নাসার ডিপ স্পেস ফুড চ্যালেঞ্জ: অংশ নিতে পারেন আপনিও
শূন্যের আরো গভীরে, অর্থাৎ দূর মহাশূন্যে নভোচারী পাঠানোর প্রস্তুতি নিচ্ছে মার্কিন মহাকাশ সংস্থা নাসা (ন্যাশনাল অ্যারোনটিকস অ্যান্ড স্পেস অ্যাডমিনিস্ট্রেশন)। সংস্থাটি চিন্তিত একটি জটিল জ্বালানী ব্যবস্থা নিয়ে যা মানবদেহে শক্তি জোগান দেয়—খাবার।
ভবিষ্যতের মহাশূন্য অভিযাত্রীদের এমন প্রযুক্তি সরবরাহ করতে চাইছে নাসা, যা তাদেরকে একইসঙ্গে পুষ্টিকর এবং সুস্বাদু খাবারের জোগান দিতে পারবে। ওরকম একেক যাত্রায় অভিযাত্রীদের হয়তো সুদীর্ঘকাল কাটাতে হতে পারে।
কানাডিয়ান স্পেস এজেন্সির সঙ্গে যৌথভাবে নাসা সকলকে এমন একটি টেকসই খাদ্য উৎপাদন প্রযুক্তি বা ব্যবস্থা উদ্ভাবনের আহ্বান জানাচ্ছে, যাতে স্বল্প উপকরণ ব্যবহার করেই যথেষ্ট পরিমাণ খাবার উৎপাদন করা যায়। যে ব্যবস্থা একইসঙ্গে অতি অল্প পরিমাণে বর্জ্য তৈরি করে।
ডিপ স্পেস ফুড চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় নাসা প্রতিযোগীদের বলছে—এমন একটি খাদ্য উৎপাদন ব্যবস্থা বা প্রযুক্তি নকশা করুন এবং যা স্পর্শযোগ্য পুষ্টিকর পণ্য, অর্থাৎ খাবার জোগান দিতে পারবে।
এক্ষেত্রে যে সমস্যার কথা নাসা সামনে আনছে, তা হলো সময়ের সঙ্গে সঙ্গে খাবার তার পুষ্টিমান হারায়। অর্থাৎ—ধরা যাক মঙ্গলের কথা—কয়েক বছরের অভিযানে প্যাকেটজাত খাবার নভোচারীদের প্রয়োজনীয় পুষ্টি সরবরাহ করতে ব্যর্থ হবে।
নাসা ভাবছে পৃথিবীর কথাও। পৃথিবীর খাদ্য ব্যবস্থাই অনিরাপদ। শহর এলাকা কিংবা গ্রাম সর্বত্রই সংকট এখানে ধারাবাহিক। তার ওপর আছে দুর্যোগ—যা খাদ্য সরবরাহ ব্যবস্থায় ভাঙন তৈরি করে। তাই তেমন একটি টেকসই খাদ্য প্রযুক্তি তৈরি করা গেলে তা বন্যা আর দুর্ভিক্ষেও কাজে লাগবে।
'নভোচারীদের দীর্ঘকালব্যাপী খাদ্য সংকট মোকাবিলা করতে অত্যাধুনিক প্রযুক্তি দরকার হবে। খাদ্য সংকটের বৃত্ত অতিক্রম করার প্রযুক্তি মহাশূন্যের অভিযাত্রীদের সুস্থ রাখবে আর পৃথিবীর মানুষকে চিন্তামুক্ত করবে,' বলছিলেন জিম রিউটার। তিনি ওয়াশিংটনে নাসার স্পেস টেকনোলজি মিশন ডিরেকটরেটের সহযোগী প্রশাসক।
প্রথম দফায় গত অক্টোবরে ডিপ স্পেস ফুড চ্যালেঞ্জ মোকাবিলায় উৎসাহী ১৮টি দলকে নাসা ৪ লক্ষ ৫০ হাজার ডলার পুরস্কার দিয়েছে। খুব অল্প উপকরণ ব্যবহারের মাধ্যমে নিরাপদ, গ্রহণযোগ্য, পুষ্টিকর খাদ্য তৈরিতে সহায়ক—এমন বেশ কিছু নতুন প্রযুক্তিগত ভাবনা তুলে ধরেছে দলগুলো।
