সাকিবের অপেক্ষা ফুরানোর ম্যাচে দুর্বার বরিশাল
আগের ম্যাচেও ত্রাতা ছিলেন তিনি। ব্যাটে-বলে আলো ছড়িয়ে দলের জয়ে সবচেয়ে বড় অবদান রাখেন সাকিব আল হাসান। চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের বিপক্ষে কাণ্ডারির ভূমিকায় ফরচুন বরিশালের অধিনায়ক সাকিব আল হাসান। তার অলরাউন্ড পারফরম্যান্স ও মুজিব উর রহমানের অবিশ্বাস্য বোলিংয়ে চট্টগ্রামের বিপক্ষে দারুণ এক জয় তুলে নিয়েছে বরিশাল।
মঙ্গলবার চট্টগ্রামের জহুর আহমেদ চৌধুরী স্টেডিয়ামে স্বাগতিক চট্টগ্রামকে ১৪ রানে হারিয়েছে বরিশাল। ৬ ম্যাচে ৪ জয়ে ৮ পয়েন্ট নিয়ে তালিকার শীর্ষে উঠে গেছে সাকিব আল হাসানের দল। ৭ ম্যাচে ৩ জয়ে ৬ পয়েন্ট নিয়ে চার নম্বরে আছে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্স।
টস হেরে আগে ব্যাটিং করতে নামে ফরচুর বরিশাল। আড়াই বছর পর করা সাকিবের হাফ সেঞ্চুরি ও ক্রিস গেইল, নাজমুল হোসেন শান্তদের ছোট ছোট ইনিংসে ১৯.১ ওভারে সবকটি উইকেট হারিয়ে ১৪৯ রান তোলে বরিশাল। জবাবে ম্যাচসেরা সাকিব ও মুজিবের অসাধারণ বোলিংয়ে ১৯.৪ ওভারে ১৩৫ রানে থামে চট্টগ্রাম চ্যালেঞ্জার্সের ইনিংস।
লক্ষ্যটা বড় ছিল না চট্টগ্রামের জন্য। এরপরও শুরুটা ভালো করতে পারেনি ঘরের মাঠের দলটি। রানের খাতা খোলার আগেই বিদায় নেন নিয়মিত রান করে আসা উইল জ্যাকস। এই চাপ অবশ্য নিমেষেই কাটিয়ে তোলেন ওপেনিংয়ে নামা আফিফ হোসেন ধ্রুব ও শামীম হোসেন পাটোয়ারী।
এই দুই তরুণ ক্রিকেটার দারুণ ব্যাটিং করতে থাকেন, মনে হচ্ছিল জয়ের পথেই আছে চট্টগ্রাম। দ্বিতীয় উইকেটে ৭০ রানের জুটি গড়ে তোলেন তারা। কিন্তু দলীয় ৭০ রানে আফিফ বিদায় নিতেই হুড়মুড়িয়ে ভেঙে পড়ে চট্টগ্রামের ইনিংস। মুজিব-উর-রহমান ও সাকিবের বোলিং তোপে ১১ রানের মধ্যে ৫টি উইকেট হারিয়ে দলটি।
আফিফ ৩৯ ও শামীম ২৯ রান। এরপর চ্যাডউইক ওয়ালটন ১৬ ও শেষের দিকে মেহেদী হাসান মিরাজ ২৬ রান করেন। শরিফুল ইসলাম করেন ১০ রান। দারুণ জুটি পাওয়ার পরও ২ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায় চট্টগ্রাম। এই ম্যাচেও বরিশালকে বল হাতে পথ দেখান মুজিব ও সাকিব। ৪ ওভারে মাত্র ৯ রান খরচায় ৩টি উইকেট নেন আফগান স্পিনার মুজিব। ২৩ রানে সাকিবের শিকারও ৩ উইকেট। এ ছাড়া ডোয়াইন ব্রাভো ও মেহেদী হাসান রানা ২টি করে উইকেট পান।
এর আগে ব্যাটিং করা বরিশাল এই ম্যাচেও ব্যাটিং অর্ডার নিয়ে পরীক্ষা-নিরীক্ষা চালিয়েছে। এই ম্যাচে ক্রিস গেইলের সঙ্গে মুনিম শাহরিয়ারকে ইনিংস উদ্বোধন করতে পাঠানো হয়। আগের কয়েক ম্যাচের মতো এই পরিকল্পনাও কাজে আসেনি তাদের। ১ রান করেই ফিরেন যান মুনিম। পূর্বাভাস দিলেও ঝড় তুলতে পারেননি গেইল। ১৯ বলে একটি চার ও ৩টি ছক্কায় ২৫ রান করে থামেন ক্যারিবীয় কিংবদন্তি।
৪৪ রানে ২ উইকেট হারানো দলের হাল ধরেন সাকিব আল হাসান ও নাজমুল হোসেন শান্ত। তৃতীয় উইকেটে ৩১ রান যোগ করেন তারা। ২৯ বলে ২টি চার ও একটি ছক্কায় শান্ত ২৮ রান করে আউট হলে তৌহিদ হৃদয়কে নিয়ে লড়াই শুরু করেন সাকিব। এই জুটিতে সবচেয়ে বেশি ৫৫ রান পায় বরিশাল।
হৃদয় ১৭ বলে ২টি ছক্কায় ২২ রান করে বিদায় নিলেও সাকিব তুলে নেন হাফ সেঞ্চুরি। এই হাফ সেঞ্চুরিতে দীর্ঘ অপেক্ষা ফুরায় তার। আড়াই বছর পর টি-টোয়েন্টি ক্রিকেটে হাফ সেঞ্চুরির স্বাদ পেলেন তিনি। সর্বশেষ ২০১৯ সালের সেপ্টেম্বরে ক্রিকেটের সংক্ষিপ্ততম এই ফরম্যাটে হাফ সেঞ্চুরি করেন বিশ্বের অন্যতম সেরা এই অলরাউন্ডার।
মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরীর বলে ডিপ মিড উইকেটে আফিফ হোসেন ধ্রুবর তালুবন্দি হওয়ার আগে ৩১ বলে ৩টি চার ও ৩টি ছক্কায় ৫০ রান করেন সাকিব। শেষ দিকের ব্যাটসম্যানরা রান করতে পারেননি। ৫ বল বাকি থাকতেই অলআউট হয়ে যায় তারা। আগের ম্যাচে হ্যাটট্রি করা চট্টগ্রামের পেসার মৃত্যুঞ্জয় চৌধুরী ২ ওভারে ১২ রান খরচায় ৪টি উইকেট নেন। এ ছাড়া শরিফুল ইসলাম ২টি এবং উইল জ্যাকস, আফিফ হোসেন ও বেনি হাওয়েল একটি করে উইকেট নেন।