ে নিন!
সৃজনশীল হতে চান। নাকি গুণটির সহজাত অধিকারী আপনি? তবে কী আছে আরো বিখ্যাত হবার আশা? যদি বলা হয় সে উপায় খুবই সহজ, শুধু নিদ্রাদেবীকে একটু কম তুষ্ট করলেই হবে।
একজন বিখ্যাত বিজ্ঞানী ও অমর শিল্পী- দুজনের থেকে কৌশলটি রপ্ত করে নিন তবে। স্বপ্রতিভায় জগদ্বিখ্যাত দুজনেই। তবে সৃষ্টি সুখের উল্লাসে মাতা বিরল মানুষদের সব সময়েই চাই উদ্দীপনা। তাই যখনই সৃজনশীলতার অভাববোধ করতেন অদ্ভুত এক উপায়ে ঘুমিয়ে নিতেন টমাস আলভা এডিসন ও সালভাদর দালি।
ঘুমের সময় হাতে রাখতেন ছোটখাট কোনো বস্তু। নিদ্রা গভীর হলেই যা মাটিতে পড়ে শব্দ হতো, আর তাতেই জেগে উঠতেন তারা। আর ওঠা মানেই কী আয়েশে হাই তোলা? মোটেও তা নয়, বরং ছুটে যেতেন কাজে।
সম্প্রতি বৈজ্ঞানিক ম্যাগাজিন লাইভ সায়েন্সে তাদের এ কৌশল নিয়ে লিখেছেন বিজ্ঞান লেখক ইয়াসেমিন সাপাকোগলু।
তিনি বলছেন, দালি আর এডিসন এভাবে তাদের মগজকে ঘুমের প্রথম স্তর পর্যন্ত নিতেন। কিন্তু, তারপরই টানতেন বিরতি। গেল সপ্তাহে সায়েন্স অ্যাডভান্সেস অনলাইন জার্নালে প্রকাশিত এক গবেষণায় বলা হয়েছে, জাগরণ আর ঘুমের মধ্যেকার এই ঢুলু ঢুলু তন্দ্রালু সময়ের নাম হিপনাগোজিয়া, যা সৃজনশীলতা সৃষ্টি করতে পারে।
গবেষণার সহ-লেখক প্যারিস ব্রেইন ইনস্টিটিউটের নিউরোসায়েন্টিস্ট ডেফিন অদিত্তে বলেন, "আমার অনেক হিপনোগোজিক অভিজ্ঞতা আছে। মস্তিস্কের অনেকটা স্বপ্নালু এই স্তর আমাকে সব সময় অভিভূত করেছে। তাই বলতে গেলে কোনো বিজ্ঞানীই গত দুই দশকে এদিকটি নিয়ে গবেষণা করেননি জেনে আমি প্রচণ্ড বিস্মিত হয়েছি।"
এরপর দালি আর এডিসনের ঘুমের কৌশলের রহস্য উদ্ধারে কোমড় বেঁধেই নেমে পড়লেন ডেফিন।
তিনি ও তার সহযোগী বিজ্ঞানীরা ১০৩ জনের ওপর পরীক্ষা চালান। তাদের প্রত্যেককেই গণিতের সমস্যা দেওয়া হয়। সমাধানের গোপন সংকেতও লুকানো ছিল প্রশ্নেই। অংশগ্রহণকারীদের ১৬ জন তাৎক্ষণিকভাবেই তার সমাধান করে ফেলেন। বাকিদের ২০ মিনিট ঘুম বিরতি দেওয়া হয়। এসময় তাদের ব্রেইন ওয়েভ বা মগজের তরঙ্গ মাপা হয় মেশিনে।
দালি ও এডিসনের মতোই তাদের হাতেও দেওয়া হয় কোনো একটি বস্তু। ঘুম ভাঙ্গা মাত্রই এসময় তারা কী ভেবেছেন তা রেকর্ড করে রাখতে বলা হয়।
এরপর তাদের দেওয়া হয় আরো প্রশ্ন। অংশগ্রহণকারীদের মধ্যে যারা হিপনোগোজিয়ার স্তরে পৌঁছেছিলেন, তাদের ৮৩ শতাংশ গোপন সংকেত উদ্ধার করে সঠিক উত্তর দেন।
সে তুলনায় বাকি যে ৩১ শতাংশ ঘুমাননি এবং যে ১৪ শতাংশ গভীর নিদ্রায় চলে গিয়েছিলেন তারা এসব প্রশ্নের সমাধান করতে ব্যর্থ হন।
এ বিষয়ে ক্যালিফোর্নিয়া বিশ্ববিদ্যালয়ের মনোবিজ্ঞানী জনাথন স্কুলার বলেন, "নিদ্রার একটি স্তর সৃজনশীলতার জন্য আদর্শ, নতুন গবেষণাটির ফল সেদিকেই ইঙ্গিত দেয়। এটা এমন একটা পর্যায় যখন পুরোপুরি অসচেতন হওয়ার আগে মানুষ অনেককিছু ভাবার সুযোগ পায়। গভীর ঘুমে সেভাবে চিন্তার সুযোগ থাকে না। এমন অনেক উপকরণ নিয়ে সে ভাবে যা আরো পরের স্তরে গিয়ে সম্ভব নয়।"
গবেষণার সাথে জড়িত নন, এমন আরেকজন বিজ্ঞানী সান্তা বারবারা সায়েন্টিফিক আমেরিকান ম্যাগাজিনকে বলেন, সামান্য তন্দ্রা অংশগ্রহণকারী কারো কারো মগজকে সজীব করে তুলেছিল। ফলে তারা জেগে উঠে স্বচ্ছ মনে প্রশ্নের সমাধান করার সুযোগ পেয়েছেন।
হিপনাগোজিয়া সৃজনশীলতার জন্য কেন আদর্শ- সেটি এখনও পুরোপুরি স্পষ্ট নয়। ডেফিন বলেন, এই অবস্থায় মানুষ চারপাশ সম্পর্কে আধা-সচেতন একটা অবস্থায় থাকে। কিন্তু একইসময়ে চিন্তাকে কোনো একদিকে ভেসে বেড়ানোর সুযোগও করে দিতে পারে। ফলে ঢিলেঢালা সচেতনতা এবং অদ্ভুত ভাবনাচিন্তার এক জগত তৈরি হয়। এই অবস্থায় কোনো ভালো আইডিয়া এলে আপনি সেটিকে সহজেই চিনতে পারেন।
- সূত্র: স্মিথসোনিয়ান ম্যাগাজিন