নাসা এখন নতুন-পুরোনো সব দলকেই আহ্বান জানাচ্ছে দ্বিতীয় দফার আবিষ্কার কাজে অংশ নিতে। এ দফায় দলগুলো নকশা এবং প্রযুক্তির আদল তৈরি করবে। বিজয়ীরা ১ মিলিয়ন ডলার পুরস্কার পাবে।
প্রতিযোগীতার নিয়মাবলি
খাদ্য প্রযুক্তি, ব্যবস্থা বা দুয়েরই সমন্বিত একটি উপায় আবিষ্কারের কথা বলা হচ্ছে ডিপ স্পেস ফুড চ্যালেঞ্জে। চারজন অভিযাত্রীর তিন বছরের খাবার জোগানের সামর্থ্য থাকতে হবে ওই আবিষ্কারের।
সংরক্ষণ, প্রস্তুত, সরবরাহ, প্রক্রিয়াজাতকরণ, পরিবহন, ভোগ এবং বর্জ্য নিষ্কাশন ইত্যাদি সবকিছুর সমন্বয় থাকবে এতে। খাবারও একরকম নয়, বৈচিত্র্যপূর্ণ হবে। পাউরুটির মতো রেডি-টু-ইট ফুড যেমন থাকতে পারে, আবার শুকনো গুঁড়া যেগুলো পরে খাদ্যে পরিণত করা যাবে সেগুলোও থাকতে পারে।
প্ল্যান্টস বা ফাঙ্গাইয়ের কথাও মাথায় রাখতে বলছে নাসা। আবার প্রোটিন কোষের কথাও ভাবতে বলছে, যেগুলোর একটিকে অনেকগুলোতে রূপান্তর করা যাবে।
আগামী ২৮ ফেব্রুয়ারির মধ্যে নতুন দলগুলোকে নাসার ওয়েবসাইটে গিয়ে নিবন্ধন করতে হবে। যেকোনো দেশ থেকেই প্রতিযোগিতায় অংশ নেওয়া যাবে। তবে আমেরিকান আর কানাডিয়ান প্রতিযোগী ছাড়া আর কেউ পুরস্কারের জন্য বিবেচিত হবেন না।
সাধারণত যা খান নভোচারীরা
ব্রাউনি বা ফলের মতো খাবারগুলো পৃথিবীতে আমরা যেমন খাই তেমনভাবেই খান নভোচারীরা। তবে ম্যাকারনি, পনির, স্প্যাগেটি খাওয়ার সময় পানি যোগ করতেই হয়। মহাকাশ স্টেশনে চুলা রাখা আছে যথাযথ তাপমাত্রায় খাবার গরম করে নিতে।
তবে মহাশূন্যে কোনো রেফ্রিজারেটর নেই। তাই সেসব খাবারই মহাশূন্যে পাঠানো হয় যেগুলো পর্যাপ্ত মাত্রায় প্রক্রিয়াজাত করা।
কেচাপ আর মেয়োনেইজও খান নভোচারীরা। লবণ আর মরিচ পাওয়া যায়, তবে তরল অবস্থাতে। কারণ মহাশূন্যে লবণ বা মরিচ ছিটিয়ে খাওয়ার সুযোগ নেই।
প্রতিদিন তিন বেলা খাবার খান নভোচারীরা—ব্রেকফাস্ট, লাঞ্চ এবং ডিনার। মহাকাশে সরবরাহকৃত খাবার পুষ্টিবিদরা পরীক্ষা করে দেন।
ক্যালরি সব অভিযাত্রীর সমান লাগেও না। যেমন ছোটখাটো গড়নের নারী অভিযাত্রীর প্রয়োজন হয় দিনে ১৯০০ ক্যালরি। অন্যদিকে একজন বড়সড় গড়নের পুরুষের লাগে ৩২০০ ক্যালরি।
মহাকাশ স্টেশনে অনেক রকম খাবারই থাকে। যেমন ফল, বাদাম, বাটার, মুরগি, গরু, সীফুড, ক্যান্ডি, ব্রাউনি ইত্যাদি। কফি, চা, লেবুর শরবতও থাকে। প্যাকেটগুলো বিশেষভাবে তৈরি করা হয়, যাতে সহজেই ডিসপোজ করা যায়।